3:22 pm , February 1, 2019

ভান্ডারিয়া ও রাজাপুর প্রতিবেদক ॥ ভা-ারিয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রী গনধর্ষন মামলার আরো এক আসামীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজাপুর উপজেলার পরিত্যক্ত ইটভাটার পাশে ধানক্ষেত থেকে আসামী রাকিব মোল্লার (২৮) লাশ উদ্ধার করা হয়। সে ভা-ারিয়া উপজেলার নদমুলা ইউনিয়নের চিংগুরিয়া ভিটাবাড়িয়া গ্রামের কালাম মোল্লার ছেলে। মাদ্রাসা ছাত্রী গনধর্ষন মামলার প্রধান আসামী ছিল রাকিব। সে ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল। এর আগে ৬ দিন পূর্বে ছাত্রী ধর্ষন মামলার অপর আসামী সজল জোমাদ্দারের লাশ উদ্ধার হয়েছে। সজল মামলার নামধারী অপর আসামী ছিল। সজলের মতো রাকিবের লাশের সাথেও একটি চিরকুট ছিল। তার বুকের উপর ঝোলানো সাদা কাগজে কম্পিউটারে লেখা ওই চিরকুটে লেখা ছিল “ আমি পিরোজপুরের ভা-ারিয়ার… (মাদ্রাসা ছাত্রীর নাম) ধর্ষক রাকিব। ধর্ষকের পরিনতি ইহাই। ধর্ষকরা সাবধান। হারকিউলিস।”
রাজাপুর থানার ওসি মো. জাহিদ হোসেন জানান, দুপুর ১২ টার দিকে এক কৃষক ওই পথদিয়ে মাঠে যাওয়ার সময় রাকিবের লাশ দেখতে পায়। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। তারা চিরকুট দেখে ভা-ারিয়া থানার পুলিশকে অবহিত করে রাকিবে পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। বিকেলে থানায় গিয়ে রাকিবের লাশ সনাক্ত করেন তার নানা নুরুল হক ফরাজি ও ভগ্নিপতি সুহাদ হোসেন। ওসি জানান, রাকিবের মাথায়, মুখে ও পিঠে গুলির চিহ্ন রয়েছে। রাকিবকে কে বা কারা হত্যা করে লাশ ফেলে গেছে, সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারছে না পুলিশ। ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রাজাপুর ও কাঠালিয়া সার্কেল) মো. মোজাম্মেল হোসেন রেজা বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাকিবের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঝালকাঠি মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো আসলে কারা কি অবস্থায় এ হত্যাকান্ড করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া। রাকিবের স্বজনরা যদি মামলা দেয় তাহলে মামলা নেয়া হবে, যদি তারা মামলা না দেয় তাহলেও পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করবে। সন্দেহভাজন কিছু লোকজন আছে, তদন্ত করে কোন ক্লু বের করা যায় কিনা বলেন, এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে রাকিবের লাশের সাথে পাওয়া চিরকুটে খুনী নিজেকে হারকিউলিস অভিহিত করেছেন। এই হারকিউলিস হলো গ্রীক বীর ‘হেরাক্লেস’ এর রোমান পুরাণের নাম। গ্রীক পুরাণ অনুযায়ী তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর ছিলেন হারকিউলিস। তিনি যেমন সাহসী, শারীরিক শক্তি সম্পন্ন ছিলেন, তেমনি ছিলেন দয়ালু। গ্রীকরা তাকে দেবতা এবং মর্তের বীর এই দুই পরিচয়ে পূজা করতো। অপরদিকে কন্যা গনধর্ষনের শিকারের পর ধর্ষকদের বিচারের পর মামলা করে বিপাকে পড়েছে পরিবার। মানষিক ও সামাজিকভাবে বিপর্যস্থ মাদ্রাসা ছাত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা এখন আত্মগোপনে রয়েছে। এছাড়াও কাঠালিয়ার বিনাপানি থেকে গণধর্ষণ মামলার অপর আসামী সজলেরও গুলিবিদ্ধ লাশ গত ২৬ জানুয়ারি উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলার আসামী হয়েছে ছাত্রীর বাবাসহ নয়জন। গত ২৯ জানুয়ারি কাঠালিয়া থানায় ওই মামলা করেছে ধর্ষক সজলের বাবা ভা-ারিয়া উপজেলার নদমুলা গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম জোমাদ্দার।
সজলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার হয়েছে দাবি করে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, সজল মোবাইল ফোন কোম্পানী বাংলালিংক এ চাকরি নিয়ে ঢাকার বাড্ডা এলাকায় বাস করতো। গত ২২ জানুয়ারি তাকে অপহরণ হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। উল্লেখ্য গত ১৪ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে ভা-ারিয়া উপজেলার ওই মাদ্রাসা ছাত্রী বাড়ি থেকে তার নানা বাড়ি যাচ্ছিল। উপজেলার নদমূলা গ্রামের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় রাকিব ও সজল তার মুখ চেপে ধরে জোর করে সড়কের পাশে একটি পানের বরজে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁরা পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। রাকিব মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় সজল ভিডিও করে। পরে ওই ছাত্রী বাড়িতে গিয়ে তার বাবাকে ধর্ষণের কথা জানান। ধর্ষকরা ছাত্রী ভাইকে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় ১৭ জানুয়ারি রাতে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে ভা-ারিয়া থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে রাকিব ও সজল জমাদ্দারকে আসামি করে স্থানীয় থানায় মামলা করেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় (২৫ জানুয়ারি) রাকিব মোল্লাকে ঢাকার সাভারের নবীনগর এলাকা থেকে নিখোঁজ হন।