রায়পাশা-কড়াপুরের চেয়ারম্যান খোকনের ছেলে ও শ্যালকসহ আটক ৩ রায়পাশা-কড়াপুরের চেয়ারম্যান খোকনের ছেলে ও শ্যালকসহ আটক ৩ - ajkerparibartan.com
রায়পাশা-কড়াপুরের চেয়ারম্যান খোকনের ছেলে ও শ্যালকসহ আটক ৩

3:29 pm , November 28, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়ায় রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ছেলে ও শ্যালক পুড়িয়ে দিয়েছে দুটি মোটরসাইকেলসহ এক ব্যবসায়ীর দোকান। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে ও শ্যালকসহ তিন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলো- চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান খোকনের ছেলে কাওসার আলম সোহাগ, শ্যালক মাহমুদ হোসেন ওরফে আব্দুল হালিম ও তাদের সহযোগী রাসেল। এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে বরিশাল সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নের বামনিকাঠী এলাকাধীন আস্তাকাঠী বাজারে এই ঘটনা ঘটে। কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা এবং মামলার বাদী সেলিম তালুকদার জানান, ‘রায়াপাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খোকনের ছেলে সোহাগ এবং শ্যালক মাহমুদ দীর্ঘ দিন ধরে জাগুয়া বামনিকাঠী এলাকায় মাদক ব্যবসা করছে।
তারা মামলার বাদী সেলিম তালুকদারের দোকানের সামনেই মাদকের হাট বসায়। গত বুধবার বিকেলে চেয়ারম্যানের ছেলে এবং শ্যালকসহ তাদের লোকেদের সেলিমের দোকানে রেখে বিক্রি করতে বলে। এতে অসম্মতি জানানোর পাশাপাশি চেয়ারম্যানের লোকেদের দোকানের সামনে মাদক ব্যবসা করলে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিবে বলে হুশিয়ার করে। এ নিয়ে বিকেলে তাদের মধ্যে বাক বিতন্ডা হয়।
এর জের ধরে বুধবার দিবাগত রাতে চেয়ারম্যানের ছেলে ও শ্যালকসহ তাদের লোকেরা সেলিম তালুকদারের দোকান পুড়িয়ে দেয়। এতে দোকানের মধ্যে থাকা দুটি মোটরসাইকেল, ২টি ফ্রিজ, টিভিসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানান, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ দোকানী সেলিম তালুকদারের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে মাদক ব্যবসায়ী রাসেলকে আটক করা হয়। পরে তার দেয়া স্বীকারক্তি অনুযায়ী রায়াপাশা-কড়াপুর ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে ও শ্যালককে আটক করা হয়।
তিনি বলেন, ‘মাদক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দোকানী সেলিম ও চেয়ারম্যানের ছেলে এবং শ্যালকের সঙ্গে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ইতিপূর্বে দোকানী সেলিম তথ্য দিয়ে ওই মাদক ব্যবসায়ীদের একজন লোককে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। এর জের ধরেই তার দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ‘হাবিবুর রহমান খোকন ওরফে মহুরী খোকন রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই এলাকায় বেপরোয়া কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। বাবা চেয়ারম্যান হওয়ার দাপটে ছেলে সোহাগ ও শ্যালক হালিম এলাকায় মাদকের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলে। শুধু নিজ ইউনিয়নই নয়, পাশর্^বর্তী জাগুয়া ইউনিয়নকেও মাদকের নিরাপদ বানিজ্যিক কেন্দ্রে পরিনত করে। এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে খোদ রায়পাশা-কড়াপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খোকনের বিরুদ্ধে। ইতিপূর্বে খোকনের এক সহযোগিকে ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। এসময় ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে যে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয় সেই মোটরসাইকেলের মালিক হাবিবুর রহমান খোকন। যেটা এখনো থানায় রয়েছে। তবে কৌশলগত কারনে খোকন তার মোটর সাইকেলটি ছাড়াতে থানায় যাননি।
শুধু মাদক ব্যবসাই নয়, সরকার দলীয় চেয়ারম্যান হওয়ার দাপটে জমি দখল, সালিশ বানিজ্য, থানা পুলিশের দালালি এবং সরকারি চাল চুরির অভিযোগও রয়েছে একাধিক। এমনকি আল্লাহ’র নামে ছেড়ে দেয়া সাঁড় চুরি করে তা জবাই করে ভাগ বাটোয়ারার অভিযোগ রয়েছে খোকন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে ইতিপূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়। এসব কিছুর পরেও চেয়ারম্যান খোকন, তার ছেলে সোহাগ এবং শ্যালক হালিমসহ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। ফলে এদের দৌরাত্ম দিন দিন বেড়েই চলে। মাদক সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় খোকনের মাদক ব্যবসায়ী পুত্র সোহাগ ও শ্যালক হালিম গ্রেফতার হওয়ায় এলাকার সাধারণ মহলে স্বস্থি ফিরেছে। যদিও ছেলে এবং শ্যালককে আটকের পরে তাদের ছাড়াতে জোর লবিং-তদবির চালান চেয়ারম্যান খোকন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT