3:43 pm , March 1, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দেশের তৃতীয় পায়রা সমুদ্র বন্দর নিয়ে বিশাল ও বহুমুখি উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। পদ্মা সেতুর সাথে পায়রা বন্দর-এর পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক পরিচালন কার্যক্রম শুরু হলে দেশের সার্বিক অর্থনীতি সহ দক্ষিনাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় অদূর ভবিষ্যতেই ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। আগামী ২০২১ সালের শেষ নাগাদ বন্দরটি বাণিজ্যিক ও পরিচালন কার্যক্রমে সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এ লক্ষ্যে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ মধ্য মেয়াদী কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বন্দরটির পূর্ণাঙ্গ পরিচালন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর লক্ষেও সব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পায়রা বন্দর স্থাপন প্রকল্পটি ‘প্রধানমন্ত্রীর ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প’ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মান ছাড়াও ভাংগা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ সংযোগ এ বন্দরের সক্ষমতাকে আরো গতিশীল করবে। ইতোমধ্যেবন্দরটির মাষ্টার প্লান প্রনয়নের লক্ষে নেদারল্যান্ডস-এর রয়েল হাসকনিং ডিএইচভি-সহ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট’এর গবেষণা, পরীক্ষা এবং পরামর্শক ব্যুরো-বিআরটিসি’র সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তির আওতায় ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রয়েল হাসকনিং-এর ৬১ জন বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েট-এর ২৯ জন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর আগামী ১৮ মাসের মধ্যে বন্দরটির জন্য পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা ও মাষ্টার প্লান প্রনয়ন করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩-এর ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রাবনাবাদ চ্যানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সহ ২০১৬-এর ১৩ আগষ্ট বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাসের মাধ্যমে বন্দরটির বাণিজ্যিক কার্য্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। এ বন্দরে ইতোমধ্যে ২৬টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৫০ কোটি টাকারও বেশী। পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষও জাহাজসমুহ থেকে ৩.৩৬ কোটি টাকা আয় করেছে বলে জানা গেছে। পায়রা বন্দরকে ঘিরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ইকো ট্যুরিজম, বিমান বন্দর, রেল সংযোগ স্থাপন, শিপইয়ার্ড ও ডকইয়ার্ড, এলএনজি টার্মিনাল, লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল, কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যেও কাজ করছে সরকার। ইতোমধ্যে পায়রা বন্দরের কাছে দেশর বৃহৎ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ চলমান রয়েছে। চলতি বছরেই প্রথম ইউনিটটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে করবে বলেও আশা করছেন কর্তৃপক্ষ। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির লক্ষ্যে গ্রীড সাব-স্টেশন সহ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলছে। পায়রা বন্দরের অদূরে খুলনা শিপইয়ার্ড একটি নৌ নির্মান কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যেও জমি অধিগ্রহণ করছে। পায়রা সমুদ্র বন্দর স্থাপনে সরকার যেসব বিষয়গুলো প্রাথমিক বিবেচনায় নিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এ বন্দরের সাথে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর সহ রাজধানী ঢাকা এবং বিভাগীয় সদর বরিশালের সহজ নৌ পথ। পাশাপাশি বরিশাল হয়েই সারা দেশের সাথে সড়ক যোগাযোগও বিদ্যমান রয়েছে। শুধুমাত্র পায়রা বন্দর এলাকা থেকে কলাপাড়া উপজেলা সদর পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত ও উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলেই সারা দেশের সাথে সহজ সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। চলতি বছরের মধ্যেই নৌ বাহিনী ঐ সড়কটির উন্নয়নে কাজ সম্পন্ন করছে। এছাড়া কলাপড়া থেকে বরিশাল হয়ে ফরিদপুরের ভাংগা পর্যন্ত ৮ নম্বর জাতীয় মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে হবে। ইতোমধ্যে ঐ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহনে অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন দিয়েছে একনেক। তবে এজন্য বিস্তারিত নকশা ও সম্ভব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হলেও প্রকল্পটির জন্য কোন দাতা পাওয়া যায়নি এখনো।
পায়রা বন্দর নির্মান ও বাণিজ্যিক পরিচালনে সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বন্দরটির পরিচালন-এর লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে ২৬৬ জনের জনবলের সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদনের পরে ১০৮ জনকে নিয়োগও দেয়া হয়েছে। স্বল্প মেয়াদে বন্দরের প্রাথমিক কার্যক্রম চালু করার লক্ষ্যে বেশ কিছু অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। যার মধ্যে নিরাপত্তা ভবন, পানি শোধনাগার, ১ হাজার কেভিএ বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন, বেতার যোগাযোগের ভিএইচএফ টাওয়ার, প্রশাসনিক ভবন, ওয়ার হাউজ, মসজিদ, মাল্টিপারপাস ভবন, স্টাফ ডরমেটরি, সার্ভিস জেটি নির্মাণ, সংযোগ নদীর ড্রেজিং ও নৌ সংকেত স্থাপন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও বন্দর পরিচালনায় পাইলট ভেসেল সহ অন্যন্য অত্যাবশ্যকীয় নৌযানসমুহ নির্মানও শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পায়রা বন্দর স্থাপন ও পরিচলনায় সাড়ে ৬ হাজার একর জমি অধিগ্রহনের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে দু হাজার ৩৭৩ একর অধিগ্রহন সম্পন্ন হয়েছে। এসব জমির ক্ষতিগ্রস্থ সাড়ে ৩ হাজার পরিবারের জন্য আনুষাঙ্গিক সুবিধা সহ গৃহ নির্মান কাজও চলমান রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর চার হাজার ২শ’ নারী-পুরুষকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যেও কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয়ে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর এম জাহাঙ্গীর আলম জানান, সরকার দেশের তৃতীয় এ সমুদ্র বন্দর নির্মান প্রকল্পটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক পরিচালন শুরু করার লক্ষ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষও কাজ করছে বলে জানান তিনি। একটি সমুদ্র বন্দর স্থাপন ও পরিচালন অত্যন্ত দুরুহ ও সময়সাপেক্ষ বলে জানিয়ে তিনি বলেন, অন্য বন্দরগুলোর তুলনায় পায়রা বন্দরের উন্নয়ন অনেকটাই দ্রুততম সময়েই সম্পন্ন করতে যাচ্ছে সরকার। তবে একটি পূর্ণাঙ্গ সমুদ্র বন্দর নির্মান ও উন্নয়ন চলমান প্রক্রিয়া বলেও জানান তিনি।