শীতকে পুঁজি করে লঞ্চের কেবিনের কৃত্রিম সংকট শীতকে পুঁজি করে লঞ্চের কেবিনের কৃত্রিম সংকট - ajkerparibartan.com
শীতকে পুঁজি করে লঞ্চের কেবিনের কৃত্রিম সংকট

2:47 pm , December 29, 2019

 

খান রুবেল ॥ এক দিকে ইংরেজি বর্ষ বিদায়, অন্য দিকে স্কুল কলেজে শীতের ছুটি। তার ওপর শীতের তীব্রতা। তিনে মিলে বরিশাল-ঢাকা রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চে বেড়েছে যাত্রীদের চাপ। যাত্রা পথে শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে যাত্রীরা ছুটছেন কেবিন কিংবা সোফার দিকে। ঠিক সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে কেবিনের কৃত্রিম সংকট। গত কদিন ধরেই লঞ্চের কাউন্টারে নেই শব্দটি যেন মুখস্ত কথায় রূপ নিয়েছে। তবে এর উল্টোটা দালালদের বেলায়। নেই বলে কোন শব্দ নেই তাদের ডায়েরীতে। বাড়তি টাকা দিলেই মিলছে কেবিন নামের সোনার হরিন। অভিযোগ উঠেছে বাড়তি সুবিধা পেতে কাউন্টার এবং কর্মকর্তারাই কেবিনের টিকেট ছড়িয়ে দিচ্ছে কালোবাজারির হাতে। গত দু’দিন ধরে একটি সিঙ্গেল কেবিনের পেছনে ছুটে ব্যর্থ হওয়া নগরীর অক্সফোর্ড মিশন রোডের বাসিন্দা এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠক তানজিল মোর্শেদ বলেন, ‘৩১ জুলাই ঢাকায় একটি কর্মশালায় অংশ নিতে হবে। এজন্য ৩০ জুলাই বরিশাল থেকে একটি লঞ্চের কেবিনের জন্য গত দু’দিন ধরে দৌড়ঝাপ করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে ঈগল পরিবহনের টিকেট কিনেছি। নগরীর ফকিরবাড়ি রোডের বাসিন্দা আলমগীর ফরাজী বলেন, ‘৩১ জুলাই বরিশাল থেকে লঞ্চের একটি ডাবল কেবিন বুকিং দেয়ার চেষ্টা করছি। বরিশালে যতগুলো লঞ্চের বুকিং কাউন্টার রয়েছে সবগুলোতেই গিয়েছি। কিন্তু সবার মুখে একটাই কথা ‘নাই’। এমনকি অনলাইনেও টিকেট নেই। শেষ পর্যন্ত দালালের মাধ্যমে পারাবত লঞ্চে একটি ডাবল কেবিন পেয়েছি। এটি পেতে দালালকে দিতে হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। যাত্রীদের এমন অভিযোগের প্রমাণও মিলেছে সরেজমিনে। নগরীর প্যারারো রোডে এমভি সুরভী লঞ্চ কাউন্টারে ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর এবং পরবর্তী ২ ও ৩ জানুয়ারী একটি করে সিঙ্গেল এবং ডাবল কেবিনের জন্য যোগাযোগ করা হয়। কেবিন চাওয়া মাত্রই খালি নেই বলে ¯্রফে জানিয়ে দেয়া হয়। একইভাবে নগরীর ফজলুল হক এভিনিউ সুন্দরবন কাউন্টারে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে দুটি কেবিন বুকিং দিতে গেলে সেখান থেকেও নেই বলে জানিয়ে দেয়া হয়। এমভি মানামী, এমভি কুয়াকাটা, এমভি এ্যাডভেঞ্চার লঞ্চ কাউন্টারে গিয়েও নেই শব্দ শুনেই ফিরে আসতে হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ‘বর্তমানে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে মোট ২১টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছে। তার মধ্যে ২০টি বিলাসবহুল লঞ্চে মোট ২ হাজার ৫৬৪টি কেবিন ও সোফা রয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি বিলাসবহুল লঞ্চে ১ হাজার ২১টি সিঙ্গেল, ৮৭৯টি ডাবল, ৪১টি সেমি ভিআইপি, ৮৬টি ভিআইপি, ৬৩টি ফ্যামেলি, ২৬টি ডিল্যাক্স এবং ৩২১টি সোফা রয়েছে।
আলাপকালে লঞ্চ কাউন্টার এবং কয়েকজন সুপারভাইজার জানান, ‘এক দিকে খ্রীস্টানদের বড় দিন। তার উপর স্কুল-কলেজে ছুটি শুরু হয়েছে। এ কারনে লঞ্চে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। তাছাড়া শীতে ঊষ্ণতা পেতে যাত্রীরা কেবিন এবং সোফার দিকে ঝুকছে। কিন্তু যে সংখ্যক কেবিন ও সোফা রয়েছে, তার থেকে যাত্রীদের চাপ বেশি হওয়ায় সবাইকে কেবিনের টিকেট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সরেজমিনে বরিশাল নদী বন্দরে দেখাগেছে, ‘রোববার বরিশাল থেকে ৮টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। লঞ্চে থাকা বুকিং রেজিস্ট্রার খাতা খুলতেই দেখা যায় ৮টি লঞ্চের সকল কেবিন আগে থেকেই বুকিং হয়ে আছে। প্রতিটি লঞ্চেই বিআইডব্লিউটিএ, নৌ পুলিশ, মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশ, র‌্যাব, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম দিয়ে কেবিন বুকিং দেয়া রয়েছে। এর কারন জানতে চাইলে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানান, ‘কোটা অনুযায়ী কিছু কেবিন আগে থেকেই বুকিং দিতে হয়। আবার অনেক কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকরা আগেভাগেই ফোন করে কেবিন বুকিং দিয়ে রাখেন। এ কারনে ওই কেবিন আগে বিক্রি করা হয় না। তারা না গেলে লঞ্চ ছাড়ার পূর্ব মুহুর্তে সেগুলো সাধারণ যাত্রীদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হয়।
তবে অভিযোগ উঠেছে, ‘সাংবাদিক, বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে কেবিন বুকিং দেখাচ্ছেন লঞ্চের কতিপয় কর্মকর্তা এবং বুকিং কাউন্টারের লোকেরা। ওইসব কেবিনই দালালদের মাধ্যমে কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি কেবিনের টিকেটই বিক্রি করে ৫শ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে কালোবাজারীর চক্রটি। এ কারনেই চলতি শীত মৌসুমেও লঞ্চের কেবিনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ সাধারণ যাত্রীদের।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT