বরিশাল-ঢাকা রুটে দিনে একাধিক ফ্লাইটের পরিকল্পনা বরিশাল-ঢাকা রুটে দিনে একাধিক ফ্লাইটের পরিকল্পনা - ajkerparibartan.com
বরিশাল-ঢাকা রুটে দিনে একাধিক ফ্লাইটের পরিকল্পনা

6:31 pm , May 8, 2018

মর্তুজা জুয়েল ॥ গত দুই যুগে আটবার বন্ধ থাকার পর বর্তমানে লাভজনক রুটে পরিণত হয়েছে ঢাকা-বরিশাল রুটে বিমান চলাচল। সপ্তাহে ছয়দিন সার্ভিস চালু থাকার পর এখন দিনে একাধিক ফ্লাইট চালু করার কথা ভাবছে বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ। এজন্য বিমান বন্দরের সাথে রানওয়ের এপ্রোন সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্দরের প্রকৌশল বিভাগ এপ্রোন সম্প্রসারণের জন্য কার্যক্রমের তালিকা তৈরি করে গতকাল মঙ্গলবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছে। বরিশাল বিমান বন্দর সূত্র জানায়, বর্তমানে ২৫০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২০০ ফুট প্রস্থের এপ্রোন বন্দরকে রানওয়ের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এপ্রোনের সঙ্গে আরো ২৫০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২০০ ফুট প্রস্থের এপ্রোন সম্প্রসারণ করা হবে। এজন্য ব্যয় হবে প্রায় ৫ কোটি টাকা। বন্দরের ব্যবস্থাপক মো. হানিফ গাজী জানান, বর্তমানে যে পরিধির এ্যাপ্রোন রয়েছে তাতে ২টি বিমান সর্বোচ্চ মুভমেন্ট করতে পারবে। এপ্রোন সম্প্রসারণ করা হলে নির্বিঘেœ একসাথে একাধিক বিমান চলাচল করতে পারবে। অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা থাকার কারণে এখানে বর্তমানে একাধিক ফ্লাইট পরিচালনার সময় এসে গেছে। বাংলাদেশ বিমানের প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, মঙ্গলবার এপ্রোন সম্প্রসারণের কার্যক্রমের তালিকা তৈরি করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। তিনি আরো জানান, বরিশাল বিমান বন্দরের বর্তমান এপ্রোন ৬০/৬৫ আসনের ড্যাশ-৮ বিমান চলাচলের উপযোগী। তবে এপ্রোন দ্বিগুণ করা হলে একসাথে এ ধরণের আরো বিমান চলাচল করতে পারবে। এদিকে বর্তমানে বন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ফুট থেকে সম্প্রসারণ করে ৮ হাজার ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে করায় পরিকল্পনা রয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের। আগামি দুই বছরের মধ্যে এজন্য পদক্ষেপ শুরু করা হবে এল জানিয়েছে বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা। রানওয়ের দৈর্ঘ্য আরো ২ হাজার ৫০০ ফুট সম্প্রসারণ করা হলে এখানে ৭৩৭ মডেলের ১৫০ আসনের বিমান অবতরণ করতে পারবে। এজন্য বন্দরকে পেভমেন্ট ক্ল্যাসিফিকেশন নম্বরের আওতায় আনা হবে। তবে বন্দরের এক প্রান্তে নদী ও অপর প্রান্তে সড়ক থাকার কারণে রানওয়ের দৈঘ্য ৮ হাজার ৫০০ ফুটের বেশি সম্প্রসারণ করার কোন সম্ভাবনা নেই বলেও জানা গেছে।
এদিকে প্রতিনিয়ত বন্দরের যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান সপ্তাহে ৩ দিন এবং বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ইউএস বাংলা সপ্তাহে ৩ দিন করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। প্রতিদিনই বিমানের প্রতিটি আসন পরিপূর্ণ থাকায় যাত্রীদের আগেই টিকেট বুকিং করতে হচ্ছে। আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় প্রতিদিনই অনেক যাত্রী টিকেট বঞ্চিত হচ্ছেন। এসকল যাত্রীরা দিনে একাধিক ফ্লাইট ও রাতে ফ্লাইট চালুর দাবি জানান। এদিকে দক্ষিণাঞ্চলে পায়রা সমুদ্র বন্দর, একাধিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেল সংযোগ ও ৪ লেন মহাসড়ক সহ একাধিক বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকায় প্রতিদিন দাতা সংস্থা, বিদেশী প্রকৌশলী ও গবেষকরা যাতায়াত করেছেন। এ সকল যাত্রীরা বিমান পরিবহন ও বন্দরের সেবার মান আরো বৃদ্ধি করার দাবি জানান।
পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করতে আসা চীনা প্রকৌশলী লী কুয়াং বলেন, এ রুটে বিমান চলাচল বেশ আরামদায়ক এবং বন্দরের পরিবেশ নিরাপদ মনে হচ্ছে। আমি এখন ঢাকায় যাব এবং আজই চট্টগ্রামে একটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করবো। ফলে বিমান চলাচল ছাড়া কোন উপায় নেই। এটা এখন প্রয়োজন।
অপর যাত্রী মনির হোসেন বলেন, একাধিক বিমান থাকলে অনেক যাত্রী চলাচল করতে পারবে। কিন্তু দৈনিক ফ্লাইট একটি হওয়ায় যাত্রীরা সময়মত যেতে না পেরে পরের দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ, বাথরুম সহ অন্যান্য স্থাপনা আরো আধুনিক করা প্রয়োজন।
বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক মো. হানিফ গাজি বলেন, বর্তমানে বন্দরের এপ্রোনের পরিধি অনুযায়ী দুইটি বিমান চলাচল করা উপযোগী। বন্দরের একাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য এখানে সকল ধরণের সুযোগ রয়েছে। ফ্লাইট বৃদ্ধি করা হলে পরিচালনা করতে কোন অসুবিধা নেই। তবে এপ্রোন সম্প্রসারণ করা হলে প্রতিদিন একসাথে একাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করে সম্ভব হবে। এদিকে পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৯৫ সালের ১৭ জুলাই এরোবেঙ্গল এয়ারলাইন্স প্রথম বিমান চলাচল আরম্ভ করে। এরপর ১৯৯৬ সালের ১ আগস্ট পারাবাত এয়ারলাইন্স, ১৯৯৮ সালের জুন মাসে জিএমজি এয়ারলাইন্স, ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে বিমান বাংলাদেশ, এয়ারলাইন্স, ২০০৩ সালে পুনরায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, ২০১৩ সালের ২৫ এপ্রিল পুনরায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, ২০১৬ সালের ২ এপ্রিল নভোএয়ার বিমান চলাচল কার্যক্রম চালু করে। কিন্তু কোন কোম্পানির সার্ভিসই একটানা ৬ মাসের বেশি স্থায়ী হয়নি। বিরতি দিয়ে এ কোম্পানিগুলো একাধিকবার বিমান চলাচল কার্যক্রম চালু করার চেষ্টা করলেও বিভিন্ন সংকটের কারণে তা চালু রাখা সম্ভব হয়নি। তবে ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ বিমান এবং ২০১৫ সালের ১০ জুলাই ইউএস বাংলা এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট চালু সপ্তাহে ২দিন করে চলাচল করার পর বর্তমানে পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে লাভের মুখ দেখছে। বিমান বন্দরের এপ্রোন সম্প্রসারণ করা হলে একাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করবে ২টি কোম্পানি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT