3:24 pm , February 1, 2019

আনোয়ার হোসেন আনু, কুয়াকাটা ॥ ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও উদঘাটন হয়নি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মনির (১৮) হত্যার রহস্য। সন্তান হত্যার বিচার না পেয়ে বাবা আবদুস ছত্তার শোকে ইহকাল ত্যাগ করেন। মা লাইলী বেগমও সন্তান হারানোর ব্যাথা নিয়ে ধুকে ধুকে মারা যায়। স্থানীয়দের দাবী থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ উভয় মিলে হত্যা মামলাটি পরিকল্পিত ভাবে ধামাচাপা দিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধার লালিত স্বপ্নের মৃত্যু ঘটিয়েছে। আলোচিত এই হত্যাকান্ডের একাধিক আলামত সনাক্ত হলেও মামলাটি মুলতবী রাখায় ক্ষুদ্ধ কলাপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও সন্তান কমান্ড কাউন্সিল। তারা দাবী জানিয়েছে মামলাটি পুনরুজ্জবিত করার। নৃশংস এই হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পটুয়াখালীর ডিবি পুলিশ চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে, মামলাটি মূলতবি করা হয়েছে। এরপর মনিরের পরিবার থেকে এ নিয়ে কেউ আর ঘাটাঘাটি করেনি। তবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কলাপাড়া কমান্ডের সদস্যরা ফের এ হত্যাকান্ডের নতুন করে তদন্তের দাবি করেছেন। হত্যা রহস্য উদঘাটন করে জড়িতের বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। প্রভাবশালী মহল আর পুলিশের (ডিবি) ভূমিকায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা নিরাপত্তার কথা ভেবে চুপসে গেছেন এমন দাবী তাদের। জেলার কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর বাজারের পানের দোকান করত মনির। ২০০০ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক আটটার সময় আলীপুর মৎসবন্দর থেকে মনিরকে ডেকে নিয়ে যায় একটি চক্র। পরদিন ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পুর্বদিকে বিলে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মুগুর দিয়ে পিটিয়ে মনিরের মুখমন্ডল থেতলে দেয়ায় চোখ বের হয়ে যায়। পুলিশের এসআই মাসুদ লাশটি উদ্ধার করেছিল। লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুই ফুট লম্বা একটি কাঠের মুগুর, মনিরের একটি দাঁত, রক্তমাখা মাটি উদ্ধার করে। তখন ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়। পুলিশ পর্যায়ক্রমে সাত আসামিকে গ্রেফতার করে। এমনকি দুই আসামির কাছ থেকে রক্তমাখা পাঁচ শ’ ও এক শ’ টাকার কয়েকখানা নোট উদ্ধার করে। এ জঘন্যতম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে আলীপুর-মহিপুর ও কুয়াকাটায় তখন প্রচন্ড বিক্ষোভ হয়। সাতদিন সকল দোকানপাটে কালো পতাকা উত্তোলন করেন এলাকাবাসী। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল হয়েছে নয় জন। সর্বশেষ চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন ডিবি পুলিশের তৎকালীন এসআই মোসলেহ উদ্দিন। তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, খুনের ঘটনা সত্য। পুলিশি কৌশলে হত্যা রহস্য উদঘাটন করা যায়নি। ভবিষ্যতে উদঘাটনের সম্ভাবনা কম থাকায় মামলাটি মূলতবি রয়েছে।
স্থানীয়সহ পরিবারের দাবী, এক এক করে নয় জন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে। পুলিশ শুধু মনিরের হত্যাকান্ডের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই ছিল সচেষ্ট। কেউ তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি, ওই রাতে যেখানে মনিরের লাশ পাওয়া যায় তার পাশের একটি ঝুপড়ি ঘরে পিকনিক চলছিল। কারা পিকনিক করছিল, কেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি?।
সংসারের যোগান দেয়া ছেলের বিচার না পেয়ে কিংবা খুনিদের গ্রেফতার তো দুরের কথা শণাক্ত না হওয়ায় ধুঁকে ধুঁকে ইহকাল ছেড়েছেন মনিরের বৃদ্ধা মা লাইলি বেগম। ছেলের শোকে ইহকাল ত্য্গ করেছেন বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সত্তার।