সন্তোষজনক নয় বেকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা সন্তোষজনক নয় বেকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা - ajkerparibartan.com
সন্তোষজনক নয় বেকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা

3:42 pm , March 1, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জাতীয় মাছ ইলিশ পোনা-জাটকা নিধন বন্ধে আট মাসের অভিযান অব্যাহত থাকার মধ্যে আগামী ১৭ মার্চ থেকে ‘জাটকা সংরক্ষন সপ্তাহ’ পালিত হচ্ছে। ১৭ মার্চ জাটকা সংরক্ষন সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে ভোলার চরফ্যাশনে। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী ঐদিন চরফ্যাশনে জাটকা সংরক্ষন সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশের আলোকে জাটকা সংরক্ষনে গতকাল থেকে বরিশাল, ভোলা ও চাঁদপুরের ৪টি এলাকার বিভিন্ন নদ-নদীকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে ইলিশ সহ সব ধরনের মৎস্য আহরনে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হয়েছে। করে সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকছে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে সরকার এবারই প্রথমবারের মত বরিশালের হিজলা উপজেলার নাছকাটি পয়েন্ট, হরিনাথপুর পয়েন্ট, ধুলখোলা পয়েন্ট এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর পয়েন্ট এলাকার মেঘনার শাখা নদী, হিজলা উপজেলার ধর্মগঞ্জ ও নয়া ভাঙনী নদী এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার লতা নদীর ৬০ কিলোমিটার এলাকাকে ইলিশ ও জাটকার ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রম হিসেব ঘোষণা করেছে। দেশের ষষ্ঠ এ অভয়াশ্রমেও গতকাল থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশ সহ সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদীতে গত নভেম্বর-জানুয়ারি মাসের সময়কালকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষনা করে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। তবে গত ১ নভেম্বর থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত টানা ৮ মাস জাটকা আহরন, পরিবহন ও বিপননে নিষেধাজ্ঞা বলবৎকালীন সময়ে বেকার জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনে এবার কোন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়নি। পাশাপাশি খাদ্য সহায়তাও মিলছে ৪ মাস পরে। ১ নভেম্বর থেকে জাটকা আহরনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও চলতি মাস থেকে আগামী জুন পর্যন্ত ৪ মাসের জন্য খাদ্য সহায়তা মঞ্জুরী প্রদান করেছে ত্রান মন্ত্রণালয়। দেশের উপকূলীয় ১১২টি উপজেলার ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪৬২টি জেলে পরিবারকে এবারো ৪০ কেজি করে চার মাস চাল প্রদান করার সুপারিশ ছিল মৎস্য অধিদপ্তরের। ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গত সপ্তাহেই চাহিদার প্রায় অর্ধেক চালের বরাদ্দপত্র পৌঁছেছে বরিশাল সহ দক্ষিণের জেলাগুলোতে। তবে জেলেদের কাছে ঐ চাল পৌঁছতে আরো অন্তত ১৫ দিন লেগে যেতে পারে বলে জানা গেছে। এবার বরিশাল বিভাগের ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৭ জেলে পরিবারের জন্য ৪০ কেজি করে চার মাসে ২০ টনের কিছু বেশী চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। তবে এ বিভাগে নিবন্ধিত ইলিশ জেলে পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার হলেও ১ লাখ ৯০ হাজার জেলে পরিবার এবারো কোন খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেনা। অনুরূপ চিত্র গোটা উপকূলীয় এলাকাতেই। ফলে ৮ মাসের জাটকা আহরনে নিষেধাজ্ঞা সহ ৬টি অভয়াশ্রমে দুমাস করে সব ধরনের মৎস্য আহরন বন্ধ থাকাকালীন সময়ে লাখ লাখ বেকার জেলেদের মাঝে অনেকটাই মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টির আশংকা করছেন ওয়াকিবহাল মহল। তবে বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে ত্রাণ মন্ত্রণালয় সহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল বলে কোন মন্তব্য করতে চাননি মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, দেশের ৪০টি জেলার ১৪৫টি উপজেলার দেড় হাজার ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ জেলে পরিবার ইলিশ আহরনে সম্পৃক্ত। যার ৩২% সার্বক্ষণিক এবং ৬৮% খন্ডকালীন। এমনকি ইলিশ বিপনন, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরন, জাল, নৌকা ও বরফ তৈরী এবং মেরামত কাজেও প্রায় ২০-২৫ লাখ মানুষ সম্পৃক্ত। আর দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলাতেই প্রায় সোয়া ৩ লাখ জেলে এ পেশার সাথে জড়িত। যার ৬৫% সার্বক্ষণিক ইলিশ আহরনে জড়িত বলে মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে বলা হয়েছে। সারা দেশে গত বছর যে প্রায় ৫ লাখ টন ইলিশ আহরিত হয়েছে, তার ৬০%ই পাওয়া গেছে বরিশালে বিভাগের অভ্যন্তরীন ও উপকূলীয় জলাশয় থেকে। আমাদের অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এরও বেশী। আর মৎস্য সম্পদে ইলিশ-এর অবদান প্রায় ১২-১৩%। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, সারা বিশ্বে যেখানে ইলিশের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে প্রতি বছর তা গড়ে ৫-১০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দেড় দশকে দেশে ইলিশের উৎপাদন প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় ৬০% বাংলাদেশে উৎপাদিত ও আহরিত হচ্ছে। আর গত দুই দশকে বরিশাল বিভাগের ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ১শ গুনেরও বেশী।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী মেঘনার ভাটিতে সাগর মোহনার ৪টি এলাকার প্রায় ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ইলিশ প্রজননস্থল হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতি বছর আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে-পরের ২২ দিন সব ধরনের মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময় ২০১৫ সালের ১৫ দিনের স্থলে ২০১৭ সালে ২২ দিনে উন্নীত করায় ইলিশের নিষিক্ত ডিমের পরিমান ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৩৬৫ কেজি থেকে ৩৭% বেশী, অর্থাৎ ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৫ কেজিতে উন্নীত হয়। এমনকি ইলিশ পোনা জাটকার উৎপাদনও ২০১৫ সালে ৩৯ হাজার ২৬৮ কোটি থেকে ২০১৭ সালে ৪২ হাজার ২৭৪ কোটিতে উন্নীত হয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে বলা হয়েছে। ‘হিলসা ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান ’এর আওতায় ২০০৫ সালেই সর্বপ্রথম প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশের আহরণ বন্ধ রাখা হয় ১০ দিন। ২০১১ সালে তা ১১ দিন এবং ২০১৫ সালে ১৫ দিনে উন্নীত করা হয়। গত দুই দশকে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন ও সহনীয় আহরনে প্রবৃদ্ধি গোটা বিশ্বের কাছেই ঈর্ষণীয় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ১৯৮৭-৮৮ সালে দেশের অভ্যন্তরীন ও সামুদ্রিক জলাশয় থেকে সর্বমোট ইলিশ উৎপাদন ও সহনীয় আহরনের পরিমাণ ছিল মাত্র ১.৮৩ লাখ টন। ৯৪-৯৫ সালে তা ২.১৩ লাখ টন ও ২০০০-০১ সালে ২.২৯ লাখ টনে উন্নীত হলেও ২০০২-০৩ সালে ইলিশ উৎপাদনে পুনরায় বিপর্যয় নেমে আসে। ঐ বছর দেশে ইলিশের উৎপাদন ১.৯০ লাখ টনে হ্রাস পায়। ফলে বিষয়টিকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে সরকার মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশের আলোকে ঐ বছর থেকেই ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে ‘জাটকা নিধন বন্ধ’র প্রাথমিক কর্মসূচী গ্রহন করে। এর পর থেকে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচীর আওতায় ইলিশ সম্পদ রক্ষায় একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় গত দেড় দশকে উৎপাদন প্রায় আড়াই গুন বৃদ্ধি পেয়ে ইতোমধ্যে তা ৫ লাখ টন অতিক্রম করেছে। প্রতিবছরের মত এবারো নিম্ন মেঘনা, শাহবাজপুর চ্যানেল ও তেঁতুলিয়া নদীতে এবং শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং দক্ষিণে চাঁদপুর জেলার মতলব ও শরিয়তপুর উপজেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষণা

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT