6:22 pm , May 21, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাতিল হওয়া টেন্ডারের প্রায় ১০ কোটি টাকার বিল অনুমোদনের জন্য হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে (এজি) পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালে সদ্য যোগদান করা পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন একক ক্ষমতা বলে ওই বিল ছাড় করার জন্য এজি অফিসে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আজ মঙ্গলবার প্রায় ১০ কোটি টাকার বাতিল হওয়া ভূয়া টেন্ডারের বিল পাশ করার বিষয়ে সভা করবেন হিসাব নিয়ন্ত্রক। সকাল ৯টায় এজি অফিসেই সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে বিল পাশ করার বিষয়ে সভা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
অবশ্য ভুয়া টেন্ডারের প্রায় ১০ কোটি টাকার বিল এজি অফিসে পাঠানোর বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন। এ সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে পরিবর্তনের কাছে দাবী করেছেন।
সূত্রমতে, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৬৮১৩ কোড এর মেডিকেল ভারী যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয়ের লক্ষ্যে ১২০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে মন্ত্রনালয়। কিন্তু মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে কোন প্রকার দরপত্র আহবান ছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও বেঙ্গল সাইনটিফিক এন্ড সার্জিক্যাল বাড়তি আরো ১০ কোটিসহ মোট ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ৬০০ টাকার যন্ত্রপাতি সরবরাহের ভাউচার করেন তৎকালিন পরিচালক ডা. মু. কামরুল হাসান সেলিম। অবৈধ ভাবে ক্রয়কৃত ওই যন্ত্রপাতির গায়ে স্টিকার দিয়ে বিদেশী প্রযুক্তির বলে চালিয়ে দেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুটি। এমনকি গোপনীয়তা রক্ষা করে ঠিকাদারের ওই বিল পাশ করে দেয়ার পায়তারাও চালান পরিচালক। কিন্তু দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় মন্ত্রনালয়ের এক আদেশে শাস্তি স্বরুপ ডা. মু. কামরুল হাসান সেলিমকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ওএসডি করা হয়।
সূত্র জানায়, তৎকালিন পরিচালক অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন ফারুক ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ৬০০ টাকার প্রশাসনিক অনুমোদন ও প্রয়োজনিয় অর্থ বরাদ্দের লক্ষ্যে (স্মারক নাম্বার শেবাচিমহা/বরি/২০১৫/৪৭৫) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ে পত্র প্রেরন করেন। কিন্তু আর্থিক ক্ষমতার বেশী হওয়ায় ওই দরপত্রটি ৫১১ নং স্বারকের মাধ্যমে বাতিলের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয় মন্ত্রনালয় থেকে। ওই আদেশেল পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ৩৫৪৫নং স্মারকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ৬০০ টাকার দরপত্রটি বাতিল করেন তৎকালিন পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন ফারুক। এমনকি হাসপাতালের বারান্দায় দীর্ঘ দিন ফেলে রাখা ওইসব ভারি যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেয়ার জন্য মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও বেঙ্গল সাইনটিফিক এন্ড সার্জিক্যালকে চিঠির মাধ্যমে নির্দেশ দেয়া হয়।
এদিকে কামরুল হাসান সেলিম এবং বর্তমান পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন এর যোগদানের পূর্বে পর্যন্ত ৬ জন পরিচালক দায়িত্ব পালন করেন। তারা বিভিন্ন সময়ে ওই বিল পরিশোধ এবং দরপত্রের সময় বাড়ানোর জন্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেয়। এমনকি সাবেক পরিচালক ডা. এসএম সিরাজুল ইসলাম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রভাবিত হয়ে একক ক্ষমতা বলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে ১২০ কোটির বাইরে অতিরিক্ত প্রায় ১০ কোটি টাকার ভুয়া বিল দিতে পায়তারা করে। শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন তিনি। মন্ত্রনালয়ের অনুমতি না থাকায় হিসাব নিয়ন্ত্রক ওই বিলটি বাতিল করে দেন।
ওদিকে মধ্যবর্তি সময়ে ৬ জন পরিচালক দায়িত্ব পালন কালে ওই দরপত্রের সময় বাড়ানোর জন্য মন্ত্রনালয়ে একাধিক চিঠি চালাচালি করেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারী ১৬০নং স্মারকে মন্ত্রনালয় থেকে একটি পত্র প্রেরন করা হয় শেবাচিম হাসপাতালে। যে পত্রে উল্লেখ করা হয় ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অনুমোদন ও একই কার্যালয়ের বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরিতে ১৩টি আইটেমের যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করায় বকেয়া বিল পরিশোধের ভূতাপেক্ষ অনুমতি প্রদানের বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু করনীয় নেই।
এর পরেও সদ্য যোগদানকারী পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন সেই বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেন। হাসপাতালের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. সুলতান হাওলাদার এর সহযোগিতায় বাতিল হওয়া টেন্ডারের ভুয়া বিল ঠিকাদারকে পায়িয়ে দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এর কাছ থেকে ছাড়পত্রও সংগ্রহন করেন। গত ৯ মে মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও বেঙ্গল সাইনটিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা শেবাচিম পরিচালকের হাতে আদেশ পৌছে দেন। শুধু তাই নয়, ঠিকাদারী বিলের কাগজপত্র জাচাই বাছাই’র নামে গত রোববার লোক চক্ষুর অন্তরালে প্রায় ১০ কোটি টাকার বিল ভাউচার অনুমোদনের জন্য হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে পৌছে দেন পরিচালক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রথম দিকে হাসপাতালের হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা ওই বিল পরিশোধের বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি পত্রিকায় লেখা-লেখি হলে তিনি এর থেকে পেছনে সরে যান। তাই পরিচালক একই বিল ভাইচারে স্বাক্ষর করে তা পরিশোধের জন্য এজি অফিসে প্রেরন করেছেন। আজ বুধবার সকাল ৯টায় হিসাব নিয়ন্ত্রক ভাউচারের অর্থ প্রদানের বিষয়ে মিটিং ডেকেছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সূত্র আরো জানায়, ওই বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রধান কতৃপক্ষ হিসেবে কাজ করছেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক। বিল পাশ করানোর ক্ষেত্রে ভাউচারে তার স্বাক্ষর জরুরী। উপ-পরিচালক এর স্বাক্ষরের পরে কাউন্টার স্বাক্ষর দিবেন পরিচালক। কিন্তু বাতিল হওয়া ওই টেন্ডারের প্রায় ১০ কোটি টাকার যে ভুয়া ভাউচার জমা দেয়া হয়েছে তাতে শুধুমাত্র পরিচালক ডা. বাকির হোসেন’র স্বাক্ষরে। টেন্ডার নিয়ে দুর্নীতি হওয়ায় ওই ভাউচারে স্বাক্ষর করেননি উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল কাদির। যাকে গতকাল মঙ্গলবার বদলি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হয়। বিল ভাউচার এজি অফিসে প্রেরনের বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে পুরো বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিল ভাউচার জমা সংক্রান্ত বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।