চার মাসে বিভাগে অর্ধশত ধর্ষণ চার মাসে বিভাগে অর্ধশত ধর্ষণ - ajkerparibartan.com
চার মাসে বিভাগে অর্ধশত ধর্ষণ

5:47 pm , April 29, 2018

সাইদ মেমন/ওয়াহিদ রাসেল ॥ বরিশাল নগরীসহ বিভাগে আশংকাজনকহারে বেড়েছে ধর্ষণের ঘটনা। এর মধ্যে শিশু কন্যা ধর্ষণের ঘটনাই বেশি ঘটেছে। মানুষরুপী পশুরা শুধু ধর্ষণ করেনি, নির্মমভাবে ধর্ষিত শিশু কন্যাকে হত্যাও করেছে। বর্তমানে শিশু, কিশোরী, তরুনী, যুবতী ও নারীরা পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশিদের কাছেও নিরাপদ নয়। বেশিরভাগ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে পরিচিতজনদের মাধ্যমে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ধর্ষণের শিকার হয়েছে শিক্ষিকা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র অনুযায়ী, গত চার মাসে নগরীসহ বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় অর্ধশত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনাও। পুলিশের ওয়েব সাইটে দেয়া তথ্য সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মাসে বরিশাল রেঞ্জে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৩১১টি। গত পাঁচ বছরে ৫ হাজার ৬৮০টি মামলা। ওই হিসেবে গত পাঁচ বছর তিন মাসে মামলা হয়েছে ৫ হাজার ৯৯১টি। বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালেও ২ হাজারের অধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বাড়ার কারন হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও অভিভাবকদের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। এছাড়াও সচেতনরা দাবী করেছেন, এসব মামলার বিচার কার্যে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা, ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় থাকা, সামাজিক ও পারিবারিক সহযোগিতার অভাব ধর্ষণ এবং নির্যাতনের ঘটনা বাড়ার কারন। এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগি অধ্যাপক অসীম কুমার নন্দী বলেন, নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা এখন শুধু একটি এলাকার নয়, এটা এখন আঞ্চলিক ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে। এর জন্য তিনি প্রথমত দায়ী করেছেন সোশ্যাল মিডিয়াকে। এরপর রয়েছে স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেট এবং শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার পরিবেশের ও অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব। তিনি বলেন, এখন সবাই ব্যাপক হারে সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর হয়ে পড়েছে। এর মাধ্যমে সহজেই একজন অশ্লীল ও পর্ণগ্রাফির সাথে সংযুক্ত হচ্ছে। স্মার্ট ফোনে ইন্টারনেট এটাকে আরো অবাধ ও সহজ করেছে। এসব অশ্লীল ও পর্ণগ্রাফির সাথে যুক্ত হওয়ার কারনে শিশু, কিশোর, তরুন, যুবক থেকে শুরু করে মধ্য বয়সীদের মাঝে সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় মুল্যবোধের বিধি নিষেধ কমে যায়। যার কারনে এসব ঘটনা ঘটছে।
সহযোগি অধ্যাপক অসীম কুমার নন্দী আরো বলেন, এখন শিশু কিশোরদের কাছে স্মার্ট ফোন রয়েছে। তাদের খেলাধুলার পরিবেশ কমে যাওয়ায় তারা এখন সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের উপর বেশির ভাগ সময় কাটায়। এতেও তারা বিকৃত মানসিকতায় গড়ে উঠছে। তাদের কাছে বিষয়টি স্বাভাবিক মনে হওয়ায় তারা এসব কাজে জড়িয়ে পড়ছে।
এই জন্য বাবা-মা ভাইবোনদের সচেতন হওয়া জরুরী জানিয়ে বলেন, সন্তানরা কখন কোথায় কাদের সাথে সঙ্গ দেয়। সেই বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। এছাড়াও সন্তানদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরন করে সব সময় তাদের সাথে আলোচনা করা উচিত। সন্তানদের ধর্মীয় ও সামাজিক মুল্যবোধ শিক্ষা দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
বাবা-মায়ের অতিরিক্ত টিভি সিরিয়াল প্রীতি ও সন্তানদের প্রতি খোঁজ না রাখার জন্য তারা অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) গিয়াসউদ্দিন কাবুল বলেন, বেশির ভাগ ঘটনার শিকার পরিবার ও আসামিরা সমঝোতা করে। তাই বিচারে জড়িতরা শাস্তি পায় না। এছাড়াও বিচারক সমস্যা, প্রতিবেদন পেতে দেরী হওয়ার কারনে মামলার প্রতি খেয়াল বা আগ্রহ কমে যায়। বিচার কাজ শুরু হলেও মামলার স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য দিতে না আসার কারনে বিচারকাজ বিলম্বিত হয়। এই কারনে জড়িতরা পার পেয়ে যাচ্ছে। জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিতে হলে বাদীদের কঠোর হতে হবে।
প্রকাশিত সংবাদের সুত্র অনুযায়ী, গত ১১ মার্চ নগরীর পূর্ব গণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রীকে ধর্ষণ’র পর হত্যা করে লাশ বস্তায় ভরে কবরস্থানে ফেলে রাখা হয়। ধর্ষক আবুল কালাম আজাদ কালু সকল কিছু স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারী বাকেরগঞ্জের নারাঙ্গল গ্রামে দশম শ্রেনীর ছাত্রীকে গনধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা রেশ কাটতে না কাটতেই ১৮ মার্চ রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের মঙ্গলহাটা গ্রামে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে একই গ্রামের বাসিন্দা সাহেব আলীর ছেলে ও দিনমজুর শামীমকে আটক করে স্থানীয়রা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে। একইভাবে গত ২২ এপ্রিল নগরীর রূপাতলী এলাকায় ৫ বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টায় যৌন নিপিড়নের অভিযোগে গ্যাসটারবাইন এলাকার মিন্টু মুন্সির বাড়ির ভাড়াটিয়া ফারুক মোল্লার ছেলে খোকন মোল্লাকে গনধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। এর আগে গত ৬ মার্চ উজিরপুরে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় জনতা। গত ১৬ মার্চ গৌরনদীর মাহিলাড়া গ্রামের দিনমজুরের সাত বছরের কন্যাকে বাগানের নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে প্রতিবেশি দাদন আলী মৃধার বখাটে ছেলে জালাল মৃধা (২০)। গত ১০ এপ্রিল আমতলীর আরপাঙ্গাশিয়া বাজারে শিশু ছাত্রী ধর্ষক মুদী দোকানী জাকির গ্রেপ্তার হয়। গত ৪ মার্চ দৌলতখানে শিশু কন্যা ধর্ষণ করে দোকানী দুলাল। ৭ মার্চ গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ইল্লা গ্রামের ৬৫ বছরের বৃদ্ধা ধর্ষণের শিকার ৬ষ্ঠ শ্রেনির ছাত্রী অন্ত.সত্তা হয়। গর্ভপাত করানোর কারনে অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি প্রকাশ হয়। তখন লোক লজ্জার ভয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে। ধর্ষক চাচা আব্দুল আজিজকে (৬৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ১ ফেব্রুয়ারী উজিরপুরে ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী। গত ১ জানুয়ারী মারা গেছে বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাদি ইউনিয়নে ধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জায় নিজের শরীরে কোরোসিন ঢেলে আগুন আত্মহত্যার চেষ্টাকারী স্কুলছাত্রী। প্রতিবেশী পান্নু খানের বখাটে ছেলে সেনা সদস্য আসাদ খান ডিম ভেজে দেয়ার কথা বলে নিজের ঘরে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারী নলছিটিতে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে করাতকল ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন (৪০)। গত ১৮ ফেব্রুয়ারী চরফ্যাশনে মনুষ্যরুপী পশু বাবা আব্দুল জলিলকে দুই কন্যা ধর্ষণ ও সন্তান জন্ম দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ১৯ মার্চ বাকেরগঞ্জে আরো এক দশম শ্রেনী পড়–য়া ছাত্রী গনধর্ষণের শিকার হয়। ২০ এপ্রিল লালমোহনে পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রীকে গনধর্ষণে চাচা ও তার সহযোগিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই ঘটনার পাঁচদিন পর একই উপজেলায় দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়। গত ২ জানুয়ারীর মেহেন্দিগঞ্জে চাচাতো ভাইয়ের ধর্ষণের শিকার হয় দশম শ্রেনীর ছাত্রী। ভান্ডারিয়ায় ৩ জানুয়ারী খালুর ধর্ষণের শিকার হয় স্কুল ছাত্রী। গত ১৮ জানুয়ারী নগরীর পলাশপুরে শিশু কন্যাকে যৌন নিপড়ন। ৩০ জানুয়ারী নগরীতে কিশোরীকে চাকুরি দেয়ার প্রলোভনে এনে ধর্ষণ করে। গত ৬ এপ্রিল মনপুরায় বিদ্যালয়ে লাইব্রেরীতে স্কুল শিক্ষিকাকে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ নেতা। গত ১৪ মার্চ কাউনিয়া এলাকায় বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ধর্ষণের শিকার হয়। ১৭ মার্চ গৌরনদী উপজেলার বাসুদেবপাড়া গ্রামের গৃহবধূকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করায় ধর্ষক জাকির হোসেন (৩২) ও লোকমান সরদারকে (৩৩) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারী প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তরুনীকে ধর্ষণ করার অভিযোগে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলা করেছে শিকার তরুনী। বানারীপাড়ায় বিয়ের প্রলোভনে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করে ছাত্রী। গত ১৪ ই এপ্রিল রাতে ছাত্রীকে ধর্ষণ করে । গত ২৪ জানুয়ারী তালতলীতে ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী ধর্ষণের একই গ্রামের কলেজ মোঃ খালেক আকন এর ছেলে মোঃ হানিফর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। গৌরনদীতে ছাত্রীকে বন্দরের ব্যবসায়ীর ধর্ষণের শিকার হয়ে থানায় মামলা করেছে। বাকেরগঞ্জের পাদ্রিশিবপুরে পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রীকে ছয় মাস ধরে ধর্ষণ করে আপন চাচাতো ভাই মৃত: আনছার হাওলাদারের পুত্র মো. ইব্রাহিম। গত ১১ এপ্রিল বাকেরগঞ্জের ইসলামিক প্রি ক্যাডেট কিন্ডারগার্ডেন এর শিক্ষক শহিদুল ইসলাম (৫০)’র লালসার শিকার হয় তৃতীয় শ্রেনির ছাত্রী।
গত ৩ এপ্রিল গৌরনদীতে জর্ডান প্রবাসী এক যুবতীকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন স্থানে আটকে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। ধর্ষক উপজেলার বার্থী গ্রামের বাবুল ফকিরের ছেলে নছিমন চালক শাহাদাত হোসেন। একই উপজেলায় ১৯ ফেব্রুয়ারী আটক হয় অসুস্থ গৃহবধূর নগ্ন ছবি ধারণ করে ধর্ষণের পর ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া ধর্ষক কাজী রোমান (২৪)।
গত ২৩ জানুয়ারি বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া গ্রামে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে শিক্ষিকার স্বামী ধর্ষণ করেছে। গত ২০ মার্চ ভোলায় ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে গৃহবধূকে কুপিয়ে জখম করা হয়। গত ১৩ জানুয়ারি গলাচিপা উপজেলায় বাক-প্রতিবন্ধী মেয়েকে ধর্ষণ করেছে সবুজ কবিরাজ নামের এক ব্যক্তি । গত ২৪ ফেব্রুয়ারী রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণে ছাত্রী বাদী হয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হে ফেরদাউস হাওলাদার (২২), সহযোগী সাইদুল ইসলাম (৪০) ও ফারুক হোসেন (৪৫)। গত ৫ মার্চ রাঙ্গাবালী উপজেলার বড় বাইশদিয়া ইউনিয়নে দশম শ্রেণীর ছাত্রীকে অচেতন করে হাত-মুখ বেঁধে ধর্ষণের চেষ্টা করে একই এলাকার পলাশ মৃধা, শাকিল দালাল এবং হেলাল মৃধা। গত ২৩ মার্চ আগৈলঝাড়ায় স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার মামলায় প্রধান শিক্ষক শ্যাম প্রসাদ ঢালীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২৪ মার্চ পিরোজপুর সদর উপজেলার শারিকতলা-ডুমরিতলা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান মিজান মল্লিকের বিরুদ্ধে কলেজ ছাত্রী তাকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT