3:13 pm , May 22, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জামিনদারের স্বাক্ষর জাল করে প্রতারণার মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা ঋণ (যা সুদে আসলে ১৪ কোটি টাকায় দাড়িয়েছে দাবি ব্যাংকের) উত্তোলন করে আত্মসাতকারী ঋণ গ্রহীতা ছগির হোসেন ও বরিশাল ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপক শহিদুল হকের বিরুদ্ধে একশত কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। দায়েরকৃত মামলায় অপর বিবাদীরা হচ্ছেন ঃ কেন্দ্রীয় ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এছাড়া জাল জালিয়াতির অভিযোগে বরিশাল আদালতে ওই চারজনকে বিবাদী করে আরো একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দু’টিতে বাদী হয়েছেন বরিশাল নগরীর ইন্দোবাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মালিক এএফএম আনোয়ারুল হক। এদিকে মামলা থেকে রক্ষা পেতে ব্যবস্থাপক শহিদুল হক দুই বছর পর বাদীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। বরিশাল ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপক শহিদুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এভাবে জালজালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ঋণ উত্তোলন করে তা ভাগাভাগি করে নেয়ার। এ কারণে তাকে একবার স্ট্যান্ডরিলিজ করা হলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে লবিং করে আবার ফিরে আসেন বরিশালে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০০৮ সালে নগরীর বিএম কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা ছগীর হোসেন এবং ব্যাবস্থাপক শহিদুল হক যোগসাজস করে ৪ কোটি টাকার ঋণ উত্তোলন করেন। সেখানে ইন্দোবাংলা লিমিটেডের যে সকল দলিলপত্র মর্গেজ রাখা হয় তা সব জাল জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরী করা। এছাড়া ঋণে জামিনদার হিসেবে দেখানো হয় ইন্দোবাংলার মালিক এএফএম আনোয়ারুল হককে। এমনকি সেখানে আনোয়ারুল হকের স্বাক্ষর জাল করা হয়। এতে ছগীরকে সহায়তা করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক শহিদুল হক। জাল জালিয়াতিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করায় ঋণের একটি অংশ শহিদুল হককে ঘুষ দেন ছগীর। বর্তমানে সুদেআসলে ওই টাকার পরিমাণ দাড়িয়েছে ১৪ কোটি টাকায়। বিষয়টি জানতে পেরে ইন্দোবাংলার মালিক আনোয়ারুল হক জালজালিয়াতির কারণে ২০১৬ সালে বরিশাল চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ব্যবস্থাপক শহিদুল হক ও ছগীরসহ ৪ জনকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন। আনোয়ারুল হকের প্রধান অফিস ঢাকায় হওয়ায় একই বছর ঢাকা জেলা জজ আদালতে একশত কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরপরই ন্যাশনাল ব্যাংকের কেন্দ্রীয় অফিস বিষয়টি জানতে পেরে ব্যবস্থাপক শহিদুল হককে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন বরিশাল থেকে। এমনকি ওই মামলায় উল্লেখ থাকা বিষয়গুলো তদন্তে দেয়া হয়। তদন্তে এর সত্যতা পাওয়ার পর বেকায়দায় পড়ে যান ব্যবস্থাপক শহিদুল হক। সে চাকরি বাঁচাতে ব্যাংকের প্রভাবশালী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারস্থ হন। এভাবে কিছুদিন কাটার পর ব্যবস্থাপক শহিদুল আবার বরিশালে ফিরে আসেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বরিশাল ও ঢাকার আদালতে দায়েরকৃত দু’টি মামলা গলার কাটা হয়ে দাড়ায়। জামিনদ্বারের স্বাক্ষর জাল এবং কাগজপত্রের জালিয়াতির বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার দুই বছর পর উল্টো ইন্দোবাংলার মালিক আনোয়ারুল হকের বিরুদ্ধে গত সোমবার বরিশাল আদালতে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। ইন্দোবাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মালিক এএফএম আনোয়ারুল হক বলেন, ঋণ গ্রহীতার সাথে আঁতাত করে ব্যবস্থাপক শহিদুল হক জামিনদ্বারে আমার স্বাক্ষর জাল করেছে। শুধু তাই নয়, ঋণ উত্তোলনে যে কাগজপত্র ব্যবহার করা হয়েছে তাতেও রয়েছে জালিয়াতি। এ কারণে ঋণ গ্রহীতা ও ব্যবস্থাপক শহিদুল হকের বিরুদ্ধে আমি বাদী হয়ে বরিশাল ও ঢাকায় দু’টি মামলা দায়ের করি। এখন ওই মামলা থেকে পরিত্রাণ ও চাকরি রক্ষা করতে ব্যবস্থাপক শহিদুল মিথ্যা অভিযোগ তুলে পাল্টা মামলা দায়ের করেছেন। আমি আদালতে প্রমাণ দেবো ব্যবস্থাপক শহিদুল হকের জালিয়াতির বিষয়গুলোর। পাল্টা মামলার বিষয়ে সরকারি কৌশলী গিয়াসউদ্দিন কাবুল বলেন, ক্ষতির মামলা দায়েরকারী ব্যাংকের বিরুদ্ধে যথাযথ কাগজপত্র আদালতে উপস্থাপন করতে পারলে পাল্টা মামলায় কোন কাজ হবে না।