5:43 pm , May 6, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ এসএসসি’র পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ায় নগরীর জগদ্বীশ স্বারস্বত বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে তার কক্ষে তালা ঝুলিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। গতকাল রোববার দুপুরে পরীক্ষার ঘোষিত ফলাফলে বিপর্যয় দেখে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। এ সময় তারা বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা জানান, দুপুর ১টার পরে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে দেয়ালে পরীক্ষার ফলাফলের সিট ঝুলিয়ে দেয়া হয়। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা অনেক আগ্রহ নিয়ে ফলাফল জানতে বিদ্যালয়ে আসে। এসময় কিছু শিক্ষার্থী ওই ফলাফল দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। ওইসব শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেকেই অকৃতকার্য এবং আশানুরুপ ফলাফল করতে পারেনি। এর ফলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকরাও ক্ষুব্ধ হন। তাৎক্ষনিক স্কুল ক্যাম্পাসের মধ্যে বিক্ষোভ করে। ফলাফল খারাপ হওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে দায়ী করে তার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এসময় প্রধান শিক্ষক কক্ষে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি শান্ত করে।
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হওয়া জগদ্বীশ স্বারস্বত বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর বাবা আফজাল হোসেন অভিযোগ করেন, পরীক্ষার পূর্বে বিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাশ করানো হয়নি। অথচ কোচিং ক্লাশের নাম করে প্রতিজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা করে আদায় করেছেন প্রধান শিক্ষক। স্কুল কলেজের শিক্ষকদের বাদ দিয়ে বাইরে থেকে বিভিন্ন কলেজের ছাত্রদের এনে পরীক্ষার্থীদের কোচিং করিয়েছেন তিনি। যাদের দ্বারা কোচিং করানো হয়েছে তারা নিজেরাই সৃজনশীলের বিষয়ে কিছুই জানেন না। যে কারনে শিক্ষার্থীদেরও পাঠদান করতে পারেনি। তাই এসএসসি’র ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জগদ্বীশ স্বারস্বত বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মজিদ ফলাফল বিপর্যয়ের দায়ভার গ্রহনে আপত্তি প্রকাশ করে বলেন, পরীক্ষার পূর্বে বিদ্যালয়ে বিশেষ ক্লাশ কোচিং করানো হয়েছে এটা সত্যি। তবে সেটা বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা করায়নি। প্রধান শিক্ষক বাইরে থেকে বিভিন্ন কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের এনে করিয়েছে। কেননা প্রধান শিক্ষকের হিসাব অনুযায়ী আমরা অজ্ঞ।
অপর সহকারী শিক্ষক এমদাদুল্লাহ বলেন, ইতিপূর্বে আমাদের এই স্কুলে পরীক্ষার ফলাফল ভালো ছিলো। এবার যে ফলাফল তা বিদ্যালয়ের জন্যও লজ্জাজনক। কেননা গত বছর আমাদের এই স্কুল থেকে ২শ’র মতো শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছিলো। যাদের মধ্যে মাত্র ১৮ জন ফেল করেছিলো। বাকিরা সবাই কৃতকার্য এমনকি ১৮টি জিপিএ-৫ পেয়েছিলো। কিন্তু এবারের ফলাফলের সাথে পূর্বের ফলাফলের আকাশ-পাতাল ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। কেননা এ বছর পরিক্ষার্থীর সংখ্যা কম ছিলো। পরীক্ষায় অংশ নেয়া ১৮৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৬ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্জ হয়েছেন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৪ জন।
এদিকে ফলাফল বিপর্যায়ের অভিযোগ অযৌক্তিক বলে দাবী করেছেন জগদ্বীশ স্বারস্বত বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ্ আলম। তিনি বলেন, মাত্র চার মাস হয়েছে যোগদান করেছি। এসেই দেখতে পাই তেমন কোন শিক্ষার্থীরাই নেই যারা এ প্লাস পাওয়ার যোগ্য। এজন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা এবং পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বাড়তি নজর দিতেই কোচিং এর ব্যবস্থা করা হয়। সর্বোপরি পরীক্ষায় যে ফলাফল এসেছে তা সন্তোষজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অবশ্য নিজে অবরুদ্ধ থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক বলেন, ফলাফল খারাপ হওয়ায় কিছু শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে আমার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ওই সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তাই আমাকে অবরুদ্ধ রাখার বিষয়টিও সঠিক নয়। এমনকি কোচিং ক্লাশ করানোর জন্য ১৫শত টাকা করে আদায়ের যে অভিযোগ উঠেছে তাও সত্যি নয় বলে দাবী করেছেন প্রধান শিক্ষক।