3:22 pm , January 27, 2019

বানারীপাড়া প্রতিবেদক ॥ বানারীপাড়ায় ক্ষুদে কীটনাশক ব্যবসায়ী সংখ্যালঘু এক নারীর কাছ থেকে পুলিশের এস আই ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে এমপির হস্তক্ষেপে ফেরত দিতে বাধ্য হওয়ার ঘটনায় প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে বানারীপাড়া থানার বিতর্কিত এসআই মোশারেফ হোসেন শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বিশারকান্দি ইউনিয়নের মুড়ারবাড়ি বাজারের ক্ষুদে কীটনাশক ব্যবসায়ী সীমা পান্ডের দোকানে হানা দেয়। তখন দোকান থেকে মেয়াদোর্ত্তীণ দুই বোতল কীটনাশক পায়। তাই নারীকে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে থানায় নেয়। পরে ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে এক পর্যায়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে অর্ধ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করেন। দরিদ্র ওই কীটনাশক ব্যবসায়ীর স্বামী ও স্বজনরা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সুদে ৩০ হাজার টাকা এনে এস আই মোশারেফ হোসেনের হাতে তুলে দিয়ে বাকী ২০ হাজার টাকা গতকাল রবিবার সকালে দেয়ার মুচলেকায় তাকে ছাড়িয়ে নেয়। দরিদ্র ওই নারী ঘুষ দাবীর বাকি ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়। অপরদিকে ঘুষের বাকি টাকা চেয়ে এসআই মোশারেফ হোসেনের অব্যাহত ফোনের কারণে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন ওই নারী। তখন স্থাণীয়দের পরামর্শে গতকাল রবিবার সকালে তিনি বানারীপাড়া পৌর শহরে মাদক, ঘুষ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণাকারী নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের বাড়িতে হাজির হয়ে বিষয়টি তাকে জানিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ওই সময় বানারীপাড়ায় অনুষ্ঠিত পুলিশের সেবা সপ্তাহের র্যালীতে অংশগ্রহণ করতে আসা জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (উজিরপুর সার্কেল) মো. আকরামুল হাসানকে সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম বিষয়টি অবহিত করে ঘুষের ওই টাকা ফেরত দেওয়া সহ ঘুষখোর এস আই মোশারেফ হোসেনের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। র্যালী শেষে ভূক্তভোগী ওই সংখ্যালঘু নারীকে থানায় ডেকে জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (উজিরপুর সার্কেল) মো. আকরামুল হাসান বিষয়টি শুনে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে এস আই মোশারেফ হোসেনকে ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। তাৎক্ষনিক ৩০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। হতদরিদ্র ওই নারী ছোট একটি দোকানে কীটনাশক বিক্রি করে নিজ সংসার চালানোর পাশাপাশি গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত দুই মেয়েকে লেখাপড়ার খরচ চালান বলে জানা গেছে। নারী পুলিশ ছাড়া ওই নারীকে পুরুষ এস আই নিজেই আটক করে হ্যান্ডকাপ পড়ানোর বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এছাড়া সার ও কীটনাশকের দোকানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অভিযান চালানোর নিয়ম থাকলেও অসৎ উদ্দেশ্যে পুলিশের ওই এস আই ঠুনকো অভিযোগে অভিযান চাালিয়েছেন।এদিকে বানারীপাড়া থানায় একবার এ এস আই ও দুই বার এস আই মোট তিন বার পোস্টিং নিয়ে আসা মোশারেফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই । যখনি তিনি যে ইউনিয়নে দায়িত্ব পেয়েছেন সেখানেই তিনি ঘুষ বানিজ্যে খুলে বসেছেন। কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পেলেই তার সত্যতা যাচাই না করে তাকে হয়রাণি করে ঘুষ আদায় করা তার মূখ্য উদ্দেশ্য হয়ে দাড়িয়েছে। আটক করে আসামীদের নির্মম নির্যাতন, অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা, সন্ত্রাসী,অপরাধী,মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে মাসোয়ারা আদায় সহ তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। এমনকি তিনি তার সহকর্মী ও উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করে থাকেন বলে জানা গেছে। উপজেলার ইলুহার ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন মূর্তিমান আতঙ্ক এস আই মোশারেফ হোসেন তার ইউনিয়নে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে মিথ্যা অভিযোগে হয়রাণি করে লাখ লাখ টাকার ঘুষ আদায় করেছে । এদিকে ভূক্তভোগীরা এস আই মোশারেফ হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া থানার ওসি মো. খলিলুর রহমানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি একটি অনুষ্ঠানে রয়েছেন থানায় এসে জানাবেন বলে জানান। জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (উজিরপুর সার্কেল) মো. আকরামুল হাসান সত্যতা স্বীকার করে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছেন বলে জানান। এদিকে পুলিশের কাছ থেকে দরিদ্র নারীকে ঘুষের টাকা ফেরত এনে দেওয়ায় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমকে এলাকাবাসী সাধুবাদ জানিয়েছেন।