3:17 pm , November 19, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কান চিলে নিয়েছে কিনা ? কানে হাত দিয়ে না দেখে ! অন্যের কথায় চিলের পিছনে ছোটা, বাঙালীদের পুরনো অভ্যাস। তাই বাঙালীদের একটি উপাধী রয়েছে “হুজুকের বাঙালী”। সেই উপাধী যে যথার্থ, তা আবারো প্রমান হয়েছে। কোন কিছু শোনা মাত্রই তার পেছনে ছোটার সেই পুরনো দিনের অভ্যাস বাঙালীরা আবারো দেখিয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। দিনভর লবনের পিছু ছুটেছে নগরবাসীসহ প্রায় সকলেই। মূল্য বৃদ্ধির গুজবে যে যার সাধ্য মতো কিনেছে। মজুদ বাড়াতে শুরু করেছেন মুদী দোকানী এবং পাইকাররা। ক্রেতার চাপে কেউ কেউ রাখছেন অতিরিক্ত মূল্যও। বিকেলে নগরীর বাজার রোডের পাইকারী ও পাশর্^বর্তী খুচরা বাজার পরিদর্শনকালে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
তবে লবনের মূল্য বৃদ্ধির আগাম খবর গুজব বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান। এমনকি হঠাৎ করেই মূল্য বৃদ্ধির খবরে হতবাক স্থানীয় লবন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মালিকরাও।
এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের নিয়ে জরুরী সভা ডেকেছেন জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এই সভাটি অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
সরেজমিনে দেখাগেছে, সকাল থেকেই নগরীর বাজার রোড এলাকায় লবনের খুচরা এবং পাইকারী বাজারে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। যারা ভিড় জমাচ্ছেন তারা সবাই লবনের ক্রেতা।
লাইনে দাড়িয়ে অনেকটা হৈ-হুল্লোর করেই লবন সংগ্রহ করছেন ক্রেতারা। যারা গৃহস্থলির জন্য একাধিকজন অনন্তত কেজি দশেক লবন ক্রয় করেছেন। আবার যাদের হোটেল রয়েছে যারা নিচ্ছেন মণকে মণ।
বাজার রোড থেকে অতিরিক্ত পরিমান লবন ক্রয় করা নগরীর চৌমাথা এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী আলী আজগর বলেন, ‘লোকমুখে শুনেছি প্রতি কেজি লবনের মূল্য নাকি একশ টাকা হবে। এ কারনে আগেভাগেই হোটেলের জন্য ৩ বস্তা (১৫০ কেজি) লবন কিনেছি। তবে মূল্য বৃদ্ধির খবর কতটা নিশ্চিত তা বলতে পারেননি এই ক্রেতা।
অপরদিকে সদর রোড এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক তাসলিমা বেগম বলেন, ‘হঠাৎ করে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মধ্যে এখন শুনছি লবনের মূল্যও বাড়বে। তাই আগেভাগেই ঘরের রান্না এবং খাবার জন্য ২০ প্যাকেট লবন নিয়েছি।
বাজার রোডের পাইকারী লবন বিক্রেতা মেসার্স মাতৃ ভান্ডারের ব্যবসায়ী বলাই সাহা বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লবনের মূল্য বৃদ্ধির গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর পর সকাল থেকেই লবনের ক্রেতাদের কারনে অন্যান্য মালামালও বেচা কেনা করতে পারছি না। শুধু লবনের কাস্টমারই আসছে।
তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২০ বস্তার ওপরে লবন বিক্রি করেছি। এখনো ক্রেতাদের ভির রয়েছে দোকানের সামনে। এখন ক্রেতা চাইলে আমাদের বিক্রি করতে সমস্যা কোথায়? তবে আমরা মূল্য বাড়াইনি। বরং পূর্বের মূল্যেই ২৫ ও ৩৫ টাকা মূল্যে বিক্রি বিক্রি করছি। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতি কেজি লবেন ১-২ টাকা করে কমেও বিক্রি করছি। তাতেও আমাদের লোকশান হচ্ছে না। কেননা কোম্পানি প্রতি কেজি লবনে কম করে হলেও ৫ টাকা লাভ দিচ্ছে।
এদিকে লবন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ঝালকাঠি বিসিক এলাকার মেসার্স লাকি সল্ট এল কোম্পানির সত্ত্বাধীকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘লবনের মূল্য বৃদ্ধির খবর ¯্রফে গুজব। কে কিভাবে এই গুজব ছড়ালো তা আমারও জানা নেই। আমি ঢাকায় বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। তারাও লবনের মূল্য বৃদ্ধি করেনি। সেখানে আমরা স্থানীয় কোম্পানি লবনের মূল্য বৃদ্ধি করি কিভাবে ?
তিনি বলেন, ‘লবনের মূল্য এখন পর্যন্ত বাড়েনি। তবে বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তাও প্রতি বস্তায় সর্বোচ্চ ২০-২৫ টাকা বাড়তে পারে। তাতে প্রতি কেজি লবেন সর্বোচ্চ হলে ১টাকা বৃদ্ধি পাবে। তাও আমরা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নই।
লাকি সল্ট কোম্পানির মালিক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বন্যার কারনে কক্সবাজারে পানি উঠেছে। পানি নেমে যাওয়ার পরে সেখানে লবন উৎপাদনের কাঁচামালে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছি। দু-এক টাকা বাড়লে সে কারনে বাড়তে পারে। তাই মূল্য বৃদ্ধির খবর পুরোপুরি গুজব বলে দাবি করেন তিনি।
বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ‘লবনের মূল্য বৃদ্ধির খবর পুরোই গুজব। কেননা লবনের পর্যাপ্ত উৎপাদন এবং মজুদ রয়েছে। মানুষ হুজুকে পড়ে লবন কিনছে। এ জন্য এরই মধ্যে মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের একাধিক মোবাইল কোর্ট বাজার মনিটরিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে।তিনি বলেন, ‘লবনের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি যে গুজব সে ব্যাপারী জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। তাদের গুজবে কান না দেয়াই ভালো জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, বিষয়টি নিয়ে সন্ধ্যার পরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সাংবাদিকদের মাধ্যমে গুজবের বিষয়টি জনগণের কাছে পৌঁছে দিতেই এই আয়োজন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।এদিকে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাহ সোয়াইব মিয়া বলেন, ‘লবনের মূল্য বৃদ্ধির খবর ¯্রফে গুজব। এ বিষয়ে এরই মধ্যে আমরা বিভিন্ন বাজারে বাজারে অভিযান করেছি। মানুষ যাতে গুজবে কান না দেয় সে বিষয়ে সাধারণ ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সচেতন করা হচ্ছে।