দুই বাসের প্রতিযোগিতায় এবার প্রাণ গেলো লালমোহন ফাউন্ডেশনের সম্পাদক নাজিম উদ্দিনের দুই বাসের প্রতিযোগিতায় এবার প্রাণ গেলো লালমোহন ফাউন্ডেশনের সম্পাদক নাজিম উদ্দিনের - ajkerparibartan.com
দুই বাসের প্রতিযোগিতায় এবার প্রাণ গেলো লালমোহন ফাউন্ডেশনের সম্পাদক নাজিম উদ্দিনের

6:27 pm , May 17, 2018

মোঃ জসিম জনি, লালমোহন ॥ বেপরোয়া গতির দুই বাসের প্রতিযোগিতায় এবার প্রাণ গেছে লালমোহন ফাউন্ডেশনের সম্পাদক নাজিম উদ্দিনের। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় যাত্রাবাড়ির জনপথ মোড়ে মোটর সাইকেল থেকে ছিটকে পড়া নাজিমউদ্দিনকে চাপা দেয়। এতে মারাত্মক আহত নাজিম উদ্দিনকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করে। নাজিমউদ্দিন লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়নের বালুরচর গ্রামের আলহাজ্ব আনিচল হক’র ছেলে। সে রাজধানী থেকে প্রকাশিত ইংরেজী দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন’র বিজ্ঞাপন বিভাগের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা। এছাড়াও সে রাজধানীতে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন লালমোহন ফাউন্ডেশন’র সাধারন সম্পাদক। পুলিশ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া মঞ্জিল ও শ্রাবন পরিবহন’র বাস দুইটি ও এক চালক ও হেলপারকে আটক করেছে। তারা হলো-চালক মো. ওহিদুল (৩৫) এবং মঞ্জিল পরিবহনের হেলপার মো. কামাল (৩২)। ঘটনায় যাত্রাবাড়ি থানায় মামলা করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুই যুবক জানান, তারাও মোটরসাইকেলে করে গুলিস্তানের দিকে আসছিলেন। নাজিম উদ্দিন নামের ওই মোটর সাইকেল আরোহী জনপথ মোড় থেকে ফ্লাইওভারে উঠছিলেন। তার পিছনেই ছিলো মঞ্জিল ও শ্রাবন পরিবহনের দুটি বাস। খুবই বেপরোয়া গতিতে একটি বাস অন্যটিকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল। এক পর্যায়ে শ্রাবন বাস এসে সামনে থাকা মোটর সাইকেল আরোহী নাজিম উদ্দিনকে ধাক্কা দেয়। এতে মোটর সাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন নাজিম উদ্দিন। তারা কিছু বলে উঠার আগেই বাসটি সরাসরি নাজিম উদ্দিনের বুকের উপর দিয়ে চলে যায়। তারা দ্রুত এসে রক্তাক্ত অবস্থায় নাজিম উদ্দিনকে উঠিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখানে চিকিৎসকরা নাজিমউদ্দিনকে মৃত ঘোষনা করে। নাজিম উদ্দিনের সাথে থাকা প্রেস লেখা আইডি কার্ড থেকে তারা নাজিম উদ্দিনের নাম পরিচয় জানতে পারেন।
দুর্ঘটনার পর নাজিম উদ্দিনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা সরকারি চাকরিজীবী মেহেদী হাসান শরীফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি মোটরসাইকেলে করে ফ্লাইওভার দিয়ে আসছিলাম। নাজিম উদ্দিন আমার একটু সামনে ছিলেন। তাকে পেছন থেকে একটি দ্রুতগামী বাস চাপা দেয়। চাপা দিয়েই বাসটি দ্রুত চলে যায়। এ সময় তার ঘাড়ের রগ ছিঁড়ে যায়। প্রচুর রক্তপাত হচ্ছিল। আমি তাকে একটা সিএনজিতে তুলে দিয়ে পেছন পেছন মোটরসাইকেলে এসেছি। আমরা কয়েকজন একসঙ্গে এসেছি। ঢাকা মেডিক্যালে আসার পর ইসিজি করে চিকিৎসকরা আর কিছুই পাননি। ’
নাজিম উদ্দিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা আরেক পথচারী মো. রাসেল জানান, ‘যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া থেকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্রিজের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন নাজিম উদ্দিন। তার পেছনে বাস ছিল। ফ্লাইওভারের ওপরে এক লেনের রাস্তা হলেও ওই বাসটি মোটরসাইকেলটিকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল। একপর্যায়ে বাসটি মোটরসাইকেলটিকে চাপা দিলে পড়ে যান নাজিম উদ্দিন। ’ তিনি বলেন, ‘আমার চোখের সামনে এই দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আমি তাকে হাসপাতালে রেখে অফিসে চলে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আবার ফিরে এসেছি। ’
ঢাকা ট্রিবিউনের সাংবাদিক রাব্বী রহমান জানান, নাজিম ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ছিলেন। যাত্রাবাড়ীর শ্যামপুর এলাকায় নাজিমের বাসা। তিনি তিন দিন আগেই সন্তানের বাবা হয়েছেন। তার স্ত্রী এখনো অসুস্থ। এমন পরিস্থিতি তারা নাজিম উদ্দিনের মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারেন। পরে তাদের অফিসের লোকজন হাসপাতালে ছুটে যায়।
নাজিম উদ্দিনের কয়েকজন বন্ধু জানান, ঢাকা ট্রিবিউনে চাকুরীর পাশাপাশি নাজিম উদ্দিন লালমোহন ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ঢাকায় বিভিন্ন চাকুরী ও কাজের সুবাধে থাকা লালমোহন উপজেলার লোকজনকে নিয়ে এ সংগঠন। তার গ্রামের বাড়ি ভোলার। নাজিম উদ্দিনের বাবার নাম। ৫ বোন ও ৩ ভাই এর মধ্যে নাজিম উদ্দিন ভাইদের বড়।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান বলেন, বিজ্ঞাপন কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় শ্রাবন বাসের চালক ওহিদুল ও মঞ্জিল বাসের হেলপার কামালকে থানায় রাখা হয়েছে। বাস দুটিও জব্দ করা হয়েছে। নাজিম উদ্দিনের ভায়রা এ ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা করেছেন। নাজিম উদ্দিনের মরদেহের ময়না তদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল দুপুরে নাজিম উদ্দিনের মরদেহ দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান ভোলা ৩ আসনের আওয়ামীলীগ দলীয় এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমান, লালমোহন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সভাপতি লেখক কালাম ফয়েজী, ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক হারুন অর রশিদসহ অনেকেই হাসপাতালে যান। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে প্রথম নামাজে যানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এমপি শাওনসহ নাজিমউদ্দিনের সহকর্মী ও বন্ধুরা জানাযায় অংশ নেন। নামাজে জাযানা শেষে তার মরদেহ গ্রামের লালমোহনে পাঠানো হয়। সেখানে শুক্রবার বেলা ১১টায় দ্বিতীয় জানাযা শেষে নাজিম উদ্দিনকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT