3:13 pm , January 28, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দেশব্যাপী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছে নতুন সরকার। তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রতিটি হাসপাতালে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুর ঘোষনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের হঠাৎ পরিদর্শন পাল্টে দিয়েছে দেশের অধিকাংশ হাসপাতালের চিত্র। কিন্তু এখনো পূর্বের অবস্থানে রয়ে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ ও একমাত্র নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। নিজেদের গড়া নিয়ম এবং সময় ধরেই চলছে এই হাসপাতালে চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালন। কোন কোন চিকিৎসক কর্মস্থলে হাজিরা দিয়েই বেরিয়ে পড়েন প্রাইভেট প্রাক্টিসে। আবার প্রাইভেট প্রাক্টিসের কারনে সপ্তাহের তিনদিনও আসছেন না কর্মস্থলে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শেবাচিম হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগ সহ ওয়ার্ডগুলোতে ঘুরে এমন তথ্যই জানাগেছে। শেবাচিম হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯টার মধ্যে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে হবে চিকিৎসকদের। টানা ২টা পর্যন্ত কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তবে ইন্ডোর অর্থাৎ ওয়ার্ড গুলোতে রোষ্টার অনুযায়ী ২৪ ঘন্টাই রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের বাধ্য বাধকতা রয়েছে। কিন্তু শেবাচিম হাসপাতালের বাস্তব চিত্র পুরোই ভিন্ন। কাগজে কলমে থাকা সেই নিয়ম অনুসরন করছেন অধিকাংশ চিকিৎসকই। গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় হাসপাতালের নিচ তলায় বিভিন্ন বহিঃর্বিভাগ ঘুরে দেখা যায় চিকিৎসকের অধিকাংশ কক্ষই শূণ্য। সামনে রোগীর দীর্ঘ লাইন পড়লেও নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে পৌছতে পারেনি চিকিৎসক। শুধুমাত্র শিশু বহিঃবিভাগের চিত্র কিছুটা ভিন্ন ছিলো। বহিঃবিভাগের প্রায় সকল চিকিৎসকই ৯টার মধ্যে কর্মস্থলে পৌছে রোগীর চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন। তবে মেডিসিন, সার্জনারী, অর্থপেডিক্স, গাইনী, চর্ম-যৌন, ইএনটি, চক্ষু ও মানসিক রোগ বহিঃর্বিভাগের কোন চিকিৎসক নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে পৌছতে পারেননি। কর্মস্থলে পৌছতে তাদের সময় গেলেগেছে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত। এর মধ্যে ১২টা বাচতেই শুরু হয় গোল টেবিলে চা বিরতি। চা চক্র শেষে কোন কোন চিকিৎসক ছুটছেন পারিবারিক কাজের জন্য। ছেলে মেয়েদের স্কুল থেকে বাসায় পৌছে দেয়ার কাজে। আবার দেড়টা বাজার সাথে সাথে রোগী দেখা বন্ধ করে শুরু হয় কোম্পানি বিভিজ।
এদিকে গতকাল হাসপাতাল পরিদর্শনকালে দেখাগেছে, প্রায় সকল বিভাগের চিকিৎসকরা একটা পর্যায়ে কর্মস্থলে হাজির হয়েছেন। কিন্তু অফিস শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কর্মস্থলে পৌছতে পারেননি মেডিসিন বহিঃর্বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. রেজোয়ানুল আলম রায়হান। তার চেম্বারে বসে রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন একজন নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ডা. রেজোয়ানুল আলম রায়হান সপ্তাহের ৩ থেকে ৪ দিন ভোলায় থাকেন। সেখানে ব্যক্তিগত চেম্বারে বসে রোগী দেখেন। যে কারনে তিনি সরকারি কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। একই কারনে সোমবারও কর্মস্থলে আসতে পারেননি ডা. রেজওয়ানুল আলম রায়হান। এ বিষয়ে জানতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
এদিকে শুধুমাত্র বহিঃবিভাগই নয়, একই চিত্র হাসপাতালের ওয়ার্ড গুলোতেও। ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের সার্বক্ষনিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের ২৪ ঘন্টা উপস্থিতি’র কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। ওয়ার্ড গুলোতে সকাল ৯টার আগে কোন সিনিয়র চিকিৎসক কর্মস্থলে আসছেন না। আবার দুপুর ২টা বাজতেই সবাই লান্স এর জন্য বেরিয়ে পড়ছেন। তবে রাতের হাসপাতালের চিত্র খুবই করুন। শুধুমাত্র ইন্টার্ন চিকিৎসক ছাড়া খুঁজে পাওয়া যায় না কোন সিনিয়র চিকিৎসকদের।
চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি এবং দায়িত্ব অবহেলার প্রশ্নে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, যেভাবে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ করা হচ্ছে আসলে ততটা অভিযোগ এখানে নেই। আবার চিকিৎসকদের উপস্থিতি একেবারেই যে সন্তষজনক তাও বলা যাবে না। দু’একজন হয়তো নিয়ম মানতে পারছেন না। আমরা তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছি। তিনি বলেন, খুব শিঘ্রই আমরা শেবাচিম হাসপাতালে বায়োমেট্রিক হাজিরা কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। এটা চালু হলে চিকিৎসকদের উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করা যাবে জানিয়ে ডা. বাকির হোসেন বলেন, চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার বিষয়টিতে আমরা পূর্বে থেকেই গুরুত্ব দিচ্ছি। ইতিপূর্বে তিনজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। যারা কর্মস্থলে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেননি। সোমবার ডা. রেজওয়ানুল আলম রায়হান নামের যে চিকিৎসক কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিচালক।