3:35 pm , January 10, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মো. আনোয়ার হোসাইন। ২০১৪ সালেও তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এবারের নির্বাচনে দলের জন্য ত্যাগ ও নির্যাতনের মূল্যায়ন চাচ্ছেন ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বিচ্চু বাহিনীর অন্যতম সদস্য আনোয়ার হোসাইন। অবশ্য সে জন্য দলের হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তেরবাইরে যাবেন না তিনি। এমনটিই জানিয়েছেন সদর উপজেলার হিজলতলা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক এবং মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সদস্য ভিপি আনোয়ার। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের হয়ে আধুনিক সমাজ উন্নয়ন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার পেছনে ভুমিকা রেখেছেন আনোয়ার হোসেইন। এজন্য তাকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এবং সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্যাতন সহ্য করতে হয় তাকে। আনোয়ার হোসেইন নিজেই নেয়, বরং দেশ স্বাধীন এবং আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে ভুমিকা রয়েছে তার বাবা মরহুম মুন্সী আমজাদ আলী’র। তার শ্বশুর মরহুম আবুল কাসেম ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বেইস কমান্ডার ও বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। ভিপি আনোয়ারের ১৭ জন ভাই বোনের মধ্যে এ্যাড. মজিবুর রহমান জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, অপর ভাই এ্যাড. দেলোয়ার হোসেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও এপিপি। এছাড়া আরেক ভাই এ্যাডভোকেট নিজামুল ইসলাম নিজাম বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সহকারী এটর্নি জেনারেল। এছাড়া অন্য ভাইয়েরা বরিশাল জেলা জজ কোর্ট ও বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত। শুধু তাই নয়, আনোয়ার হোসেইন এর স্ত্রী সালমা আক্তার শিলা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের চার বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রানিত আনোয়ার হোসেইন ছাত্র জীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিচ্যু বাহিনীতে যোগদান করেন তিনি। ৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্ব পরিবারে হত্যার পর তৎকালিন সেনাবাহিনী তাকে স্কুল থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে। তাছাড়া ৭৭ সালে ছাত্রলীগের সদস্য পদ লাভ করেন আনোয়ার। ৭৮ সালে বিএম কলেজ একাদশ শ্রেণীর সাধারণ সম্পাদক ৮২ সালে বিএম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি, ৮৩ সালে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক, ৮৭ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন। তাছাড়া ৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করে বিএম কলেজে রাষ্ট বিজ্ঞান বিভাগে এমএসএস প্রথম পর্বে ভর্তি হন তিনি। এর পর ১৯৯০ সালে বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন আনোয়ার হোসেইন। ২০০৩ সালে বরিশাল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন আনোয়ার হোসেন। উপজেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে ১০টি ইউনিয়ন ও ৯০টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সহ সকল সহযোগী সংগঠনের ৬০৮টি কমিটি তার নেতৃত্বেই গঠিত হয়। এর পুরস্কার স্বরুপ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনোয়ার হোসেইনকে এক সেট কম্পিউটার পুরস্কৃত করেছিলেন।
এদিকে আন্দোলন সংগ্রাম ও নির্যাতনও সহ্য করতে হয়েছে আনোয়ার হোসাইন এবং তার পরিবারকে। ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বরিশাল পৌর এলাকায় একটি মাত্র বাড়ী জ্বালিয়ে দিয়েছিলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ওই বাড়িও ছিলো ভিপি আনোয়ারের বাবার। তাড়ে বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার কারন ছিলো ওই পরিবারের সবাই তখন মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলো। ২০০২ সালে বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় উপনেতা এ্যাড. আব্দুল হামিদ এর বরিশাল সার্কিট হাউস এর সভা থেকে ধরে নিয়ে জবাই করে হত্যার চেষ্টা করা হয় আনোয়ার হোসেনইকে। তখন পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ২০০৩ সালের ৩১ আগষ্ট প্রশাসনের সহযোগিতায় তার উপর হামলা করেছিলো বিএনপি-জামায়াত জোট নেতা-কর্মীরা। এজন্য ১৭ দিন হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে হয়েছিলো তাকে। ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত টানা ৭ বার সরকারি গোয়েন্দা বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে। অপরদিকে জোট সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের সরকারি বিএম কলেজে শত বর্ষের মঞ্চ দখলের ঘটনা সে সময়ের বেশ আলোচিত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি ও অপমান করায় দখল করা হয়েছিলো মঞ্চটি। আর সেই সময়ে মঞ্চ দলের নেতৃত্বে ছিলেন আনোয়ার হোসেইন। সেদিন জীবনের ঝুকি নিতে দিধাবোধ করেননি তিনি। শুধু তাই নয়, জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্ণেল রশিদ ও কর্ণেল ফারুক এর সভায় যে হামলার ঘটনা ঘটে তার নেতৃত্বেও ছিলেন আনোয়ার হোসেইন। আনোয়ার হোসেইন বলেন, রাজনৈতিক জীবনে আমি এবং আমার পরিবার কোন ধরনের সাহায্য নেইনি। এমনকি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া ঘর-বাড়ি নিয়ে বহু কষ্টে দিন যাপন করেছেন। তখনও সরকার বা দলীয় কোন সহযোগিতা নেইনি। আর তাই আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আনোয়ার হোসেইন।