5:42 pm , May 6, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ এসএসসি’র পরীক্ষার ঘোষিত ফলাফলে এবার বরিশাল বোর্ডে পাসের হার কমেছে। তবে বেড়েছে জিপিএ ৫ এর সংখ্যা। এবারে বরিশাল বোর্ডে মোট পাশের হার ৭৭ দশমিক ১১ ভাগ। যা গত বছর ছিলো ৭৭ দশমিক ২৪ ভাগ। এবারে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৪৬২ জন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত তিন বছরের মধ্যে এবারে রেকর্ড সংখ্যক পরীক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। গত বছরের জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ হাজার ২৮৮ জন। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১১৩ জন। ঘোষিত ফলাফলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এবারে মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ছেলেরা পেয়েছে ১ হাজার ৬৬১ জন ও মেয়েরা পেয়েছে ১ হাজার ৮০১ জন।
বোর্ডে সেরা ভোলা
এসএসসি’র ফলাফলে বরিশাল বোর্ডে পাশের হারে এগিয়ে ভোলা জেলা। এ জেলার পাশের হার ৮৩ দশমিক ০২ ভাগ। তবে গত বছর ভোলা জেলা পাশের হারে সর্বনি¤œ ছিল। গত বছর এ জেলার পাশের হার ছিল ৭০ দশমিক ৫৮ ভাগ। এ বছর ভোলা জেলায় ১৯৩ স্কুলের পরীক্ষায় মোট অংশগ্রহন করেন ১৫ হাজার ৬১৭ জন। যার মধ্যে ছেলে ৮ হাজার ৬০৪, মেয়ে ৭ হাজার ১৩ জন। পাশ করেছে ১২ হাজার ৯৬৫ জন। যার মধ্যে ছেলে ৭ হাজার ৩৭ ও মেয়ে ৫ হাজার ৯২৮ জন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বরগুনা জেলা। পাশের হাড় ৮১.৭০ ভাগ। এ জেলায় ১১ হাজার ২৩৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করছেনে ৯ হাজার ১৮২ জন। পাশের মধ্যে ছেলে ৪ হাজার ৬১৩ জন ও মেয়ে ৪ হাজার ৫৬৯ জন। এদিকে গত বছরের মতো এবারেও তৃতীয় স্থানে রয়েছে পিরোজপুর জেলা। এ জেলায় ১২ হাজার ৭০০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করছেনে ১০ হাজার ২৫২ জন। পাশের মধ্যে ছেলে ৪ হাজার ৬২২ জন ও মেয়ে ৫ হাজার ৬৩০ জন। এ জেলার পাশের হাড় ৮০ দশমিক ৭২ ভাগ। অপরদিকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে বরিশাল জেলা। এ জেলায় ৩৫ হাজার ২৪১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করছেনে ২৭ হাজার ১১৭ জন। পাশের মধ্যে ছেলে ১২ হাজার ৮৭৭ জন ও মেয়ে ১৪ হাজার ২৪০ জন। এ জেলার পাশের হাড় ৭৬.৯৫ ভাগ। পঞ্চম স্থানে রয়েছে পটুয়াখালী জেলা। এ জেলায় ১৯ হাজার ১৫৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করছেনে ১৪ হাজার ২৯৩ জন। পাশের মধ্যে ছেলে ৭ হাজার ৪১৭ জন ও মেয়ে ৬ হাজার ৮৭৬ জন। এ জেলার পাশের হাড় ৭৬.৬২ ভাগ। আর গতবছরের শীর্ষ স্থানে থাকা ঝালকাঠি জেলা এবারে ৬২ দশমিক ২৫ ভাগ পাশের হারে সবার শেষে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। এ জেলায় ৯ হাজার ১৭৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করছেনে ৫ হাজার ৭১১ জন। পাশের মধ্যে ছেলে ২ হাজার ৪৮৫ জন ও মেয়ে ৩ হাজার ২২৬ জন। গত বছর এ জেলার পাশের হাড় ৮২.৭৮ ভাগ ছিলো।
শতভাগ পাশ ৫০ বিদ্যালয়ের ॥ কেউ পাশ করেনি ৩ বিদ্যালয়ে
বোর্ডে তিনটি বিদ্যালয়ের কোন পরীক্ষার্থীই পাশ করতে পারেনি। এরমধ্যে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ইসলামপুর সেকেন্ডারি স্কুল ও ভেরন বাড়িয়া সি.এস.ইউ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং পটুয়াখালীর উত্তর মৌকরণ এএইচ সেকেন্ডারি বিদ্যালয়। এই তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ইসলামপুর সেকেন্ডারি স্কুলের ১৭ জন ও ভেরন বাড়িয়া সি.এস.ইউ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫ জন এবং পটুয়াখালী সদরের উত্তর মৌকরণ এএইচ সেকেন্ডারি বিদ্যালয়ের ৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মোঃ আনোয়ারুল আজিম জানান, ৩ টি বিদ্যালয়ে যেমন কেউ পাশ করেনি তেমনি বোর্ডে ৫০ টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাশ করেছে। যারমধ্যে বরিশাল জেলায় সর্বোচ্চ ১৬ টি, এরপর বরগুনায় ১১ টি, ভোলায় ১০ টি, পটুয়াখালীতে ৬ টি, পিরোজপুরে ৪ টি ও ঝালকাঠিতে ৩ টি বিদ্যালয় রয়েছে।
কমছে পাসের হার
বরিশাল বোর্ডে কমছে পাশের হার। ২০১৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এ ধারা অব্যাহত থেকে এবারে বরিশাল বোর্ডে মোট পাশের হার গিয়ে দাড়িয়েছে ৭৭ দশমিক ১১ ভাগে, যা গত বছর ছিলো ৭৭ দশমিক ২৪ ভাগ। বিগত বছরের ফলাফলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালে পাশের হার ছিলো ৯০ দশমিক ৬৬ ভাগ এরপরে ২০১৫ সালে ৬ দশমিক ২৯ ভাগ কমে পাশের হার দাড়ায় ৮৪ দশমিক ৩৭ ভাগে। আর ২০১৫ সালের চেয়ে ৪ দশমিক ৯৬ ভাগ কমে ২০১৬ সালে দাড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৪১ ভাগে। যা আরো ২.১৭ ভাগ কমে এ বছর ২০১৭ সালে দাড়িয়েছে ৭৭ দশমিক ২৪। সর্বোশেষ ২০১৭ সালের থেকে দশমিক ১৩ ভাগ কমে ২০১৮ সালে দাড়িয়েছে ৭৭ দশমিক ১১ ভাগে।
এদিকে এ বছরে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পেয়েছে বিজ্ঞান বিভাগে ৩ হাজার ২২৪ জন, আর মানবিক বিভাগে ১০৬ জন ও বানিজ্য বিভাগে পেয়েছে ১২৮ জন। তবে বিগত সময়ের চেয়ে এ বছরে এসএসসিতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো বেশি। এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো ১ লাখ ৩ হাজার ১২৪ জন। যার মধ্যে ছাত্র ৫১হাজার ৯১২ জন এবং ছাত্রী ছিলো ৫১ হাজার ২১২ জন। এবছর ১০৩ জন পরীক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছেন, যা গত বছর ছিলো ৩৯ জন। এ বছর মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ২৭ হাজার ৪১ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহন করে পাশ করেছেন ২৪ হাজার ২৫৫ জন। মানবিক বিভাগে ৪৭ হাজার ৩৭৪ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহন করে পাশ করেছেন ৩২ হাজার ৫৪১ জন। বানিজ্য বিভাগে ২৮ হাজার ৭০৯ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহন করে পাশ করেছেন ২২ হাজার ৭২৪ জন।
এ বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আনোয়ারুল আজিম জানান, এ বছর গনিত ও ইংরেজীতে পরীক্ষার্থীরা তুলনামূলক খারাপ করেছে। গণিত শিক্ষকের অপ্রতুল হওয়ায় এমনটা হতে পারে। পাশাপাশি মফস্বলে বিজ্ঞানের শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। তিনি বলেন, মেয়েদর ভালো করার পেছনে বৃত্তি ও নিয়মিতো বিদ্যালয়ে উপস্থিতির বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। পাশাপাশি মেয়েরা বাড়িতে সময় বেশি দিয়ে থাকে।