2:34 pm , December 11, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আজ বৃহস্পতিবার বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এ সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ঘোষনা হবে উপজেলার নতুন কমিটি। তাই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে ঠান্ডা লড়াইয়ে মেতেছে চার নেতা। তবে এদের মধ্যে কার রাজনীতির মাপকাঠি কতটা উচুতে তা নিয়ে চলছে হিসাব নিকাশ। বিশেষ করে সভাপতি পদ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান করছেন বর্তমান কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী এমদাদুল হক দুলাল এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপন। এরা দু’জনই রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিত্বের দিক থেকে পুরোপুরি ব্যতিক্রম। একজন সৎ ও আদর্শিক রাজনীতিতে পুরস্কার প্রাপ্ত দক্ষ সংগঠক এবং অপরজনের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ‘কাজী এমদাদুল হক দুলালের রাজনীতি শুরু হয় কৈশোর জীবন থেকে। তিনি অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। এর পর সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে এইচএসসি’র ছাত্র থাকাবস্থায় সরাসরি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। সেখান থেকেই অনেক রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে আওয়ামী লীগের মুল দলের রাজনীতিতে আসিন হন। ১৯৯২ সালে তিনি প্রথম উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ২০০২ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
৭৫ এর আন্দোলন, স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন এবং বিগত জোট সরকারের আমলে সরকার বিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা অনন্য চূড়ায়। এ আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক হামলা-মামলা-জেল, জুলুম ও নির্যাতনও সহ্য করতে হয়েছে তাকে। ৭৫’র ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করতে গিয়ে লাঠিচার্জের শিকার এবং স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ঢাকায় গ্রেফতার হন তিনি। বিগত জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের আমলে সরকার বিরোধী আন্দোলনে সাত দিন সড়ক অবরোধ করে রাখার ঘটনার অন্যতম মহানায়ক ছিলেন কাজী এমদাদুল হক দুলাল। আর এটা করতে গিয়ে তৎকালিন সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্র্মম নির্যাতনের শিকার হন।
এদিকে তৎকালিন সময়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে বরিশাল বিভাগের প্রতিটি জেলা উপজেলার মধ্যে আন্দোলন সংগ্রামের শীর্ষ স্থানে ছিলো বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ। যার নেপথ্যের নায়ক ছিলেন কাজী দুলাল। এ কারনে বিরোধী দলে থাকাবস্থায় ২০০৩ সালে ধানমন্ডি ৩ নম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে বেষ্ট সংগঠকের পুরস্কার পান তিনি। তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে তাকে একটি কম্পিউটার উপহার দেন।
এদিকে তরুন আওয়ামীলীগার এমদাদুল হক দুলালের প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ প্রত্যাশী সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের ক্ষেত্রে ঘটেছে পুরো উল্টোটা। ক্ষমতা লোভি উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক স্বপনের শুরুটাই ছিলো বিতর্কিত কর্মকান্ড থেকে। বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে শুরু করা খালেদ হোসেন স্বপন সর্বহারা নেতা থেকে শুরু করে সকল দলেই নাম লিখিয়েছেন। রয়েছে হত্যা, চক্ষু উৎপাটন, হামলা, নির্যাতন ও দুর্নীতির একাধিক মামলা। শুধু তাই নয়, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগে নাম লেখালেও দল বিরোধী কর্মকান্ডে একক আধিপত্য গড়ে তুলেছেন তিনি। হয়েছেন অঢেল অবৈধ অর্থ সম্পদের মালিক।
জানাগেছে, ‘সরদার খালেদ হোসেন স্বপন ১৯৮৮-৮৯ সালে ছিলেন সর্বহারা কামরুল গ্রুপের ছাত্র সংগঠন বিপ্লবী ছাত্র মঞ্চের নেতা। ১৯৯০ সালে সর্বহারা কামরুল গ্রুপের আঞ্চলিক নেতা খলিলুর রহমান শরিফের তত্ত্বাবধানে গোলাম কিবরিয়া টিপুর সাথে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। পরবর্তী ১৯৯১ সালে জাতীয় ছাত্র সমাজের ব্যানারে শের-ই-বাংলা কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচনে অংশ নেন স্বপন। ১৯৯২ সালে সর্বহারা কামরুল গ্রুপের নেতা খলিলুর রহমান শরিফ সর্বহারা জিয়া গ্রুপের নেতা মাইন উদ্দিন সিকদারের কাছে ইউপি নির্বাচনে হেরে যায়। সেই সাথে খালেদ হোসেন স্বপনও দল পরিবর্তন করে মাইন উদ্দিনের হাত ধরে জিয়া গ্রুপে যোগ দেন। ১৯৯৩ সালে মাইন উদ্দিনের পক্ষ ছেড়ে সর্বহারা নেতা নান্না’র হাত ধরে ঢাকার সুগন্ধায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন খালেদ হোসেন স্বপন। ১৯৯৪ সালে আগরপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন স্বপন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রবীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, ‘আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্ম দিচ্ছেন সরদার খালেদ হোসেন স্বপন। ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ রাজনীতির অনুপ্রবেশ করা স্বপন ২০০২ সালের নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের সঙ্গে সম্পর্ক করে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। ২০০৩ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আলালের অনুগত হয়ে ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহন করে আগরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় জামায়াতপন্থী নেতাকে নিয়ে পরিষদ গঠন করেন স্বপন। তৎকালিন সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আনিস সিকদারকে পরাজিত করে উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. ওয়ালিদকে নির্বাচিত করতে নগ্ন হস্তক্ষেপ করেন তিনি।
শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের মুখোশধারী স্বপনের বাবা আবুল কাশেম সরদারকে নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। মুক্তিযুদ্ধকালিন তিনি রাজাকার আলবদরদের অন্যতম সহযোগী ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যে ঘটনায় জেলা প্রশাসকের বরাবর অভিযোগও দিয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। তার পরেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপান রাজাকারপুত্র স্বপন। তার মধ্যে নতুন করে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি পদের দাবিদার তিনি। ফলে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মহলে চরম ক্ষোভ আর উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। তাদের দাবি স্বপন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলে এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য বিলিনের পাশাপাশি সুস্থ ধারার রাজনীতি হারিয়ে যাবে। পাশাপাশি প্রবীন আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আ’লীগের রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। তাই তারা এর বিচার বিবেচনার ভার দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অভিভাবক আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র উপরেই অর্পন করেছেন।