দেশে সয়াবিন-সূর্যমুখির আবাদ বাড়ছে না দেশে সয়াবিন-সূর্যমুখির আবাদ বাড়ছে না - ajkerparibartan.com
দেশে সয়াবিন-সূর্যমুখির আবাদ বাড়ছে না

6:13 pm , May 2, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিপনন ব্যবস্থার অভাব সহ উন্নত প্রযুক্তির জ্ঞানের অভাবে দেশে বিপুল সম্ভবনাময় সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেল বীজের আবাদ ও উৎপাদেনের কাঙ্খিত সম্প্রসারন ঘটছে না। এমনকি পরিবেশগত কিছু সমস্যার কারনেও সূর্যমূখীর আবাদে কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল মহল। অথচ এ দুটি তেলবীজেরই যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে দেশে। সয়াবিন ও সূর্যমূখী তেল জনস্বাস্থ্যের জন্যও যথেষ্ট উপকারী। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে সয়াবিনে ৪০-৪৫% আমিষ এবং ১৯-২২% পর্যন্ত তেল থাকে। যেকোন ডাল বা শুটি জাতীয় শস্যের তুলনায় সয়াবিনে আমিষের পরিমাণ যথেষ্ট বেশী। অথচ দাম কম। অপরদিকে সূর্যমুখী একটি অত্যন্ত উৎকৃষ্ট তেল ফসল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর বাণিজ্যিক আবাদ হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। সূর্যমুখীর বীজে ৪০-৪৫% পর্যন্ত লিনোলিক এসিড রয়েছে, অথচ এ তেলে কোন ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই। হেক্টর প্রতি ফলন ১.৭ থেকে ১.৯ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
দেশে বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ৭ লাখ টনের মত বিভিন্ন ধরনের তেল বীজ উৎপাদন হলেও তা চাহিদার এক-তৃতীয়াংশের বেশী নয়। ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমান ভোজ্যতেল ও তেলবীজ বিদেশ থেকে আমদানী করতে গিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এসব বিবেচনায় সয়াবিন-এর আবাদ সম্প্রসারনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এখনো দেশে যে পরিমান ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে, তার প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশী সয়াবিন তেলের। যার প্রায় পুরোটাই আমদানী নির্ভর। কারণ দেশে আবাদকৃত প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে যে প্রায় দেড় লাখ টনের মত সয়াবিন তেল বীজ উৎপাদন হচ্ছে, তার পুরোটাই চলে যাচ্ছে পোল্ট্রি ফিডের কারখানায়। কৃষি মন্ত্রণালয় চলতি মৌসুমে দেশে প্রায় ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও তা অর্জিত হয়নি। ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে চলতি মৌসুমে দেশে ৭৬ হাজার হেক্টরের মত জমিতে সয়াবিন তেল বীজের আবাদ হয়েছে। ফলে দেড় লাখ টন সয়াবিন তেল বীজ উৎপাদন লক্ষ্যে পৌঁছান সম্ভব হচ্ছে না।
‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি’ ইতোমধ্যে উন্নত প্রযুক্তির ও উচ্চ ফলনশীল প্রায় ৪০টি জাতের বিভিন্ন তেল বীজ উদ্ভাবন করেছে। যার মধ্যে সয়াবিনের ৬টি এবং সূর্যমুখীর দুটি জাত রয়েছে। বারি ইতোমধ্যে ‘সোহাগ-পিবি-১’, ‘বাংলাদেশ সয়াবিন-৪ বা জি-২’, ‘বারি সয়াবিন-৫’ ও ‘বারি সয়াবিন-৬’ নামের একাধিক উন্নতজাত উদ্ভাবন করেছে। এসব উন্নতজাতের সয়াবিনের ফলন হেক্টর প্রতি ১.৮০ টন থেকে সোয়া দুই টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। দোআঁশ, বেলে দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটি সয়াবিন চাষের উপযোগী।
কোন ভোজ্য তেল কল প্রতিষ্ঠান দেশে উৎপাদিত সয়াবিন তেল বীজ কৃষক বা পাইকারী পর্যায়ে না কেনায় দেশে উৎপাদিত প্রায় দেড় লাখ টন সয়াবিন তেল বীজের পুরোটাই চলে যাচ্ছে পোল্ট্রি ফিডের কারখানায়। বিভিন্ন পোল্ট্রি ফিড কারখানার নিয়োজিত ফরিয়ারারা বরিশাল সহ উপকূলীয় এলাকার মাঠ পর্যায়ে সয়াবীন তেল বীজ কিনে নিচ্ছে অনেকটা পানির দরে।
অপরদিকে ১৯৭৫ সাল থেকে দেশের উপকূলীয় এলাকার বরিশাল, পটুয়াখালী ছাড়াও রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর, দিনাজপুর, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমূখীর পরীক্ষামূলক আবাদ হলেও দীর্ঘ চার দশকেও তার কোন সম্প্রসারন ঘটেনি। বাস্তবে এখনো দেশে সূর্যমুখী তেল-এর তেমন কোন বাণিজ্যিক উৎপাদনই হচ্ছে না। ফলে অত্যন্ত সম্ভবনাময় এ তেল বীজের আবাদ ও উৎপাদনও বাড়ছে না। সূর্যমুখীর বীজ-এর বিপনন সুবিধা না থাকায় কৃষকের আগ্রহের অভাবে ডিএই’র মাঠ পর্যায়ে এ তেলবীজ আবাদ ও উৎপাদনে তেমন কোন সম্প্রসারন কার্যক্রমও নেই। বছর কয়েক আগে কয়েকটি এনজিও সূর্যমূখী আবাদে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকদের মাঝে বীজ সরবরাহ করলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফলন সংকট সহ বিপনন ব্যবস্থার অভাবে পরবর্তিতে তার কোন সম্প্রসারন ঘটেনি। গত বছর অতিবর্ষইে দক্ষিণাঞ্চলে আবাদকৃত প্রায় ষোল আনা সূর্যমূখীর উৎপাদনই বিপর্যয়ের কবলে পড়ে। এছাড়া প্রতি বছরই আবাদকৃত জমির সূর্যমুখী ফুলের বাগানে টিয়া পাখির আক্রমনে এ তেলবীজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষক টিয়ার আক্রমন বাঁচিয়ে বীজ ঘরে তুলতে পারছে না। এ বিষয়টিও সূর্যমুখী আবাদে কৃষকের আগ্রহ হৃাস পাচ্ছে।
চলতি মৌসুমে সারাদেশে মাত্র ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমূখীর আবাদ লক্ষত স্থির করা হলেও বাস্তবে মাত্র ২ হাজার ৪৯ হেক্টরে এ তেলবীজের আবাদ হয়েছে। ফলে মাত্র ৯ হাজার টন সূর্যমুখী তেল বীজ উৎপদন লক্ষেত প্ৗেছানও সম্ভব হচ্ছে না। বারি এ পর্যন্ত ‘কেরানী-ডিএস-১’ ও ‘বারি সূর্যমুখী-২’ নামের দুটি উন্নত জাতের সূর্যমুখী ফুলের জাত উদ্ভাবন করলেও কৃষক পর্যায়ে তার তেমন কোন সম্প্রসারন ঘটেনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT