6:17 pm , April 20, 2018
রুবেল খান ॥ নগর পিতার এবারের লড়াইয়ে অংশ নিতে আঁটঘাট বেঁধে নেমেছে জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতৃবৃন্দ। দলীয় মনোনীত প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে সামিল হয়েছে জাপা নেতারা। ইতিমধ্যে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রার্থীতা জানান দিতে জাপার নেতৃবৃন্দ নগরময় পোষ্টার ও ব্যানার টানানোসহ নিজেদের মতো করে প্রচারনাও শুরু করেছেন। এছাড়াও মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চেয়ারম্যান হুসেইন মো. এরশাদসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তদবির লবিং করছেন। জাপার মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আলোচনায় রয়েছেন ৫ নেতা। তারা হলেন জাপা মহানগরের সভাপতি ও নগরীর ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ্যাড. মুরতজা আবেদীন, সদর উপজেলা জাপার সভাপতি বশির আহমেদ ঝুনু, ইকবাল হোসেন তাপস, শ্রমিক পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবু জামাল খাঁন লিটন ও মহানগর জাপা নেতা মীর আলফাজ উদ্দিন জসিম। এদের মধ্যে ইকবাল হোসেন তাপস’র দিকে মনোনয়ন পাওয়ার পাল্লা ভারী। নির্বাচন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী জুলাইয়ের শেষের দিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। নির্বাচনে মেয়র পদে বাম ঘরানার দুই দল তাদের প্রার্থী চুড়ান্ত ও ঘোষনাও দিয়েছে। ক্ষমতাসীন আ’লীগ ও বিএনপি’র প্রার্থী চুড়ান্ত হয়নি। এই দুই দলের কারা হবেন প্রার্থী সেই নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। রংপুর সিটির মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় পর জাপা নেতৃবৃন্দরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ধারাবাহিকতায় বরিশাল নগর পিতা হওয়ার লড়াইয়ে জাপা’র নেতৃবৃন্দ’র মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবারে জাতীয় পার্টির হয়ে মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছেন মহানগর জাপা’র সভাপতি এ্যাড. মুরতজা আবেদীন। যিনি সিটি কর্পোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের তিন বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। এ্যাড. মুরতজা আবেদীন বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত কোন দিক নির্দেশনা আমরা পাইনি। তাই এখন পর্যন্ত কাউকে প্রার্থী হিসেবে নির্ধারণও করা হয়নি। তবে পার্টি যদি চায় আমি মেয়র পদে নির্বাচন করবো, তাহলে আমার কোন দ্বিমত থাকবে না।
সদর উপজেলা জাপা’র সভাপতি বশির আহমেদ ঝুনু। যিনি ১৯৮৫ সালে নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ এর মাধ্যমে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তখনকার সময়ে তিনি নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ এর জেলা কমিটির সদস্য ও খালেদাবাদ ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে ২০১৬-১৭ সাল পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়াও বর্তমানে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এবং বরিশাল জেলা জাপা’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও মানবাধিকার ইউনিট বরিশাল বরিশাল মহানগর এর সভাপতি দায়িত্বে রয়েছেন বশির আহমেদ ঝুনু। তিনি বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছিলেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী আজিজুল হক আক্কাস এর কাছে পরাজিত হন তিনি। নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা এলাকার বাসিন্দা বশির আহমেদ ঝুনু জাতীয় পার্টির রাজনীতির পাশাপাশি তিনি পেশায় একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
বশির আহমেদ ঝুনু বলেন, আসন্ন সিটি নির্বাচনে আমি জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে আমার অভিভাবক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু এরশাদ এর দোয়া নিয়েই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই।
জাতীয় পার্টির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী নগরীর অক্সফোর্ড মিশন রোড এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, আমি জাতীয় পার্টির একজন সদস্য মাত্র। কোন নেতা নই। আমি জাতীয় পার্টিকে সংগঠিত করার প্রচেষ্টা করছি। আমি যে প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছি এটা তারই একটি বহিঃপ্রকাশ। তবে পার্টি যদি মনে করে সিটি নির্বাচনে আমাকে প্রয়োজন এবং মনোনয়ন দিয়ে থাকে তবে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী। তাছাড়া পার্টি অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে আমি তার পক্ষেই কাজ করবো। এখানে নির্বাচন নিয়ে পার্টির বাইরে আমার ব্যক্তিগত কোন মতামত নেই।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও শ্রমিক পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবু জামাল খাঁন লিটন বলেন, আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাজী আছি। অবশ্য দল যদি মনোনয়ন দেয় তবেই। পল্লীবন্ধু এরশাদের পরে আমার অভিভাবক হলেন পার্টির মহাসচিব ও বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে জাতীয় পার্টির অভিভাবক রুহুল আমিন হাওলাদার ও এমপি রতœা আমিন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছাকেই প্রাধান্য দিবো।
নগরীর সাগরদী চান্দুর মার্কেট এলাকাধীন শেরে বাংলা সড়কের বাসিন্দা মো. আবু জামাল খাঁন লিটন বলেন, জাতীয় পার্টি আমার সব। ছাত্র জীবন থেকেই জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তাই পার্টির সিদ্ধান্তের বাইরে যাবো না। পার্টির যে সিদ্ধান্ত আসবে তা মেনে নিয়েই দলীয় কার্যক্রমের প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করবো।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মহসিন-উল-ইসলাম হাবুল বলেন, এবার সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকবে। কেন্দ্র থেকে প্রাথমিকভাবে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে এখন পর্যন্ত ইকবাল হোসেন তাপস এগিয়ে আছে। দল থেকে তাকেই মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের ইচ্ছা ছিলো যারা সব সময় দলের পাশে ছিলো, রাজনীতিতে সক্রিয় অবস্থানে ছিলো তারাই মনোনয়ন পাবেন। সেভাবে প্রার্থী রয়েছেন জাতীয় পার্টির মহানগর সভাপতি এ্যাড. মুরতজা আবেদীন। সে তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। সে মেয়র নির্বাচন করবে কিনা সে বিষয়টি জানার জন্য একটি প্রতিনিধি দল তার কাছে পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু মুরতজা জানিয়ে দিয়েছে যে সে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না। যে কারনে ইকবাল হোসেন তাপস ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীও দেখছি না। তবে কেন্দ্রের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে প্রার্থী বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।