উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতদের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতদের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন - ajkerparibartan.com
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতদের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন

3:38 pm , February 18, 2019

মর্তুজা জুয়েল \ উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। জেলার ১০ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থীর তালিকা স্থানীয়ভাবে করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়ভাবে যে সকল নেতৃবৃন্দ বাদ পড়েছেন, তারাও এখন ব্যস্ত তদ্বির নিয়ে। স্থানীয়ভাবে তারা বাদ পড়লে কেন্দ্রীয়ভাবে বিবেচনা আসার প্রত্যাশায় তারা এখন রাজধানীমুখী। থেমে নেই স্থানীয়ভাবে করা তালিকার প্রার্থীরাও। তারাও দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তদ্বির করছেন। শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হবে এমন ঘোষনা দেয়া হয়েছে। তাই স্থানীয় নেতা কর্মিদের সাথে সমোঝোতার করে নির্বাচনী মাঠ গোছানোর চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। সেই হিসেবে জেলার একাধিক উপজেলায় বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী পাবেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়ার ঘোষনায় একাধিক নেতা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী ও আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মিদের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার প্যানেল ভিত্তিক বিদ্রোহীপ্রার্থীরা মাঠে নামছেন। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বিএনপি প্রার্থী ঘোষনা না করায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্যানেল তৈরী করে বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন বলে এমন গুঞ্জন উঠেছে। বরিশাল সদর উপজেলা সহ অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও এমন বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্যানেল তৈরীর জন্য সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ও দলীয় সিদ্ধান্ত উপক্ষো করে বিএনপির প্রার্থীর উপর নির্ভর করছে নির্বাচনের সকল হিসেব নিকেশ।আওয়ামীলীগের মনোনয়ন না পেলে বরিশাল সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভিপি আনোয়ার হোসেন, ভাইস-চেয়ারম্যান এ্যাড. ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে এ্যাড. হালিমা বেগম হ্যাপি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষনা দিয়েছেন। এতে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করা হবে না বলে তারা দাবী করেন। এ বিষয়ে এ্যাড. হ্যাপি বলেন, বিগত নারী ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম সরকারী সকল বরাদ্দ নিজে আত্মসাৎ করেছেন। ফলে সরকারী সাহায্য থেকে গরীব জনগন বঞ্চিত হয়েছেন। এ কারনে মানুষের সেবা করতে আমি নির্বাচনে অংশ নেব। যেহেতু ভাইস চেয়ার ম্যান পদে সকলের জন্য আওয়ামী লীগ উন্মুক্ত করেছে। তাই নির্বাচনে অংশ নিতে কোন বাধা নেই। ভিপি আনোয়ার হোসেন জানান, দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলেও এর বাইরে নির্বাচনে অংশ নিতে দল থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে আসছে না তাই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকলে নির্বাচন বেশী প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ন হবে। এছাড়া এখনোও দল থেকে প্রার্থী চুড়ান্তভাবে ঘোষনা হয় নাই। তিনি দাবী করেন বরিশালের সন্তান হিসেবে মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দল যেহেতু আমাকে সে সুযোগ করে দেয় নাই তাই আমি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দলের নেতৃবৃন্দের কাছে আমার প্রত্যাশা তারা দেরীতে হলেও আমাকে মূল্যায়ন করবে।
বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাড. তালুকদার মোঃ ইউনুচ বলেন, আমরা ১টি উপজেলা বাদে সকল উপজেলায় একক প্রার্থীর জন্য কেন্দ্রে নাম প্রস্তাব করেছি। কৌশলগত কারনে ১টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ২জন প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করা হলেও কেন্দ্র থেকে উন্মুক্ত করে দেয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া চেয়ারম্যান পদে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে কেন্দ্রের সাথে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহন করবো। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ৯টি উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীদের চুড়ান্ত তালিকা গঠন করা হলেও পরবর্তীতে ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে উন্মুক্ত করায় এ দুই পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই এমনটি বলা হলেও প্রথমে যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল তারা নিজেদের দলীয় প্রার্থী হিসেবেই প্রচারনা করছেন।
এরমধ্যে উজিরপুর, আগৈলঝাড়া ও বাবুগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যানদের পরিবর্তন করে নতুন প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নয়টি উপজেলার অধিকাংশস্থানে পরিবর্তন করা হয়েছে বর্তমান পুরুষ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রিয়তা থাকার পরেও মনোনয়ন বঞ্চিতদের সমর্থকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ মনোনয়ন বঞ্চিতরা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রার্থীরা জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ শেষে প্রাথমিকভাবে এককভাবে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা গঠণ করেছিলেন। এর আগে নয়টি উপজেলায় ৭২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নৌকা প্রতীক পেতে আবেদন করেছিলেন। এছাড়া পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৭ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪২ জন প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। প্রতিটি উপজেলা থেকে তিনজন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানোর কথা থাকলেও ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলায় একজন করে চেয়ারম্যান, একজন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। চূড়ান্ত প্রার্থীরা হলেন-বরিশাল সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, বানারীপাড়ার বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম ফারুক, মুলাদী উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম খান মিঠু, হিজলা উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ টিপু, বাকেরগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান সামসুল আলম চুন্নু, গৌরনদী উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী। এছাড়া উজিরপুর, আগৈলঝাড়া ও বাবুগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পরিবর্তন করে নতুন প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। তারা হলেন-উজিরপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবালের পরিবর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু, বাবুগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের পরির্বতে কাজী ইমদাদুল হক দুলাল এবং আগৈলঝাড়া উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম মোর্তুজা খানের পরির্বতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত।
বরিশাল সদর উপজেলায় মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী আনোয়ার হোসেনসহ অন্যরা জানান, কেন্দ্র থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হলে কোন আপত্তি ছিল না। তৃণমূল পর্যায়ে তাদের জনপ্রিয়তা থাকা সত্বেও জেলা মনোনয়ন বোর্ড থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। ইতোমধ্যে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান আসন্ন নির্বাচনে নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। উজিরপুর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল দলীয় মনোনয়ন না পেলেও আসন্ন নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন তার সমর্থকরা। মুলাদী উপজেলার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ৪৭ জন নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষর করে তরিকুল ইসলাম খান মিঠুকে পরিবর্তন করে নতুন প্রার্থী দেয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দর কাছে আবেদন করেছিলেন। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দাবিকে উপেক্ষা করে পূণরায় বিতর্কিত তরিকুল ইসলাম মিঠুকে একক চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। একইভাবে অন্যান্য উপজেলা গুলোতে বিগত সময়ে উপজেলা চেয়ারম্যানদের নিকট থেকে সুযোগ সুবিধা বঞ্চিতরা নতুন প্রার্থীদের প্রত্যাশা করেছিলেন। বর্তমানে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে মনোনয়ন প্রাপ্তরা বলছেন, প্রকৃত নেতা কর্মিরা কখনোও দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়নি। বাবুগঞ্জ উপজেলায় জেলা মনোনয়ন বোর্ড থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, গতবার আমি প্রার্থী ছিলাম । ঐ সময়ে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তারপরেও আমি দলের স্বার্থে নির্বাচন না করে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি। কিন্তু এবার আমাকে মনোনয়ন দেয়ার কারনে কেউ কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন বলে ঘোষনা দিচ্ছেন । কখনোই দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করাটা প্রকৃত নেতা কর্মিদের কাজ হতে পারেনা। সকলকে ব্যক্তিগত স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা উচিত। এদিকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, আমরা প্রতিটি উপজেলায় একক প্রার্থী মনোনয়ন দেবো। এজন্য কেন্দ্রে আমরা প্রার্থীদের নাম প্রস্তাব করবো। আগামী ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপে বরিশাল জেলার ৯টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং আগামী জুন মাসে শেষ ধাপে মেহেন্দীগঞ্জ ইপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT