3:30 pm , February 6, 2019

নাসির লিটন, ভোলা \ ভোলার ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যৎ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য উন্নয়নের পাশাপাশি বিছিন্ন ভোলা জেলাকে দেশের মুল ভূখন্ডের সাথে সড়ক পথে সংযুক্ত করতে দ্বীপবাসীর বহুল কাঙ্খিত “ভোলা- বরিশাল ব্রিজ” নির্মাণের আবারও ঘোষণা দেন। আর প্রধানমন্ত্রী এমন ঘোষণা উ”চ্ছ¡সিত দ্বীপবাসী। এদিকে অর্থনৈতিক সমীক্ষা ও সম্ভাব্যতা যাচাইর কাজ শেষ হওয়ায় দ্রæত নির্মাণ কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছেন ভোলাবাসী। বিদ্যুৎ বিভাগের দেওয়া তথ্যানুযায়ি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ভোলার বোরহানউদ্দিনে প্রায় ৪২ একর জমির উপর নির্মাণ করে ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। আইডিবি, জিওবি এবং পিডিবি অর্থায়নে নির্মিত এ প্লান্টটির সিম্পল সাইকেল ইউনিটটি ২০১৫ সালের ৮মে থেকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। একই বছরের ০২সেপ্টেম্বর কম্বাইন্ড সাইকেল ইউনিটও বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। শাহজাবপুর ক্ষেত্রের প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে উৎপাদিত এ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে জাতীয় গ্রীডে। নির্মাণ ঠিকাদার ছিল চায়না চেংডা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী। যা গতকাল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। একই সাথে চাঁদপুর, খুলনা, চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো ৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মমিন টুলু ও ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মালিহা আক্তার। শিক্ষার্থী মহিলা আক্তারের বক্তব্যে মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করেন। এসময় জেলা প্রশাসক জানান, ২০০৮ সালে জেলার মাত্র ১৫ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় ছিল। এসময় গ্রাহকরা দিনে মাত্র ৬ থেকে ৭ ঘন্টা বিদ্যুৎ পেত। যা বর্তমানে বেড়ে দাড়িয়ে ৯৫ ভাগ এবং এর সাবাই দিনে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ পেয়ে থাকেন। ১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিবপরীতে গ্রাহক বর্তমানে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করছে। আগামী চার মাসের মধ্যে জেলার শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসবে। উদ্বোধন করা ২২৫ মেগাওয়াট ছাড়াও আরো ৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। সেগুলো চালু হলে ভোলা থেকে ১ হাজার ২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এ বিদ্যুতকে ঘিরে ইতোমধ্যে জেলার উন্নয়ন প্রসারিত হচ্ছে, কলকারখানা স্থাপন ও ছেলে মেয়েরা আননন্দে লেখা পড়া করছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন, ভোলার চারদিকে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যন আবদুল মমিন টুলু, নদী ভাঙন থেকে ভোলাকে রক্ষা রকায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞাতা জানিয়ে ভোলা-বরিশাল ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান। এসময় তিনি বলেন, গত ১০ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে তা গত ৫০ বছরেও হয়নি। ভোলাকে দেশের শ্রেষ্ঠ জেলায় রূপান্তরিত করতে সড়ক পথে ব্রিজ নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি দাবি করেন। প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্ব শান্তি ও মনবতার অগ্রদ্যূত আখ্যাতি করে শিক্ষার্থী মালিহা আক্তার বলেন, বিদ্যুৎতের উন্নতির কারণে এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা আনন্দের সাথে মালিটমিডিয়া ক্লাসের মাধ্যমে পড়াশোনা করতে পারছে এবং কম্পিউটারে দক্ষ হয়ে ওঠছে। ভোলা সহ দেশের ব্যাপক উন্নয়নের জন্য কৃতজ্ঞাতা জানিয়ে ভোলা বরিশাল ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে মলিহা প্রধানমন্ত্রীকে ভোলায় আসার আমন্ত্রণ জানান।
দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ভোলার সাথে ব্রিজ নির্মাণের জন্য নিদর্শে দিয়েছেন। খাদ্যে উদ্বৃত্ত ভোলার যেন চাষের জমি নস্ট না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী চমৎকার বক্তব্যের জন্য শিক্ষার্থী মালিহার প্রশংসার পাশাপাশি তার জন্য দোয়া করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভোলা-০২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন) জহিরুল ইসলাম, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মšন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সৈয়দ মামুনুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর প্রধান সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে ভোলা জেলা উন্নয়ন ও স্বার্থরক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ রায় অপু ব্রিজ নির্মাণের ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়ে দ্রæত ঘোষণার বাস্তবায়নের দাবি জানান। তিনি বলেন, সম্ভাবতা যাচাই শেষে অর্থনৈতিক সমীক্ষার রিপোর্টও জমা দিয়েছে। তাই দ্বীপবাসীর বহুল প্রতিক্ষিত ভোলা বরিশাল ব্রিজ নির্মাণের কাজ আসন্ন বর্ষার আগেই শুরুর দাবি জানান তিনি।