3:17 pm , January 2, 2019
মর্তুজা জুয়েল ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার পর এবার আলোচনা চলছে দক্ষিণাঞ্চলের কোন কোন নেতা মন্ত্রীসভায় স্থান পাচ্ছেন। দক্ষিণাঞ্চলের চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার সরকারের গত মেয়াদের ন্যায় তৃতীয় মেয়াদেও এ অঞ্চলের হেভিওয়েট সাবেক চারজনসহ পাঁচ নেতা মন্ত্রীসভায় থাকবেন বলে এমন প্রত্যাশা এখানকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারন জনগনের। তাদের মতে, দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় দক্ষিণাঞ্চলে পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মন্ত্রীসভায় স্থান পাওয়া সময়ের দাবী। দক্ষিনাঞ্চলকে ঘিরে সরকারের উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নে এ অঞ্চলের নেতাদের মন্ত্রী হওয়া প্রয়োজন। আওয়ামীলীগের একাধিক নেতৃবৃন্দ প্রত্যাশা করেন দায়িত্ব পালনে শতভাগ সফল হওয়ায় সরকারের তৃতীয় মেয়াদেও এ অঞ্চলের ৪ মন্ত্রী বহাল থাকবেন। দফতর রদবদল হলেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাদেরকে পুনরায় মন্ত্রীসভায় বহাল রাখা হবে। একই সাথে এ অঞ্চলের উন্নয়নকে আরো গতিশীল করতে সাবেক সফল চিপ হুইপ, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক (মন্ত্রী) এবং বরিশাল-১ আসনে নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহকে তারা গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে দেখতে চান। এছাড়া একাধিকবার সফলতার সাথে মন্ত্রীসভার দায়িত্ব পালন করা বর্তমান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পানি সম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব পুনরায় মন্ত্রীসভায় থাকবেন এমনটাই তাদের প্রত্যাশা।
ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দিয়েছেন ১০ জানুয়ারীর মধ্যেই নতুন মন্ত্রীসভা হতে যাচ্ছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ আসনের ২১ টি তেই নিরঙ্কুশ বিজয়ী মহাজোট নেতৃবৃন্দ এবং তাদের সমর্থকরা এখন অনেকটাই মন্ত্রীত্ব পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী। এছাড়া এলাকার কাঙ্খিত উন্নয়নে দক্ষিনের কারা স্থান পাচ্ছেন মন্ত্রিসভায় এ নিয়ে বেশ কৌতুহলী এ অঞ্চলের ভোটাররাও। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সহ-সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আওয়ামীলীগের নেতা কর্মিদের ভরসারস্থল আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ পার্বত্য শান্তি চুক্তির রূপকার, পাহাড়ে বিরাজমান দীর্ঘদিনের অস্থিতিশীলতা তার হাতেই সমাধান হয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করে রাখতে বর্তমানে তার বিকল্প নেই। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত দক্ষিণাঞ্চলের ২১ টি আসন আজ মহাজোটের নিরঙ্কুশ বিজয় হয়েছে। এখানে আবুল হাসান আবদুল্লাহ অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। তাকে মন্ত্রীসভার দায়িত্ব দেয়া হলে সমগ্র বাংলাদেশ তার মাধ্যমে উপকৃত। একইভাবে পাকিস্তান আমল থেকে হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প অন্যত্র স্থানান্তরের দাবি থাকলেও অনেকবার উদ্যোগ নিয়েও প্রভাবশালী চামড়া শিল্প ব্যবসায়ীদের কাছে তাদের হার মানতে হয়েছে। কিন্তু এবার মহাজোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু কোন ব্যবসায়ীর এবং চালক চামড়া শিল্পের ক্ষতি না করে হাজারীবাগ থেকে শিল্পটি সাভারে স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়েছেন। এটি একটি যুগান্তকারী সাফল্য। এর ফলে বুড়িগঙ্গা নদী জীবন ফিরে পেয়েছে। বর্তমান পানি সম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর অন্যতম সফলতা হল তিনি এ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর হাওরাঞ্চলে এবারই প্রথম কৃষকরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। পরিকল্পিতভাবে হাওরে বাঁধ নির্মাণ এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বন্যা প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় কৃষকরা কোন ক্ষতির সম্মূখীন হয়নি। বন্যায় ফসল নষ্ট না হওয়ায় পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন হয়েছে ফলে এবার চালের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত এবং নেতৃত্বের ফলে একটি পদক্ষেপেই বহুমুখী লক্ষ্য অর্জিত হয়। সঠিক নেতৃত্ব পেলে সরকারের স্বল্প ব্যয়ে কাঙ্খিত উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। দক্ষিণাঞ্চলের মন্ত্রীদের এ ধরনের সফলতা কিন্তু আমরা গত মেয়াদে দেখেছি। একইভাবে মন্ত্রীসভায় দায়িত্বপালনকারী পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব তার অবহেলিত মনপুরা-চরফ্যাশন এলাকাকে ঢেলে সাজিয়েছেন। তিনি ঐ অঞ্চলের সকল রাজনৈতিক নেতাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে এলাকার উন্নয়ন সম্ভব। সারাদেশের বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চল ভোলা জেলা আজ উন্ননের মডেল হতে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের সংসদ ও বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সময় আমাদের অন্যতম রপ্তানী পন্য গার্মেন্টস শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে তাদের বেতন নূন্যতম ৮ হাজার টাকা করা হয়েছে। এ সকল সফলতার কারণে আমি মনে করি তাদেরকে পুনরায় মন্ত্রীসভায় দায়িত্ব দিলে শুধু দক্ষিণাঞ্চলের নয়, সারা দেশের মানুষ উপকৃত হবে।
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাড. গোলাম আব্বাস চৌধূরী দুলাল বলেন, জননেতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ সাবেক সফল চীফ হুইপ। তিনি বর্তমানে মন্ত্রীর মর্যাদায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তিনি মন্ত্রীসভায় দায়িত্ব পেলে আমরা মনে করি দক্ষিনের উন্নয়নে নতুন মাত্র যোগ হবে। আমাদের দাবী সারা দেশের মানুষের উন্নয়ন করার লক্ষ্যে তাকে এবার গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দেয়া হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুচ বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সকল বিষয়েই অবগত রয়েছেন । তার যে বিচক্ষনতা রয়েছে তাতে আমি মনে করি তিনি যোগ্য ব্যক্তিকে অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও বর্তমান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, এদেশের স্বাধীনতা থেকে আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ সববিছুই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে। আমাদের লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ বিনির্মানে কাজ করে যাওয়া।