3:16 pm , February 24, 2019

মোঃ জসিম জনি, লালমোহন ॥ লালমোহনে অবৈধ খাল দখল ও খনন না করায় শুকিয়ে গেছে উপজেলার অধিকাংশ খাল। চলতি বোরা মৌসুমে স্কিমে পানি পাচ্ছে না চাষীরা। পানির অভাবে বোরো বীজতলা শুকিয়ে গেছে। বোরো ধানের চারা রোপন করে এখন বিপাকে পড়েছে চাষীরা। পানি না পাওয়ায় অনেক চাষী বোরো চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার এএসএম শাহাবুদ্দিন জানান, লালমোহনে ১৮০টি স্কিম রয়েছে। এর মধ্যে পানির প্রবাহ কম থাকায় চাষাবাদ ব্যহত হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে অধিকাংশ স্কিম পানির অভাবে বন্ধ ছিল। ওইসময় খালে কোন পানিই ছিল না। এখন খালে কিছুটা পানির প্রবাহ থাকলেও খাল খনন না করলে বোরো আবাদ স্থবির হয়ে পড়বে।
লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ, পশ্চিম চরউমেদ ও ফরাজগঞ্জসহ কয়েকটি ইউনিয়নে পানির অভাবে বোরো চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এসব ইউনিয়নে খালগুলো ব্যাপকহারে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। কোথাও কোথায় খালের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অংশ দখল করে আরসিসি পিলার বসিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। যার কারণে খাল ভরাট হয়ে গেছে এসব এলাকায়। খালে এখন কোন পানিই নেই। খালে বোরো চাষের জন্য স্কিম বসানো হলেও স্কিমে পানি উঠছে না। চাষীরা পানি পানি করে হাহাকার করলেও পানি না দিতে পেরে বেকায়দায় রয়েছে স্কিম ম্যানেজররা। এসব খালগুলো সময়মতো খননও করা হচ্ছে না। খালগুলো এখন ভরাট হয়ে ময়লা আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে। এলজিইডি থেকেও বিগত কয়েক বছর ধরে খাল খননে কোন উদ্যোগ নেই। উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী বখতিয়ার জানান, এলজিইডির ক্ষুদ্রাকার টেকসই পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বিগত ২ বছর ধরে কোন খাল খননের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে লর্ডহার্ডিঞ্জে একটি খাল খননের জন্য আইপিসিপি প্রকল্পের মাধ্যমে স্টিমিট পাঠানো হয়েছে।
লালমোহন পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বোরো চাষী মো. সবুজ জানান, তিনি এক একর জমিতে বোরো রোপন করেছেন। পানির অভাবে তার সমস্ত চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এ চারা রোপনে তার সাড়ে ১১ হাজার টাকা খরচ হয়। একই এলাকার বিলকিস জানায়, তিনি ৬৪ শতাংশ জমিতে বোরো চাষ করেন। পানির অভাবে তার চারাগুলোও মরে গেছে।
স্কিম ম্যানেজার রফিক, আল-আমিন ও ফজলু জানান, খালে পানি না থাকায় চাষাদের বোরো ক্ষেতে পানি দিতে পারছি না। মেশিন বন্ধ রয়েছে দিনের পর দিন। পানি দিতে না পারায় চাষাদের গাল-মন্দ শুনতে হয় আমাদের। অনেক সময় পালিয়ে থাকি। একের পর এক অবৈধ দখলের কারণে খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে খালগুলো খননও করা হচ্ছে না। যার জন্য অধিকাংশ খাল শুকিয়ে গেছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান রুমি বলেন, খালের ওপর যাদের অবৈধ স্থাপনা রয়েছে তাদের নোটিশ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের ভিতর যদি তারা স্থাপনা না সরায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে যেসব খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে সেসব খালগুলো পূর্ণ খননের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই খালগুলো খননের ব্যবস্থা করা হবে।