3:21 pm , March 2, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মেঘনা ও কালাবদর নদীর তীরে অবস্থিত মুলাদী, হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা। নদী মাত্রিক উপজেলা হওয়ায় সারা বছর ভাঙন আতংকে থাকতে হয় এখানকার মানুষের। কেননা এরই মধ্যে অনেক ফসলি জমি, বাড়ি-ঘর গাছ পালা বিলীন হয়েছে মেঘনা ও কালাবদরে। সম্প্রতি গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণের ফলে পুনরায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যায়। বছরের পর বছর অব্যাহত ভাঙন প্রতিরোধে কোন উদ্যোগ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। তবে তিনটি উপজেলার মানুষকে ভাঙন থেকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই মেঘনা ও কালাবদর নদীর ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানীয়া এলাকায় ৩৮৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকার নদী ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের পরিদর্শনে গিয়ে ভাঙন কুলের মানুষের দুরবস্থার কথা শুনে এই আশ্বাস দেন প্রতিমন্ত্রী। এর আগে দুপুর ১টায় লঞ্চ যোগে লাহারহাট ফেরি ঘাট থেকে মেঘনা ও কালাবদর নদীর তীর ঘেষা মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা ও মুলাদী উপজেলার ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে বের হন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম। প্রথমে মেহেন্দিগঞ্জের শ্রীপুর লঞ্চঘাট পরিদর্শন করেন তিনি। সেখানে স্থানীয় এলাকাবাসির সাথে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় করেন। পরে তিনি বিকালে উলানীয়ায় প্রকল্প পরিদর্শন করেন। সেখানে এক মতবিনিময় সভা হয়। তখন ভাঙন কুলের মানুষের দুঃখ, দূর্দশার কথা শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভাঙন কুলের মানুষের জন্য আমাদের জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু-দৃষ্টি রয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমি ভাঙন এলাকার লোক হওয়াতেই হয়তো প্রধানমন্ত্রী আমাকে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। যাতে এই অঞ্চলের মানুসকে আমি নদী ভাঙনের থেকে রক্ষা করতে পারি। তিনি বলেন, মেঘনা ও কালাবদর নদীর ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে। এ এলাকার ভাঙন রোধে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন করা হবে। এজন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। তবে তার আগেই ভাঙন প্রতিরোধে আমরা বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ করবো। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই এ কাজ শুরু করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, এলাকার উন্নয়ন নিজেদের উন্নয়ন মনে করতে হবে। তাই ঠিকাদারের উপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। কাজের বিষয়ে আপনারা নিজেরা খোঁজ খবর নিবেন। কাজে কোন ধরনের অনিয়ম হলে তার প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ করবেন। প্রয়োজনে আপনারা সরাসরি আমাকে বলবেন। কাজে কোন ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের হুশিয়ারী দেন তিনি। এর আগে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম উপজেলার মেহেন্দিগঞ্জের কালিগঞ্জ, হিজলা উপজেলার পুরাতন হিজলা, হরিনাথপুর লঞ্চঘাট এলাকা পরিদর্শন এবং স্থানীয়দের সাথে ভাঙন প্রতিরোধের বিষয়ে মতবিনিময় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ, জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জুলফিকার আলী হাওলাদার, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রমজান আলী প্রামানিক, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মুনসুর আহমেদ, পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রমজান আলী প্রামানিক জানান, মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়ায় মেঘনা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ক্রোস ড্রাম ও রক্ষা বাঁধ নির্মানে ৩৮৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকার প্রকল্প রয়েছে। যার মধ্যে ক্রোস ড্রাম প্রকল্পে ব্যয় হবে ২০০ কোটি ৯৮ লাখ। মুলত এই প্রকল্পটির কাজ শুরুর লক্ষ্যে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম উলানিয়া এলাকা পরিদর্শন করেন। পাশাপাশি অন্যান্য ভাঙন এলাকাও পরিদর্শন করেন তিনি।