6:57 pm , April 28, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ভবিষ্যতে সন্তান জন্ম দিতে না পারার আশংকায় রয়েছে গণধর্ষণের শিকার ১৭ বছর বয়সী কলেজ ছাত্রী। গণধর্ষনের ফলে ওই ছাত্রীর সন্তান ধারনের টিউব ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ওই শংকা করা হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করছে না হাসপাতালের চিকিৎসকরা। শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য আজ রোববার ছাত্রীর আল্ট্রাসনোগ্রাম সহ অন্যান্য পরীক্ষা করানো হবে বলে জানিয়েছেন গাইনী বিভাগের প্রধান ডা. সিখা সাহা।
জীবনের সবচেয়ে চরম সংকটময় মুহুর্তের মধ্যেও গতকাল শনিবার চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ওই কলেজ ছাত্রী। কোতয়ালী পুলিশি নিরাপত্তায় সে পরীক্ষা দিয়েছে। বিধায় গতকাল ওই ছাত্রীর আল্ট্রাসনোগ্রাম সহ কিছু পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
জানাগেছে, শুক্রবার সকালে ব্যবহারিক পরীক্ষার খাতা আনার জন্য বন্ধু সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ ছাত্র ইমতিয়াজের মেসে যায় নগরীর কাশিপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ব্যবহারিক খাতা নিয়ে বের হবার সময় নগরীর বিএম কলেজ এলাকার চিহ্নিত দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসী রায়হান মল্লিক রাব্বি ও মানিক শেখ কলেজ ছাত্রী ও তার বন্ধুকে জিম্মি করে। তারা মেসের মধ্যে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলো দাবী করে ছাত্রীর বন্ধু ইমতিয়াজকে রুমের মধ্যে আটকে রেখে একটি মোবাইল সেট ও পাঁচ হাজার টাকা ছিনতাই করে। এমনকি ওই ছাত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল সেটটিও নিয়ে যায় তারা।
এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চিহ্নিত বখাটে মাদক, সন্ত্রাসী ও বিশেষ ক্ষমতা আইন সহ বিভিন্ন আইনে দায়ের করা ৮টি মামলার আসামী রাব্বি ওই ছাত্রীকে অচেতন করে রিক্সায় তুলে একই এলাকাধিন মথুরানাথ পাবলিক স্কুল সড়কে হানিফ সিকদারের মালিকানাধীন সিকদার ভিলায় বিএম কলেজ ছাত্র সাইফুল ইসলাম সজিব এর মেসে নিয়ে যায়। এমনকি পরবর্তীতে মানিক শেখও ওই মেসে চলে যায়। এক পর্যায় ওই তিনজন মিলে কলেজ ছাত্রীকে অচেতন করে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল হতে ছাত্রীকে উদ্ধার সহ সজিবকে গ্রেফতার ও পর্যায়ক্রমে অপর দুই ধর্ষককেও গ্রেফতার করে।
এদিকে ওই ছাত্রীকে প্রথমে শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) তে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে সার্জারী এবং পরে গাইনী বিভাগে প্রেরন করা হয়। গাইনী বিভাগে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ছাত্রীর নিরাপত্তা’র স্বার্থে পুনরায় ওসিসিতে প্রেরন করা হয়েছে। বর্তমানে কলেজ ছাত্রী সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
কলেজ ছাত্রীকে পরীক্ষা নিরীক্ষাকারী শেবাচিম হাসপাতালের গাইনী বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক বলেছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ওই ছাত্রীর সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে। এমনকি ওইদিন বিকালেই তার অস্ত্রপচার সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় যতটুকু বোঝা যাচ্ছে তাতে ওই ছাত্রীটি সন্তান ধারনের ক্ষমতা হারানোর আশংকা রয়েছে। কেননা তার সন্তান ধারনের টিউব ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে না।
অবশ্য হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান ডা. সিখা সাহা বলেন, ছাত্রীর ভ্যাজাইনাল সোয়াব সহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে। তবে যতটুকু বোঝা গেছে তাতে ছাত্রীর উপরাংশে তেমন বেশি আক্রান্ত হয়নি। এখন ভেতরে বড় ধরনের কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে বলা সম্ভব নয়। তবে এই ঘটনার জন্য ছাত্রী সন্তান ধারনের ক্ষমতা হারাতে পারে বলে মনে হচ্ছে না। তার পরেও আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পরিবার যদি এমনটি ধারনা করে থাকে তবে এমনও হতে পারে যে ওই ছাত্রী জন্মগত ভাবেও সন্তান ধারনের ক্ষমতা হারাতে পারে। তাই আপাতত বিষয়টি নিয়ে কোন কিছু আশংকা না করাটাই ভালো বলে মন্তব্য করেন ওই চিকিৎসক।
তিনি আরো বলেন, ওই মেয়েটিকে শনিবারই আমরা আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহনের আশা প্রকাশ করেছে। তাই তাকে পরীক্ষা দিতে পাঠানো হয়েছে। এসময় তার সাথে পুলিশও ছিলো। পরীক্ষা দিতে যাওয়ায় তার শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো সম্ভব হয়নি। রোববার আল্ট্রসনোগ্রাম সহ বাকি পরিক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।