6:32 pm , May 7, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক বাবুগঞ্জের কৃতি সন্তান আল নাহিয়ান খান জয়। তিনি আসন্ন কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। আগামী ১১ ও ১২ এপ্রিল সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি পদে জয়ের নামটিই উঠে আসবে বলে স্বপ্ন দেখছেন গোটা বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলবাসী। তাদের সেই স্বপ্ন পুরনে এরই মধ্যে লিফলেট, ব্যানার, পোষ্টার এর ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে গোটা বরিশাল বিভাগ। বরিশালের প্রতিটি স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে নথুল্লাবাদ থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে চোখে পড়ে যায় ব্যানার, পোষ্টার আর বিলবোর্ড। যাতে তুলে ধরা হয়েছে বরিশালবাসির এক দফা এক দাবী। সে দাবীটি হলো আল নাহিয়ান খান জয়কে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি পদে চাই। এক কথায় জয়কে নিয়ে উন্মাদনায় মেতে আছেন বরিশালবাসি।
কিন্তু যেখানে পুরো বরিশালবাসি জয়ের শ্লোগান দিচ্ছে সেখানে জয়ের বিরোধীতা করছে একই দলের নেতা এক জনপ্রতিনিধি। যিনি নিজের অস্বিত্বের জানান দিতে জয় ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ সেই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে রয়েছে এন্তার অভিযোগ। জাতীয় পার্টি এবং পরে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে উড়ে এসে জুড়ে বসা ওই নেতা’র বিরুদ্ধাচারণের ফলে ক্ষুব্ধ পুরো বরিশালবাসি।
জানাগেছে, বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলী খান এর ছেলে আল নাহিয়ান খান জয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে বাবার হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন তিনি। বরিশাল জিলা স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি দেয়া জয় উপজেলা ছাত্রলীগেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তাছাড়া ঢাকায় লেখাপড়া করার সুবাদে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অবস্থান কনে নেন তিনি। এসএসসি পাশ করে ঢাকা কমার্স কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন জয়। তার দক্ষ নেতৃত্বের কারনেই এই কলেজে ছাত্রলীগের কার্যক্রম অনেকটা এগিয়ে যায়।
এদিকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন আল নাহিয়ান খান জয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ছাত্রলীগের উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করেন। এর পর পরই তার ডাক আসে কেন্দ্রীয় কমিটিতে। আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে নিজের অবস্থান সৃষ্টি করে নেন জয়।
ছোটবেলা থেকেই মেধাবী জয় ঢাবি’র ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় ১৬তম স্থান লাভ করেছিল বলে জানা যায়। বর্তমানে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। সাহসিকতা নিয়ে হরতাল প্রতিরোধ এবং পিকেটারদের ককটেল বোমাসহ ধরিয়ে দেওয়ায় ২০১৫ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) থেকে পুরস্কার লাভ করেছিল সে। সঙ্গে সঙ্গেই সেই পুরস্কারের অর্থ বার্ণ ইউনিটে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ অসহায় মানুষের চিকিৎসার্থে দান করেছিল সে।
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান জয়ের পূর্ব পুরুষ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তার বাবা আব্দুল আলীম খানের হাতে উপজেলা ছাত্রলীগ এর পথচলা। এরপর উপজেলা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯ নম্বর সেক্টরের কার্যক্রম আল-নাহিয়ান খান জয়ের ঘরে বসেই হতো। ফুফু উপজেলা আওয়ামী মহিলা লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ মুন্না বলেন, আল-নাহিয়ান খান জয় আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আমরা স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। তিনি ছাত্রলীগের একজন লড়াকু সৈনিক। বরিশালের সন্তান হিসেবে তিনি আমাদের গর্ব। তাই আমরা চাই তিনি সংগঠনের নেতৃত্বে আসুক।
বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, জয়কে নিয়ে বরিশালবাসী গর্বিত। তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলো। তারমতো নেতৃত্ব ছাত্রলীগে প্রয়োজন। তারপরও নেত্রীই বিবেচনা করবেন সংগঠনের নেতৃত্ব কার হাতে দিবেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুল জীবন থেকে মেধাবী আল নাহিয়ান খান জয়’র বিষয়ে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট পৌছে গেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। যতটুকু জানাগেছে ওই প্রতিবেদন জয়ের পক্ষেই রয়েছে। কিন্তু এতো কিছুর পরেও কিছু সমর্থক নিয়ে জয়ের বিরুদ্ধাচারন করছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা। যিনি নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে জয় যাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হতে না পারে সে জন্য কেন্দ্রে বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের কাছে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অবশ্য এই অপপ্রচার শুধু বর্তমান সময়েই নয়, ইতিপূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার সময়েও চালানো হয়েছিল। অথচ তিনি নিজেই এক সময় বিএনপি ও জাতীয় পার্টি’র নেতা ছিলেন। ১৯৮৯-৯০ সালে আবুল কালাম ডিগ্রি কলেজে জাতীয় পার্টির ছাত্র সমাজ এর নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৯১ সালে থানা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা নান্নার সহযোগী হিসেবে বিএনপি’র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন তিনি। এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, আল নাহিয়ান খান জয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হলে স্থানীয় পর্যায়ে ঐ নেতার অবস্থান শূণ্যের কোটায় নেমে আসবে। ভবিষ্যতে এমপি হওয়ার স্বপ্ন পুরন হবে না এমন আশংকায় জয়ের পেছনে ছুটছেন তিনি।