6:20 pm , May 16, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গত তিন দিন ধরে হাসপাতালের কোন কল থেকেই বের হচ্ছে না এক ফোটা পানি। শুধু বৃহত্তর এই হাসপাতালটিতেই নয়, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, ছাত্র-ছাত্রীদের ৮টি হোস্টেল, ডক্টর্স কোয়ার্টার সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিনটি বাস ভবনের কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না পানি। ফলে রোগী থেকে শুরু করে বসতঘর পর্যন্ত সর্বত্র পানির জন্য হাহাকার চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যান্ত্রির ত্রুটির কারনে পানির সরবরাহ বন্ধ ছিলো। এরই মধ্যে পাম্প মেশিন সংস্কার করে পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন গনপূর্ত বিভাগের মেডিকেল উপ-বিভাগের যান্ত্রিক শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফিরোজ আলম।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, একটি মাত্র সাবমার্সিবল পাম্প এর মাধ্যমে বৃহত্তর শেবাচিম হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ ও আইএইচটি সহ সংশ্লিষ্টদের বাসভবন ও ছাত্র এবং ছাত্রী নিবাসে পানি সরবরাহ করা হয়। ওই পাম্পটির বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় সময়েই পানির সংকট সৃষ্টি হয়। ঠিক তেমনি তিন দিন পূর্বে থেকে পানির অভাবে হাহাকার চলছে গোটা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ কম্পাউন্ডে।
গত সোমবার চিকিৎসা নিতে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বাকেরগঞ্জের নলুয়া গ্রামের বাসিন্দা আফসার আলী’র স্ত্রী তহমিনা বেগম জানান, সকালে তার স্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুপুরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে স্বামীকে হাসপাতালের বাথরুমে নিয়ে যান। কিন্তু কাজ শেষে কল ছেড়ে দেখতে পান পানি নেই। পরে পান করার জন্য বাহির থেকে কিনে আনা পানি দিয়েই কাজ করতে হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এমনি ভাবেই পানির চাহিদা মেটাতে হয়েছে তাকে।
হাসপাতালের প্রসুতি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন নবজাতকের জননী তাসলিমা বেগম’র বোন তানিয়া আক্তার বলেন, গত ৫ দিন পূর্বে আমার বোন সিজারিয়ানের মাধ্যমে একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। মা ও নবজাতকের চিকিৎসার স্বার্থে আমাদের পরিবারের অতিরিক্ত ৪ জনকে এই হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। বাড়ি দুরে হওয়ায় হাসপাতালেই রাত্রী যাপন করছি। কিন্তু এই হাসপাতালে পানির ব্যবস্থা থাকলেও তা পান করার উপযোগী নয়। সরবরাহ করা পানিতে যেমন ময়লা তেমনি বড় বড় কেচো ভাসছে। তাই শুধুমাত্র বাচ্চা ও তার মায়ের কাপর-চোপর ধোয়া-পাল্লা আর টয়লেটের কাজেই হাসপাতালের সাফলাই পানি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গত তিন দিন ধরে সেই পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থেকে হাসপাতালের সামনে থাকা টিউবওয়েল এর পানি এনে প্রয়োজনীয় কাজ করতে হয়েছে। এটা যে কতবড় ভোগান্তি তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়, বলে মন্তব্য করেন ওই তরুনী।
ঠিক একই পরিস্থিতি হাসপাতাল ও কলেজের আওতাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোয়ার্টার ও ছাত্রাবাস গুলোতে। বরিশাল মেডিকেল কলেজের নতুন ছাত্রীনিবাসের বাসিন্দা তন্নি বলেন, পানির সমস্যা যে কতটা ভয়ানক হয়, তা গত তিন দিনে হারে হারে বুঝতে পেরেছি। গোসল তো দুরের কথা পান করার পানিটুকুও বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। সরবরাহ’র পানি না থাকার বিষয়ে অধ্যক্ষ’র কাছে অভিযোগ দেয়ার পরেও বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পানির দেখা মেলেনি।
চতুর্থ শ্রেণি কোয়ার্টারের বাসিন্দা সর্দার মো. ইউনুস খান জানান, তাদের কোয়ার্টের মধ্যে সরবরাহের পানির বিকল্প স্বরুপ একটি মাত্র টিউবওয়েল রয়েছে। তার মধ্যে বর্তমান মৌসুমে সকাল ১০টার পরে বিকাল পর্যন্ত সেই টিউবওয়েলেও পানি উঠছে না। তার মধ্যে পানির সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গত তিনটা দিন সন্ধ্যার পরে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে একফোটা খাবার পানি আনতে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু দেখছি দেখা হচ্ছে বলে তারা সময়ক্ষেপন করে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে গনপূর্ত মেডিকেল উপ-বিভাগের যান্ত্রিক শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফিরোজ আলম বলেন, গত তিনদিন পূর্বে পানি উত্তোলনের যে প্রধান মটারটি রয়েছে তাতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এর ফলে সাফলাই’র পানি সর্বরাহ বন্ধ ছিলো। গত তিনদিন ধরেই সাবমার্সিবল মটরটি সংস্কারে কাজ করেছি। এমনকি তা বুধবার সমাধানও হয়েছে। মটারের ভুগর্ভে থাকা কলাম সরিয়ে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। এমনকি সন্ধ্যার পর পরই মটার চালু করে সেন্ট্রাল টেংকিতে পানি সরবরাহ শুরু হয়। সেন্ট্রাল টেংকি পরিপূর্ন হলে সেখান থেকে হাসপাতাল সহ পানি সরবরাহ হবে। আশা করা যাচ্ছে বুধবার রাতের মধ্যেই পানি পৌছে যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন গণপূর্ত বিভাগের ওই কর্মকর্তা।