অধরাই থাকছে নগরীর মাদকের গডফাদাররা অধরাই থাকছে নগরীর মাদকের গডফাদাররা - ajkerparibartan.com
অধরাই থাকছে নগরীর মাদকের গডফাদাররা

3:10 pm , November 17, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীসহ জেলায় মাদকের ছড়াছড়ি নতুন কোন খবর নয়। প্রতিদিনই নগরীর ৪ থানা, জেলা ও আমর্ড ব্যাটালিয়ন পুলিশ এবং র‌্যাবের অভিযানে মাদক উদ্ধার হয়। যার মধ্যে সিংহভাগ ভাগই ইয়াবা। এরপরে রয়েছে গাঁজা ও ফেন্সিডিল। এক সময়ে বেশি বিক্রিত ফেন্সিডিলের পরিবর্তে এখন ইয়াবা মাদক বিক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় ও সমাদৃত। ফেন্সিডিলের চেয়ে ইয়ারা বহন, নিজেদের কাছে রাখা ও মাদক সেবীদের কাছে পৌছে দেয়া সহজ হওয়ায় দক্ষিনের প্রথম ও প্রধান মাদক হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে ইয়াবা। যার প্রমানও মিলেছে বেশকয়েকটি বড় ইয়াবার চালান আটকের মাধ্যমে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী নগরীর ইতিহাসে সব চেয়ে বড় ইয়াবার চালান আটক হয় চলতি বছরেই। তখন দুজন আটক হলেও পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী অভিযান টের পেয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় মূল হোতা। তার আগে এপ্রিলে বরিশাল নৌ বন্দরে ঢাকা-বরিশাল রুটের একটি লঞ্চ থেকে পুলিশের হাতে আটক হয় ইয়াবার দ্বিতীয় বড় চালান। সে সময়ও আটককৃতদের মুখ থেকে বেড়িয়ে এসেছিলো এক গডফাদারের নাম। মাদক উদ্ধার ও নির্মূলে বরিশাল পুলিশের প্রশংসনীয় সফলতা থাকলেও তা ব্যর্থ করে দিয়ে ধরাছোয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে মাদক ডন ও গডফাদাররা।
পুলিশের একটি সুত্র জানিয়েছে নগরীর শীর্ষসহ সব ধরনের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রনয়ন করে থাকে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। সাধারনত সে অনুযায়ী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে থাকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। জানা গেছে বরিশাল ডিবি পুলিশের প্রনয়ন করা তালিকায় ৫ শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে। এরা সবাই নগরীর বাসিন্দা। তালিকায় শীর্ষে থাকা মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে নগরীর একাধিত জনপ্রতিনিধির নাম রয়েছে। আবার শীর্ষদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের হদিসই খুজে বের করতে পারছে না পুলিশ। ফলে শেষের সারির মাদক ব্যবসায়ীদের ধরপাকরের মধ্যেই অভিযান সীমাবদ্ধ। এর মধ্যেই আচমকা দু’একটি বড় চালানের সন্ধান মিলে যায় তাদের হাতে। কিন্তু দেখা মিলে না গডফাদারদের। এ বিষয়ে ডিবির এসি নরেশ কর্মকার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা মাদক উদ্ধারে বেশ সফলতা দেখিয়েছে ডিবি। অভিযানে যারা বেশী পরিমান মাদক সহ আটক হয় তারাও গডফাদারদের মধ্যে পড়ে। এছাড়া নগরীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে। আর যারা বাইরে আছে তাদের কর্মকান্ড আমাদের নজরদারীতে রয়েছে। বর্তমান পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে নগরীতে মাদকের জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে পুলিশ।
এদিকে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি সুত্র জানিয়েছে বরিশাল নগরীতেই রয়েছে ২০ থেকে ২৫ জন মাদক গডফাদার। যাদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি টেকনাফ ও কক্সবাজার সহ সীমান্তবর্তী এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করে কুরিয়ার সার্ভিস বা ব্যক্তি বিশেষের মাধ্যমে বড় চালান নিয়ে আসে। অনেকে আবার ঢাকার কয়েক শীর্ষ ব্যবসায়ীর সাথে ভায়া ব্যবসা করে। এছাড়াও নগরীর এক সাবেক নারী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে রাতের বেলা প্রাইভেট কার নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ওই সাবেক নারী কাউন্সিলরের সাথে থাকা চিহ্নিত কয়েক মাদক ব্যবসায়ীর ওঠা বসা বিষয়টি আরো সন্দেহের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব লোক মারফত বা অন্য কোন পরিবহনে নগরীর ব্যবসায়ীদের কাছে পৌছে দেয়। এদিকে অন্য একটি সুত্র জানিয়েছে কক্সবাজার ও টেকনাফ এমনকি ঢাকা থেকে অনেক ব্যবসায়ী ইয়াবা নিয়ে নিজেরাই বরিশালে চলে আসে। তারা বেশ কয়েকদিন নগরীর অভিজাত আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে পরিচিত লোকদের মাধ্যমে নগরীর মাদক ব্যবসাীদের সাথে পরিচিতি ও সখ্যতা গড়ে তুলে ইয়াবা সহ মাদক দ্রব্য বিক্রি করছে। অন্য দিকে ফিসিং ট্রলারযোগে পাথরঘাটা ও বরগুনায় আসছে ইয়াবা। পুলিশের কাছে তথ্য থাকলেও কারা এর সাথে জড়িত তার সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই তাদের কাছে। তবে বিভিন্ন সময় গনমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এসব বড় চালানের সাথে পাথরঘাটা থেকে বর্তমান পৌর কাউন্সিলর ও পাথরঘাটার বিএফডিসির শীর্ষ শ্রমিকলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল এর নাম এবং কলেজ ছাত্র রিফাত হত্যা কান্ডেরসময় বিভিণœ মাধ্যমে বরগুনা থেকে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে উঠে এসেছে বরগুনা ১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু পুত্র সুমন দেবনাথের নাম। অভিযোগ রয়েছে এই সোহেল ও সুমন দেবনাথ সমুদ্র পথে পাথরঘাটা ও বরগুনায় যেসব ইয়াবা তথা মাদকের চালান আসে তা নিয়ন্ত্রন করে থাকে। এই সব চালান থেকেই একটি অংশ প্রবেশ করে বরিশাল নগরীতে। আর এভাবেই নগরী তথা বরিশালে ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবার চালানগুলো। আর এই ছড়িয়ে পড়া থেকেই দু’একটি চালান আটক হচ্ছে পুলিশ তথা আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে। তবে বরাবরই অধরাই থেকে যাচ্ছে নগরী তথা দক্ষিনের মাদক গডফাদাররা।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT