7:13 pm , May 23, 2018
মর্তুজা জুয়েল ॥ দুদক’র বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ে দেয়া অভিযোগের শতকরা ৯০ ভাগ ভিত্তিহীন ও এখতিয়ার বর্হিভুত। উদ্দেশ্যে ও ষড়যন্ত্রমুলক এসব অভিযোগ নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে দুদক কর্মকর্তারা। ব্যক্তিগত শত্রুতা উদ্ধারে দেয়া ওই সকল অভিযোগ তদন্তে গিয়ে দুদক কর্মকর্তাদের সময় ব্যয় ও অর্থ অপচয় হচ্ছে। উদ্দেশ্য ও ষড়যন্ত্রমুলক অভিযোগের কারনে সঠিক অভিযোগ চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। কিংবা এড়িয়ে থাকে প্রকৃত অপরাধীরা। দুদক সুত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
দুদক কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দুদক বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ে দুদকের অভিযোগ বাক্স রয়েছে। অভিযোগ বাক্সে অভিযোগ জমা হয়। এছাড়া ডাকযোগে দুদকের দপ্তরেও বহু অভিযোগ জমা হচ্ছে। অভিযোগের ৯০ শতাংশেরও বেশি দুদকের এখতিয়ার বর্হিভূত। জমা দেয়া অভিযোগের মধ্যে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, ব্যবসায়িক, আর্থিক অভিযোগ ফেলা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগের মধ্যে দুদকের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই এমন অভিযোগ সংখ্যা শতকরা ৯০ শতাংশেরও বেশি। আবার দুদকের আমলযোগ্য অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ অভিযোগই ভিত্তিহীন। সীমিত জনবল এবং অধিক সংখ্যক ভিত্তিহীন অভিযোগ দুদকের কার্যক্রমে দীর্ঘ সূত্রিতা সৃষ্টি করছে।
কার্যালয় সুত্র জানায়, ২০০৪ সালে স্বাধীন দুর্নীতি কমিশন গঠনের পর বরিশাল বিভাগে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছর প্রথম ৯ মাসে ১৯টি মামলায় আসামীদের সাজা দিয়েছে আদালত। ২০১৬ সালে এর সংখ্যা ছিল ১১টি এবং ২০১৫ সালে ছিল মাত্র ২টি। আর এ কারণে দুর্নীতিবাজরাও শংকিত হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দপ্তরের প্রকৌশলী, সিভিল সার্জন, অধ্যক্ষ, ঠিকাদারসহ রাঘব বোয়ালদের গ্রেপ্তার করে দুদক কারাগারে পাঠিয়েছে।
দুদক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৮৫টি অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। প্রধান কার্যালয়ে ৩২৩টি বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। নতুন মামলা করা হয় ২৫টি। ৪৫৪টি অভিযোগের তদন্ত করা হয়। স্বাক্ষ্য দাখিল করা হয়েছে ২৯৯টি। চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে ৭৯টি। ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করা হয় ৯৫টি, মামলা খালাস প্রাপ্ত হয় ৩১টি এবং এখন পর্যন্ত নতুন এবং পুরাতন বিচারাধীন মামলা রয়েছে ২১০টি। তবে এ সকল পরিসংখ্যানের বিপরীতে প্রতি মাসেই দুদক কার্যালয়ে মুল অভিযোগ দাখিল হয়েছে গড়ে ১০০ থেকে ১৫০টি। সে হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজারের বেশী অভিযোগ জমা হয়েছে।
দুদক কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে অভিযোগ বক্সটিতে ভর্তি হয়ে অভিযোগ ফেলার স্থান থেকে খাম বের হয়ে আছে। সেখানে উপস্থিত দুদক কর্মকর্তারা জানান, প্রতি সপ্তাহে এভাবে অভিযোগের বাক্সটি ভরে যায়। তবে এর বেশিরভাগই ভিত্তিহীন এবং দুদকের আওতায় বাইরের অভিযোগ।
এ বিষয়ে দূদকের আঞ্চলিক পরিচালক আক্তার হোসেন জানান, অভিযোগের পাহাড় থেকে সঠিক অভিযোগটি বের করতেই দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে বিষয়টি অবহিত করতে পারলে এ থেকে পরিত্রাণ সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া রয়েছে জনবল সংকট। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় মাত্র দুইটি অফিস নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনায় মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। জনবল কম থাকায় থাকায় দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। কর্মকর্তা নিয়োগ করা গেলে প্রাপ্ত অভিযোগের অনুসন্ধান কার্যক্রম এবং তদন্ত দ্রুত গতিতে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।