দক্ষিণাঞ্চল এখনো খাদ্য উদ্বৃত্ত এলাকা দক্ষিণাঞ্চল এখনো খাদ্য উদ্বৃত্ত এলাকা - ajkerparibartan.com
দক্ষিণাঞ্চল এখনো খাদ্য উদ্বৃত্ত এলাকা

6:19 pm , April 20, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ এককালে ‘বাঙলার শস্য ভান্ডার’ খ্যাত দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলা নানা সীমাবদ্ধতা ও রবি মৌসুমে সিংহভাগ জমি পতিত থাকার পরেও সাড়ে ৮ লাখ টনেরও বেশী খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকছে। কিন্তু পতিত জমি আবাদের আওতায় আনা সহ খাদ্যশস্য উৎপাদনে নিবিড় কর্মসূচী গ্রহণ করলে অদূর ভবিষ্যতেই এ অঞ্চলে উদ্বৃত্ত প্রায় ১৫ লাখ টন অতিক্রম করতে পারে বল মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞগন। একসময়ে আমন ধানই ছিল সারা দেশের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল। কিন্ত ১৯৬৯-৭০ সালে দেশে আবাদ শুরুর পরে ইতোমধ্যেই বোরো ধান দেশের প্রধান খাদ্য ফসলে পরিনত হয়েছে। তবে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ৬টি জেলায় এখনো আমনই প্রধান খাদ্য ফসল।
অপরদিকে এক সময়ের খাদ্য ঘটতি এলাকা ফরিদপুর অঞ্চলের ৫টি জেলায় ইতোমধ্যে বোরো ধান প্রধান খাদ্য ফসলে স্থান করে নিয়েছে। ফলে নিকট অতীতের ঘাটতি এলাকা ফরিদপুরে বর্তমানে ২ লাখ ৮৪ হাজার টন খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকছে। বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলাসমুহে গতবছর খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত ছিল প্রায় ৫ লাখ ৬৬ হাজার টন। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের মতে, গত অর্থ বছরে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় চাল ও গম সহ মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ২৫ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৯ টন। তা থেকে বীজ ও অন্যন্য প্রয়োজন বাবদ ১১.৫৮% হিসেবে প্রায় ২ লাখ ৯৩ হজার টন বাদ দেয়ার পরে ২২ লাখ ৩৬ হাজার টনের মত খাদ্যশস্য কৃষকের কাছে ছিল। আর সরকারী হিসেব মতে প্রতিদিন মাথাপিছু ৪৮৭.৬ গ্রাম হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় গত অর্থবছরে খাদ্য শস্যের চাহিদা ছিল ১৬ লাখ ৭০ হাজার ৬২৯ টন। ফলে নিট উদ্বৃত্ত ছিল ৫ লাখ ৬৬ হাজার ১৬৬ টন খাদ্যশস্য।
পাশাপাশি অপ্রচলিত খাদ্যপণ্য হিসেবে গম আবাদেও দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক সফলতা আসছে। তবে গত বছরের মত চলতি রবি মৌসুমেও ‘ব্লাষ্ট’ রোগের সংক্রমনে বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলে গমের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার অনেক পেছনে রয়েছে। অপরদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জনবল সংকটের সাথে ব্লক সুপারভাইজার সহ মাঠ পর্যায়ের বিদ্যমান জনশক্তির একটি বড় অংশই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা সহ যথাযথ দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগ রয়েছে। ফলে কৃষি ক্ষেত্রে কাঙ্খিত অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ৬টি জেলায় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের এক হাজার ৯৪৭টি ক্যাডার, নন ক্যাডার ও মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের মধ্যে বর্তমানে ৬১৩টি পদে কোন জনবল নেই। ব্লক সুপারভাইজারদের ১ হাজার ৯১টি পদের ২৬৭টি পদই শূণ্য।
তবে এসব কিছুর পরেও সদ্য সমাপ্ত সদ্য খরিপ-২ মৌসুমে শুধুমাত্র বরিশাল অঞ্চলেই প্রায় ৭ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদকৃত আমন ধান থেকে প্রায় ১৫ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির ছিল। অগ্রহায়নের অকাল ভারী বর্ষনে উৎপাদন কিছুটা ব্যহত হবার পরেও ১৫ লাখ টনের মত চাল উঠেছে কৃষকের ঘরে। অপরদিকে চলতি রবি মৌসুমে বরিশাল ও ফরিদপুর কৃষি অঞ্চলের ১১টি জেলায় ২ লাখ ৯৭ হাজার ৩০২ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকৃত আবাদ হয়েছে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৬৭ হেক্টরে। শুধমাত্র বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ৬টি জেলাতেই ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৮৬ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ লাখ ৬৬ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ফরিদপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪১৬ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকৃত আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে। ফলে চলতি মৌসুমে বরিশাল ও ফরিদপুর কৃষি অঞ্চলের ১১টি জেলায় উৎপাদিত বোরো ধান থেকে যে প্রায় ১২ লাখ ৫ হাজার টনের মত চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়, তা সাড়ে ১৩ লাখ টন উন্নীত হতে পারে বলে আশা করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
তবে এসব সফলতার মধ্যেও গম আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। দক্ষিণাঞ্চলে চলতি রবি মৌসুমে ফরিদপুর কৃষি অঞ্চলের ৫টি জেলায় ৫৯ হাজার ৬৮৮ হেক্টরে গম আবাদের লক্ষ্য স্থির থাকলেও প্রকৃত আবাদ হয়েছে ৫৭ হাজার হেক্টরের কিছু বেশী। ভোলাতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমনের করনে চলতি মৌসুমে আবাদ নিরুৎসাহিত করার পরেও প্রায় আড়াই হাজার হেক্টরে গমের আবাদ হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে। ফলে চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় সোয়া ২ লাখ টনের মত গম উৎপাদন হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।
অপরদিকে চলতি মৌসুমে দেশে যে সোয়া ১১ লাখ হেক্টর জমিতে আউশ-এর অবাদ হচ্ছে তার প্রায় ২ লাখ ১ হাজার হেক্টরই হচ্ছে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ৬টি জেলায়। উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৩৭ হাজার টন চাল। এছাড়াও ফরিদপুর কৃষি অঞ্চলের ৫টি জেলাতেও প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ৩৫ হাজার টন আউশ চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে এখন মাঠে কাজ করছেন কৃষকগন। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলে চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে।
তবে এসব কিছুর পরেও দক্ষিণাঞ্চলের সিংহভাগ জমি রবি মৌসুমে পতিত পড়ে থাকছে। বিএডিসি’র মতে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ৬টি জেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমান প্রায় সোয়া ৮ লাখ হেক্টরের মত। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ১ লাখ ৫৮ হাজার ২৩ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসছে। ফলে রবি মৌসুমে প্রায় ৮০ ভাগ জমিই সেচের বাইরে থাকছে। তবে এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে জানিয়েছেন, ‘বিএডিসির হিসেবটি সঠিক নয়। চলতি মৌসুমেই দক্ষিণাঞ্চলে ১ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টরেরও বেশী জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার পুরোটাই সেচ নির্ভর। এছাড়াও আরো ২ লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে আউশ-এর আবাদ হচ্ছে। এছাড়াও তরমুজ সহ বিভিন্ন রবি ফসল মাঠে রয়েছে’। সর্বপরি অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় আমন ধান কর্তনেই ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হয়ে যায়। ফলে রবি মৌসুমে সেচের আওতা বৃদ্ধি করা কষ্টকর’।
তবে এসব কিছুর পরেও দক্ষিণাঞ্চলে আরো অধিক পরিমান জমি সেচের আওতায় এনে ‘এ অঞ্চলে বোরো ধানের উৎপাদন বর্তমানের দ্বিগুনে উন্নীত করা সম্ভব’ বলেও মনে করছেন ডিএই সহ বিএডিসি’র দায়িত্বশীল মহল। সে লক্ষ্যে সেচের আওতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিএডিসি’র মাধ্যমে খাল খনন সহ মাঠ পর্যায়ে সেচ নালা তৈরীর পপাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল বীজ সরবরাহের ওপরও গুরত্ব আরোপ করেছেন কৃষিবিদগন। বর্তমানে বরিশাল অঞ্চলে বিএডিসি’র মাত্র একটি ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প চলমান রয়েছে। যার বাস্তবায়ন আগামী অর্থ বছরের শেষ হবার কথা রয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দায়িত্বশীল মহলের মতে দক্ষিণাঞ্চলে সেচ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরো বড় পরিসরে সেচ প্রকল্প গ্রহন করলে এ অঞ্চলে খাদ্য উদ্বৃত্ত বর্তমান সাড়ে ৮ লাখ টনের দ্বিগুনে উন্নীত করা সম্ভব হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT