3:09 pm , December 23, 2019
হেলাল উদ্দিন ॥ নগরীর পশ্চিম বগুরা রোড মুন্সী গ্রেজ এলাকার একটি ৫ তলা ভবনের ভাড়াটিয়া বেসরকারী চাকুরিজীবী এম লোকমান হোসেন। সপ্তাহ খানেক আগে রাতে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে স্ত্রীর কাছ থেকে জানতে পারেন জানুয়ারী থেকে ১ হাজার টাকা বাসা ভাড়া বাড়ানোর কথা জানিয়ে গেছেন বাড়িওয়ালা। বাড়িওয়ালা আরো জানিয়েছেন, বেশীর ভাগ ভাড়াটিয়ারা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। যারা আপত্তি করবেন তাদেরকে বাসা ছেড়ে দিতে হবে। তবুও ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বদলানো হবে না। যারা বাসা ছাড়বেন তাদেরকে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই জানাতেও বলে গেছেন বাসা মালিক। স্ত্রীর কাছ থেকে এসব শুনে বাসা মালিকের কাছে গিয়ে প্রতিবাদ করতে যাননি লোকমান। বাসা থেকে অফিস ও দুই ছেলে মেয়ের স্কুল কাছে থাকার বিষয়টি ভেবে নিরবে মেনে নিয়েছেন ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি। লোকমান জানালেন ১২ হাজার টাকা দিয়ে ৩ রুমের এ বাসায় থাকছি ৭ মাস ধরে। জানুয়ারী থেকে গুনতে হবে ১৩ হাজার। বেতন যা পাই তার অর্ধেকই চলে যাবে বাসা ভাড়ায়। তাহলে বাকি খরচ কি দিয়ে মোটাবো। শুধু লোকমান হোসেনই নয়, নগরীর প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষই ভাড়াটিয়া। তাদের জন্য প্রতি বছরের জানুয়ারী মাসে অবধারিত ভাবে নেমে আসে ভাড়া বৃদ্ধিও খড়গ। কিন্তু থাকতে যে হবে, তাই ৪০ ভাগ মানুষ প্রতিবাদ করতে পারে না কোন সময়ে। কিন্তু যাদের এ বিষয়ে কথা বলা বা দেখবাল করার দায়িত্ব তারাও চুপ। সিটি কর্পোরেশন বা তদারকি অন্য কোন সংস্থা এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয় না। ফলে বছরের পর বছর ধরে আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধ ভাবে বাড়িওয়ালারা বাসা ভাড়া বৃদ্ধি করছেন। মানুষের ৫টি মৌলিক অধিকারের মধ্যে বাসস্থান একটি। সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে এটিকে মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। অথচ নগরীতে প্রায় অর্ধেক মানুষ মৌলিক এ অধিকারটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে অনিয়মের শিকার হচ্ছে এ মানুষগুলো। মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে অথচ প্রতিবাদ তো দূরের কথা টু শব্দটি পর্যন্ত করতে পারছে না। সাধারন নগরবাসীর মাঝে প্রশ্ন উঠেছে সংবিধান তাহলে বাসস্থান কেন মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে ? তথ্য মতে দেশে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রন আইন ১৯৯১ বলবৎ রয়েছে। যে আইনের ১৬ ধারায় বলা হয়েছে বড় কোন ধরনের নির্মান কাজ কিংবা বাড়ির উল্লেখ যোগ্য পরিবর্তন ছাড়া কোন ভাবেই দুই বছরের মধ্যে ভাড়া বৃদ্ধি করা যাবে না। করলে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারবে। অথচ বাস্তবে এ আইনটি কখনোই আলো মুখ দেখে না। এ আইন বাস্তবায়ন এখন জরূরী হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নগরবাসী। জানতে চাইলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমরা কখনোই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করিনি এটা যেমন সত্যি তেমনি বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি এটাও তেমনি সত্যি। আমি ঢাকায় একটি প্রশিক্ষনে রয়েছি। বরিশালে ফিরে মেয়র’র সাথে আলোচনা করে করনীয় নির্ধারন করা হবে। যেহেতু বাড়িভাড়া আইন বলবৎ রয়েছে সুতরাং তা কার্যকর করতে আমাদের বেগ পেতে হবে না।