6:18 pm , May 28, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরবাসীর ভোগান্তি রোধে নগরীর প্রান কেন্দ্র সদর রোড সহ সংশ্লিষ্ট ব্যস্ততম এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এর সহযোগিতায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ফলপট্টি, চকবাজার ও কাটপট্টি এলাকার ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন তারা। গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানা পুলিশের নেতৃত্বে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। এর ফলে আসন্ন ঈদ কেনা কাটায় নগরবাসীকে ভোগান্তি এবং যানজট থেকে মুক্তি পাচ্ছে নগরী।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, হঠাৎ করেই নগর পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের যৌথ উচ্ছেদ অভিযানে অনেকটা ভোগান্তি ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়েছে তাদের।
জানাগেছে, দীর্ঘ দিন ধরেই নগরীর ব্যস্ততম সদর রোড, কাটপট্টি, চক বাজার, কেবি হেমায়েত উদ্দিন (গীর্জা মহল্লা) সহ ব্যস্ততম সড়কের ফুটপাত দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে কিছু ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ভ্রাম্যমান হকাররা ফুটপাত দখল করে রাখে। এর ফলে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হয় সড়ক দিয়ে। এতে করে কোন কোন সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় তাদের। অবশ্য ফুটপাত দখলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন থেকেই বিসিসি’র আরআই শাখার পরিদর্শকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ফুটপাত দখলকারীদের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে তাদের ব্যবসার সুযোগ করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে পরিদর্শকদের বিরুদ্ধে।
এদিকে সিটি কর্পোরেশন এবং জেলা পরিষদ থেকে স্টল নিয়ে ব্যবসা করা ব্যক্তিরাও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছিলো। নিজের সীমানার বাইরে বাহিরাংশে সাইন বোর্ড, বিলবোর্ড টানিয়ে নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রচার চালিয়ে আসছিলো তারা। এমনকি নিজেদের সুবিধার্থে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশে থাকা ড্রেন, ফুটপাত এমনকি রাস্তা পর্যন্ত নিজেদের দখলে নিয়ে জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে আসছিলো। এ নিয়ে ইতিপূর্বে পত্র-পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়। কিন্তু বিষয়টি নজরে আসেনি সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের।
তবে একটু দেরী করে হলেও ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনা ও স্টলের বহিরাংশে থাকা ব্যানার, বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে। গত রোববার মেট্রোপলিটন পুলিশের আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক বিশেষ সভায় ঈদে জনসাধারনকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে উচ্ছেদের ওই সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববার বিকাল থেকে নগরীর প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ন এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং এর ব্যবস্থা করা হয়। যেখানে রাতের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত ও স্টলের সামনে থাকা বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ড অপসারনের জন্য আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু প্রশাসনের সেই নির্দেশনাও কর্ণপাত হয়নি ভ্রাম্যমান হকার ও মার্কেটের স্টল মালিকদের। তাই গতকাল সোমবার সকালে সিটি কর্পোরেশন এর সহযোগিতা নিয়ে ফুটপাত দখলকারী হকার ও মার্কেট এবং স্টলের বাইরে থাকা বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড বুল্ডোজার দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
অবশ্য পুলিশের এই অভিযানের কিছুটা বিরোধিতা করেছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। মহানগর দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি স্বপন দত্ত জানিয়েছেন, উচ্ছেদের পূর্বে অন্ততপূক্ষে ২৪ ঘন্টা আগে নোটিশ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তা করা হয়নি।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। এসময় তারা বিষয়টি নিয়ে ঈদের পরে আলোচনায় বসার কথা বলেছেন। তাই দুপুর ২টার দিকে পুনরায় তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে স্বাভাবিক বেচা-বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে।
এদিকে অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া কোতয়ালী মডেল থানার দায়িত্বে থাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার শাহনাজ পারভীন বলেন, নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান আমাদের চলমান একটি কার্যক্রম। ইতিপূর্বে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের কাশিপুর থেকে আমতলার মোড় পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এর ফলে ওই এলাকার ফুটপাত ব্যবহার করতে পারছে পথচারীরা।
তিনি বলেন, ঈদে সবচেয়ে বেশি ভীড় হয়ে থাকে নগরীর চকবাজার, কাটপট্টি ও গীর্জা মহল্লায়। কেননা শুধু এই নগরীর মানুষই নয়, বরং দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ কেনা-কাটা করার জন্য এখানে আসছে। কিন্তু রাস্তা সংকুচিত হওয়ায় মানুষের চলাচল করতে কষ্ট হয়। তার মধ্যে আবার ফুটপাত দখল করে রেখেছিলো কিছু ব্যবসায়ীরা। ওইসব স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য নগর পুলিশের পক্ষ থেকে অনেক আগেই ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছিলো। কিন্তু তারা তাতে গুরুত্ব দেয়নি। তাই সোমবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। শুধু চকবাজার বা তৎসংলগ্ন এলাকায় নয়, মহানগরী জুড়েই এই অভিযান চলছে। ফুটপাত ও সড়কের অবৈধ স্থাপনা পুরোপুরি ভাবে উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সহকারী পুলিশ কমিশনার শাহনাজ পারভীন।