6:24 pm , May 21, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীতে অবৈধভাবে পরিত্যক্ত মাইক্রোবাসকে রুপান্তর করা হচ্ছে এ্যাম্বুলেন্সে। লক্কর-ঝক্কর এ সকল মাইক্রোবাসে রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। প্রশাসনের নিরবতায় সিন্ডিকেট করে বছরের পর বছর অবৈধভাবে এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা চালিয়ে আসছে একটি চক্র। এজন্য ট্রাফিক বিভাগের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা, কথিত সাংবাদিক ও স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করা হচ্ছে মাসিক চাঁদার বিনিময়ে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের অভ্যন্তরে সড়কের উপর এ্যাম্বুলেন্সের ষ্ট্যান্ড রয়েছে। জরুরী বিভাগ থেকে প্রধান গেট পর্যন্ত শতাধিক এ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে। কোন প্রকার রেজিষ্ট্রেশনবিহীন দক্ষিণবঙ্গ বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতি নামের একটি সংগঠন করেছে মালিক ও চালকরা। প্রতি এ্যাম্বুলেন্স থেকে দৈনিক ৫০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করে পুলিশ, কথিত সাংবাদিক, মেডিকেলের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করা হচ্ছে। প্রতি ট্রিপে কমিশনের বিনিময়ে এ কাজে সহায়তা করছে মেডিকেলের চতুর্থ শ্রেনীর ১০/১৫ কর্মচারী।
এ সকল এ্যাম্বুলেন্সের চালক মোঃ জামালসহ একাধিক চালক স্বীকার করেন ব্যবহার অনুপযোগী ও পরিত্যক্ত মাইক্রোবাস মেরামত করে এ্যাম্বুলেন্স তৈরী করা হয়েছে। শুধুমাত্র রং আর ভিতরে একটি সিট সর্বস্ব এ সকল এ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন সিলিন্ডার, ফার্ষ্ট এইড বক্স, ষ্ট্রেচার, জরুরী দ্রুত পরিবহনের সাইরেন ও সিগনাল বাতি নেই। কোন কোন এ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও তাতে অক্সিজেন কিংবা মাস্ক পর্যন্ত নেই। এছাড়া কোন গাড়িতেই নেই অতিরিক্ত চাকা ।
একাধিক মালিক ও চালক স্বীকার করেন, এ সকল এ্যাম্বুলেন্সের কোনটিই বিআরটিএ থেকে এ্যাম্বুলেন্স হিসেবে রেজিষ্ট্রেশন নেয়া হয়নি। এ্যাম্বুলেন্স চালক মো. বাবুল, মো. জামাল খান ও রাসেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চাইলে তারা স্বীকার করেন ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করা নেই। অপর দুই জন চালক বলেন ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগে না। তারা জানান, সমিতির সেক্রেটারী শাহাদাত হোসেন পুলিশ ও সাংবাদিকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভাগের অন্যান্য সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ্যাম্বুলেন্সের সংকটে অবৈধ সিন্ডিকেট দক্ষিণাঞ্চলের অবৈধ এ্যাম্বুলেন্স পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রন করছে। এদের কারনে কোন বেসরকারী হাসপাতাল ও অন্যান্য উপজেলার বৈধ এ্যাম্বুলেন্স শেবাচিম থেকে রোগী ও মৃতদেহ পরিবহন করতে পারে না। এজন্য বাধ্য হয়ে রোগীদের এ্যাম্বুলেন্সের নামে এসকল পুরোনো লক্কর ঝক্কর মাইক্রোবাস ব্যাবহার করতে হচ্ছে।
এদিকে এ সকল অবৈধ এ্যাম্বুলেন্সের সাথে মেডিকেলের কর্মরতদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে মেডিকেলের এ্যাম্বুলেন্স অচল করে রেখে রোগীদের বাইরের অবৈধ এ্যাম্বুলেন্সে পরিবহন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। মেডিকেলের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী মোদাচ্ছের আলী কবিরের নিজের দুইটিসহ অন্যন্য কর্মচারীরা অবৈধ এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে ।
অবৈধ মাইক্রো চলাচলে গঠিত কথিত দক্ষিণবঙ্গ বেসরকারি এ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সেক্রেটারী মো ঃ শাহদাত বলেন, রোগীদের জিম্মি করা হয়না বরং তাদের আমরা সেবা করে আসছি। সরকারী এ্যাম্বুলেন্স সংকট থাকায় অবৈধ হলেও রোগীরা আমাদের মাধ্যমে চলাচল করছে ।
বিআরটিএ এর বরিশাল কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী যে কোন এ্যাম্বুলেন্সে ফ্রিজ চেম্বার, এসি, অক্সিজেন সিলিন্ডর সহ অন্যান্য কিছু সামগ্রী বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। কিন্তু নগরীতে যে এ্যাম্বুলেন্সে রুপান্তরিত করা হয়েছে তার কোনটিই বৈধ না। এমনকি এ সকল এ্যাম্বুলেন্সের ইঞ্জিন এবং বডি অনেক পুরোনো ও পরিত্যক্ত । ইতিপূর্বে অবৈধ এ্যাম্বুলেন্স চলাচলের বিরুদ্ধে দুই বার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে । এগুলো আটক করে আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের।
এ বিষয়ে উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রফিক) উত্তম কুমার পাল বলেন, ট্রফিক বিভাগের নিয়মিত অভিযানের সময় এ্যাম্বুলেন্সের উপরও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া অনেক সময় রোগী পরিবহন করা অবস্থায় মানবিক কারণে এ্যাম্বুলেন্সের উপর আইন প্রয়োগ করা সম্ভব হয়না।