2:45 pm , December 4, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর আলোচিত নারী ওষুধ ব্যবসায়ী শিরিন খানম ওরফে টিকটক শিরিনের মৃত্যু রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। হত্যা কিংবা আত্মহত্যা নয়, স্ট্রোক জনিত কারনে মৃত্যু হয়েছে তার। রাজধানীর মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে করা ভিসেরা রিপোর্টে এমনটিই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যদিও ওই রিপোর্ট এখনো প্রকাশ করেনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ। কেননা এখনো দুটি পরীক্ষার রিপোর্ট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ওই রিপোর্ট দুটি প্রস্তুতের পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবে শিরিন খানমের ময়না তদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন।
এদিকে রহস্যের জট খুলতে লাগলেও হয়রানী বন্ধ হচ্ছে না হত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার আসামিদের। মিথ্যা অভিযোগের ওই মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এটিএম শহীদুল্লাহ কবির সহ অন্যান্য আসামিরা।
জানাগেছে, ‘নগরীর স্টীমার ঘাট জামে মসজিদের পাশে শিরিন খানম ওরফে টিকটক শিরিন নামের নারীর ‘শিরিন মেডিকেল হল নামের একটি ওষুধের ফার্মেসী ছিলো। যেখানে নকল ওষুধ বিক্রিসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হতো। এ অপরাধে মৃত্যুর পূর্বে র্যাবের হাতে আটক এবং মোবাইল কোর্টে দ-প্রাপ্ত হয়ে ৭ দিন কারাগারে ছিলেন শিরিন। এদিকে ওষুধ ব্যবসার নামে শিরিনের অত্যাচারে এক প্রকার অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশর্^বর্তী স্টীমার ঘাট জামে মসজিদের মুসল্লিরা। আজান এবং নামাজ চলাকালে উচ্চ শব্দে গান-বাজনা, অপর্দায় ঘোরা ফেরাসহ বেহায়াপনা বন্ধ করতে বলেন তারা। এতে কর্নপাত না হওয়ায় মুসল্লিদের অনুরোধে শিরিনের ফার্মেসীর স্টলের ভাড়া বাতিলের জন্য স্টল মালিককে বলেন মসজিদ কমিটির সভাপতি ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এটিএম শহীদুল্লাহ কবির।
এতেই ক্ষুপ্ত হন শিরিন। গত ২৮ অক্টোবর সোমবার রাতে মৃত্যুর মাত্র কিছু সময় পূর্বে ফেসবুক লাইভে এসে ওষুধ ব্যবসা এবং স্টল সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বলেন শিরিন। সেখানে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এটিএম শহীদুল্লাহ কবিরের নামটিও উল্লেখ করেন তিনি। আর ফেসবুক লাইভে আসার কিছু সময় পরে নিজ ওষুধের ফার্মেসীতে স্টোকের কারণে মৃত্যুবরণ করেন শিরিন। এরপর হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষনা করে।
এর পরই শুরু হয় তার মৃত্যু নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। প্রশ্ন ওঠে মৃত্যুর রহস্য কি তা নিয়ে। তার মধ্যে মৃত্যুর পরে শিরিনের এক হাতে ক্যানুলা পড়ানো দেখতে পায় পুলিশ। যে কারনে ক্যানুলার মাধ্যমে শরীরে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ ওঠে। কেউ কেউ ইঙ্গিত করেন আত্মহত্যার।
নানা প্রশ্নের মধ্যেই সাত জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে শিরিনের ভাই ইউসুফ মৃধা। ওই মামলার ৭ নম্বর আসামি করা হয় কাউন্সিলর এটিএম শহীদুল্লাহ কবিরকে। এ নিয়ে শুরু হয় নতুন বিতর্কের। আর এ বিতর্ক আর রহস্যের জট খুলতে ২৯ অক্টোবর শিরিনের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত ময়না তদন্তের পূর্নাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেনি শেবামেকের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ।
ফরেনসিক বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ‘বরিশালে প্রাথমিক তদন্তে হত্যা বা আত্মহত্যার কোন আলামত মেলেনি। এ কারনে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য তার ভিসেরা সংগ্রহ করে ঢাকা মহাখালীতে প্রেরণ করা হয়। গত ২১ ডিসেম্বর মহাখালী থেকে রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন বরিশাল মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়। যার রিপোর্ট নম্বর ৫০৮১২ এবং স্মারক নম্বর ৯৩১৫।
ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ‘ময়না তদন্তের ক্ষেত্রে ভিসেরা রিপোর্টটাই মুল বিষয়। ওই রিপোর্টের উপরেই সব কিছু নির্ভর করে। তবে মহাখালী থেকে যে রিপোর্ট এসেছে সেটাতে হত্যা বা আত্মহত্যার আলামত পাওয়া যায়নি। রিপোর্ট অনুযায়ী তার শরীরে বিষাক্ত দ্রব্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। হতাশা থেকে স্ট্রোক জনিত কারনে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রটি আশঙ্কা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডা. রেফায়েতুল ইসলাম হায়দার বলেন, ‘আমাদের কাছে শিরিন খানমের ময়না তদন্তের যেসব রিপোর্ট রয়েছে তার সবগুলোই প্রস্তুত হয়েছে। ঢাকা থেকে রিপোর্টগুলো এরই মধ্যে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। তবে এখনো একটি রিপোর্ট বাকি আছে। তা হলো ডিএনএ রিপোর্ট। এটি সিআইডি করবে। তাই সরাসরি কোর্টে প্রেরণ করবেন।
তিনি বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে শিরিন খানমের ময়না তদন্ত করা হয়েছে। যে কারনে ওই বোর্ডের প্রধান গাইনী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আকবর হোসেনের নিকট রিপোর্টগুলো চূড়ান্ত করার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। রিপোর্টে কি এসেছে সেটা এভাবে বলার নিয়ম নেই। বোর্ডের সভাপতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কোর্টে প্রেরণ করবেন। তাছাড়া যেহেতু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা, তাই যত দ্রুত সম্ভব আমরা রিপোর্ট জমা দেয়ার চেষ্টা করছি।
এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ আল মামুন বলেন, ‘ময়না তদন্তের প্রতিবেদন এখনো আমার হাতে এসে পৌঁছেনি। তাছাড়া যে সাতজনকে আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৫ জন হাই কোর্ট থেকে জমিনে রয়েছেন। বাকি দু’জনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ঘটনার সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহন কার্যক্রম চলমান বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।