6:16 pm , May 30, 2018
মর্তুজা জুয়েল ॥ আসন্ন জাতীয় বাজেটে এবারেও থাকছেনা জেলা ভিত্তিক বাজেট। আগামী মাসে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে বাজেট ঘোষনা হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত জেলা ভিত্তিক বাজেটের জন্য কোন কার্যক্রম গ্রহনের আভাস পাওয়া যায়নি। প্রতি বছর বাজেটের পূর্বে চেম্বার অব কমার্স সহ বিভিন্ন সংগঠনের এ বিষয়ে তৎপরতা থাকলেও এবার কোন কর্মসূচী নেই কোন সংগঠনের।
আগামী বাজেট কিংবা পরবর্তীতে জেলা ভিত্তিক বাজেট হবে কিনা তা জানতে বরিশাল জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, চেম্বার অব কমার্সসহ অন্যান্য দপ্তরের নিকট যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। বাজেট প্রনয়নের জন্য জেলা পর্যায়ে সরকারী বেসরকারী কোন দপ্তরের আয় ব্যয়ের কোন বিবরনী কিংবা কোন চাহিদা পত্রও চায়নি কোন মন্ত্রনালয় কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান। এরফলে জেলা ভিত্তিক বাজেটের কোন ঘোষনা শিঘ্রই আসছেনা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে ২০০৯ সাল থেকে ডেমোক্রেটিক বাজেট মুভমেন্ট অন্যান্য এনজিও সংগঠকদের নিয়ে জেলা ভিত্তিক বাজেটের দাবী জানিয়ে আসছিল । ১৯টি জেলায় গনস্বাক্ষর কর্মসুচী সহ গত বছরেও তাদের এ দাবী নিয়ে বরিশালে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সভা-সেমিনার , স্মারকলিপি পেশসহ বিভিন্ন কর্মসুচী পালন করতে দেখা গেছে। তবে এবার কোন পদক্ষেপ নেই কোন দপ্তরের। বরিশাল সহ অন্যান্য জেলায় ৩৫ টি উন্নয়ন সংগঠন বিভিন্ন সময়ে এ দাবীতে কাজ করছে । এ সংগঠনগুলোর দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১৩-২০১৪ সালে টাঙ্গাইল জেলার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে পৃথক বাজেট ঘোষনা করা হলেও পরবর্তী অর্থবছরে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর পরবর্তী অর্থবছর থেকে পৃথকভাবে জেলা ভিত্তিক বাজেট করার কথা থাকলেও তা আর করা হয়নি ।
সর্বশেষ গত ৬ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যদের নিয়ে অর্থ মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে গনতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন সংশ্লিষ্টরা। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী জেলা বাজেট ঘোষনার বিষয়ে সুষ্পষ্ট কোন ঘোষনা না দিয়ে বলেছেন সামনে দেখা যাবে। বৈঠকে উপস্থিত বরিশালের একাধিক উন্নয়ন সংগঠক ভোলার গ্যাস বরিশালে আনা, সরকারী কোল্ডষ্টোরেজ, ইপিজেড স্থাপন সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে দাবী উপস্থাপন করেন। এসময় তারা নদী শাসন, মৎস্য ও কৃষি ভিত্তিক শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলাসহ অঞ্চল ভিত্তিক প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে পৃথক বাজেট প্রনয়নের দাবী জানান। এসময় অর্থমন্ত্রী তাদের জানান, দক্ষিনাঞ্চলে পদ্মা সেতু, পায়রা সমুদ্র বন্দর, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সহ বৃহৎ উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এগুলোও করা হবে, এজন্য এখনই জেলা বাজেট প্রয়োজন নেই । অর্থ মন্ত্রীর এমন ঘোষনায় জেলা বাজেট না হওয়ার বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়েছে বলে জানান ঐ বৈঠকে উপস্থিত ডেমোক্রেটিক বাজেট মুভমেন্টের বরিশাল জেলার সাধারন সম্পাদক রহিমা সুলতানা কাজল। তিনি বলেন দেখা যাবে, পরে হবে, উন্নয়ন তো হচ্ছেই। এ ধরনের কথার বেশী আর জেলা বাজেট সামনে এগোয়নি। উন্নয়ন সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের দাবী ছিলো জেলা ভিত্তিক বাজেটের । তাদের দাবী সরকারের উদ্দেশ্য জনকল্যানমূখী হলেও প্রতি বছর যে জাতীয় বাজেট হয়ে আসছে তার শতভাগ বাস্তবায়ন ও প্রতিফলন তৃনমূলে হয়না। বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সময়ক্ষেপন ও যথা সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাজেটের মূল লক্ষ্য ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের আগ্রহ না থাকায় দাবি এখন অনেক পিছনে চলে এসেছে।
বরিশাল চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এর সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, তৃনমূল পর্যায়ে সুষম উন্নয়ন এবং স্থানীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে হলে জেলা বাজেটের বিকল্প নেই। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমরা বিষয়টি তুলে ধরেছি। এখন কোন ঘোষনা না আসলে আমরা কি করবো ? তবে জেলা ভিত্তিক বাজেট হলে সকলে উপকৃত হত।
সরকারী বিএম কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মোঃ আকতারুজ্জামান বলেন, জেলা বাজেট মূলত কেন্দ্রীয় বাজেটেরই অংশ । তবে টাঙ্গাইল জেলায় যে ধরনের জেলা বাজেট দেয়া হয়েছিল তা আসলে পূর্নাঙ্গ বাজেট ছিলনা । এটা ছিল আসলে বার্ষিক জেলার ব্যয় বিবরনীর তালিকা প্রনয়ন, কিন্তু বাজেট বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে ঐ সময়ে সরকারের ইচ্ছা থাকলেও আইনি প্রক্রিয়ার কারনে জেলা বাজেট আলোর মূখ দেখেনি। এজন্য আইনি সংষ্কার প্রয়োজন রয়েছে। জেলা পর্যায়ে সরকারী বেসরকারী খাতে রাজস্ব আহরন, উপকারভোগী ক্ষেত্রগুলোর আর্থিক মূল্যায়ন, মোট চাহিদা এবং ব্যয় নির্ধারন পূর্বক বাজেট প্রনয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় যোগানের পরিমান নির্ধারন করা জরুরী। এছাড়া বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় করার প্রক্রিয়া, বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন বিষয়ে সুষ্পষ্ট নীতিমালা বা সাংবিধানিক আইন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আইনী সংষ্কার করা হলে জেলা বাজেটের মাধ্যমে কাঙ্খিত প্রতিফলন ঘটবে।