উচ্ছিষ্ট কাগজ সংকটে মুখ থুবড়ে পড়ছে গ্রে বোর্ড নির্মান শিল্প উচ্ছিষ্ট কাগজ সংকটে মুখ থুবড়ে পড়ছে গ্রে বোর্ড নির্মান শিল্প - ajkerparibartan.com
উচ্ছিষ্ট কাগজ সংকটে মুখ থুবড়ে পড়ছে গ্রে বোর্ড নির্মান শিল্প

3:11 pm , January 12, 2019

খান রুবেল ॥ উচ্ছিষ্ট কাগজের অভাবে মুখ থুবরে পড়ছে বরিশালে গ্রে বোর্ড নির্মান শিল্প। চাহিদা থাকা সত্যেও ভাঙারী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারনে এ শিল্পের প্রসার ঘটছে না। ৭ বছরের ব্যবধানে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে দুটি গ্রে বোর্ড তৈরীর কারখানা গড়ে উঠলেও লোকসান গুনতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। আর তাই পরিবেশ বান্ধব এ গ্রে বোর্ড কারখানা দুটি বন্ধের উপক্রম ঘটছে বলে দাবী মালিক পক্ষের। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বরিশাল নগরীর কাউনিয়া বিসিক শিল্প এলাকা ও নগরীর বর্ধিত অংশের হরিপাশা এলাকায় পর্যায়ক্রমে গড়ে উঠেছে দুটি গ্রে বোর্ড তৈরীর কারখানা। উচ্ছিষ্ট বা পরিত্যাক্ত কাগজ সংগ্রহের পর মেশিনের সাহাজ্যে মন্ড বানিয়ে তা দিয়ে তৈরী করা হয় গ্রে বোর্ড। যা চৌকোনা মোটা কাগজ নামেও পরিচিত। মিষ্টির বাক্স, জুতার বাক্স, বই বা খাতার মলাট তৈরী সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে গ্রে বোর্ড। বরিশালে পরিবেশ বান্ধব এ শিল্পের সূচনা ঘটে ২০১০ সালের শেষ দিকে। ওই সময় নগরীর ২৮নং ওয়ার্ডের হরিপাশায় সাড়ে সাত শতাংশ জমিতে টিন সেড ঘরে আর.বি বোর্ড মিল নামের গ্রে বোর্ড তৈরী প্রতিষ্ঠান চালু করেন সেরনিয়াবাত সাহেনুল ইসলাম ও মো. বোরহান উদ্দিন নামে দু’জন ব্যক্তি। এ কারখানায় উচ্ছিষ্ট কাগজ মেশিনের সাহাজ্যে মন্ড বানিয়ে তা দিয়ে তৈরী হওয়া গ্রে বোর্ড বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে আসছে। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি অনেক নারী-পুরুষের কর্ম-সংস্থানের সুযোগ হয়।
সরেজমিনে বরিশাল আর.বি বোর্ড মিলে দেখাগেছে, উচ্ছিষ্ট কাগজ সংগ্রহ করে তা কারখানার বাইরে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। পরে তা বড় একটি হাউজে পানিতে গলিয়ে পলিথিন সহ অন্যান্য বস্তুত অপসারন করা হয়। এর পর মেশিনের সাহাজ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা গ্রে বোর্ড হয়ে বের হচ্ছে। একজন কারিগর দাড়িয়ে মেশিন থেকে গ্রে বোর্ড নামাচ্ছেন। অপর দুই নারী শ্রমিক তা বান্ডেল করে সাজিয়ে রাখছে। বান্ডেলগুলো কয়েকজন পুরুষ শ্রমিক মাথায় করে কারখানার পাশেই বিশাল বিলের মধ্যে নিয়ে শুকাদিচ্ছেন। এভাবেই তৈরী হচ্ছে গ্রে বোর্ড।
কারখানার উৎপাদন ও শ্রমিকদের তত্ত্বাবধায়নে থাকা বাবুল হাওলাদার জানান, তাদের এই কারখানায় প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাগজের গ্রে বোর্ড তৈরীর কাজ চলে। নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট ১৬ জন শ্রমিক কাজ করে এই কারখানায়। যার মধ্যে ৬ জন নারী এবং বাকিরা পুরুষ। এদের মধ্যে ৩ জন কারিগর। এদের প্রত্যেকের বেতন ৯ হাজার টাকার উপর। এছাড়া অন্য যারা রয়েছেন তাদের বেতন সর্বনি¤œ ৪ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।
বাবুল হাওলাদার বলেন, চারটি সাইজের ১ টন গ্রে বোর্ড উৎপাদনে ১৩ থেকে ১৪শ কেজি উচ্ছিষ্ট কাগজের প্রয়োজন। যা আমাদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। তিন জন ফেরিওয়ালা ও আরো দুটি ভাঙারী দোকান থেকে আমরা ১৩ থেকে সাড়ে ১৪ টাকা কেজি দরে কাগজ পেয়ে থাকি। সচরাচর প্রতিটন গ্রে বোর্ড বিক্রি হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকায়। কোন কোন ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তবে তা পরিস্থিতি ও চাহিদার উপর নির্ভর করে। বি.আর বোর্ড মিল এর কারিগর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখানে যে মেশিনটি রয়েছে তা দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই টন গ্রে বোর্ড নির্মান করা সম্ভব। তাতে বেশি একটা সময়ের প্রয়োজনও নেই। কিন্তু উচ্ছিষ্ট কাগজ সংকটের কারনে এক টনের বেশি গ্রে বোর্ড উৎপাদন করা সম্ভাব হচ্ছে না। কোন কোন দিন একটন কাগজও উৎপাদন হয় সম্ভব হয় না।
বি.আর বোর্ড মিল এর মালিকানা অংশিদার মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ব্যাংক লোন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। আমরা যখন এ মিলটি চালু করি তখন বরিশালে আর কোন গ্রে বোর্ড উৎপাদন কারখানা ছিলো না। তবে বছর চারেক আগে বিসিক এলাকায় আরো একটি গ্রে বোর্ড কারখানা চালু হয়েছে। তিনি বলেন, শুরুতে নেয়া ব্যাংক ঋন এখনো পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। কারন চাহিদার তুলনায় আমাদের উৎপাদন কম। প্রতিদিন শুধুমাত্র বরিশালেই সর্বনি¤œ ১০ কেজি থেকে এক টন পর্যন্ত গ্রে বোর্ড এর চাহিদা রয়েছে। তার পর ঢাকা সহ অন্যান্য অঞ্চল থেকেও অর্ডার আসছে। কিন্তু সব অর্ডার নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এর কারন উল্লেখ করে বোরহান উদ্দিন বলেন, যে পরিমান উচ্ছিষ্ট কাগজের চাহিদা তা পাচ্ছি না। কারন ঢাকার ভাঙারী ব্যবসায়ীরা বরিশালের ভাঙারী ব্যবসায়ীদের আগাম দাদন দিয়ে রেখেছে। তাই বরিশালের উচ্ছিষ্ট কাগজ ঢাকায় চলে যাচ্ছে। আমরা ঢাকা থেকে বার্তি টাকা দিয়ে উচ্ছিষ্ট কাগজ কিনে আনছি। তার মধ্যে প্রতি মাসে কম করে হলেও ৭০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। তার সাথে স্টাফদের বেতন। তিনি বলেন, আমাদের বোর্ড শুকানোর জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা নেই। কারখানার পাশে বিশাল একটি বিলে কাগজগুলো শুকাতে হয়। এ কারনে ওই বিলটি এখন কাগজের বিল হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে একদিনের মধ্যেই বোর্ডগুলো শুকিয়ে যায়। আর খারাপ থাকলে তিন থেকে চারদিনও লাগে যায়। তবে বৃষ্টি মৌসুমে মাঠে পানি থাকে। এজন্য তখন উৎপাদনও কমিয়ে দিতে হয়। এসব কারনেই বছর বছর লোকসান গুনতে হচ্ছে। গেলো বছরেও দেড় লাখ টাকা লোকসান দিয়েছি।
বরিশাল বিসিকের গ্রে বোর্ড কারখানারও একই অবস্থা জানিয়ে বি.আর বোর্ড মিল এর সত্ত্বাধিকারী বোরহান উদ্দিন বলেন, এ শিল্পের প্রসার ঘটাতে অর্থের প্রয়োজন। পাশাপাশি ভাঙারী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এতে করে গ্রে বোর্ড নির্মান শিল্পের প্রসার ছাড়াও বরিশালের অর্থনৈতিক ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক ভুমিকা রাখা সম্ভব।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT