3:33 pm , December 23, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাঙ্খিত ভোট গ্রহন। সে অনুযায়ী প্রার্থীরা প্রচার প্রচারনার সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র কয়েক দিন। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে হঠাৎ করেই পাল্টে যেতে শুরু করেছে নির্বাচনী আবহাওয়া। কদিন আগেও প্রচারনায় এগিয়ে থাকা বিএনপিতে সৃষ্টি হয়েছে গাঁছাড়া ভাব। নেতা-কর্মীদের গনগ্রেপ্তারের অজুহাত তুলে সংবাদ সম্মেলন আর অভিযোগ নিয়ে পড়ে আছে দলের প্রার্থীরা। তবে বসে নেই মহাজোট সহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। বিএনপি’র গাঁছাড়া ভাবকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী দৌড়ে এগিয়ে গেছেন ক্ষমতাসিন দলের প্রার্থীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিরতিহিন প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠ সরগরম করে রেখেছে নৌকার প্রার্থীরা। তাদের পাশাপাশি এলাকা, পাড়া, মহল্লায় সমান তালে উন্নয়নের স্বপক্ষে ভোট চাইছেন আওয়ামী লীগ সহ মহাজোটের কর্মী-সমর্থকরাও। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন হওয়ায় ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রচার-প্রচারনা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। আর তাই প্রতীক পাওয়ার পর পরই বরিশাল জেলার সংসদীয় ৬টি আসনে শুরু হয় মহাজোট, ঐক্যফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সহ অন্যান্য দলের ৩৮ প্রার্থীর বিরামহিন প্রচার প্রচারনা। শুরু থেকে ছয়টি আসনেই প্রচার প্রচারনায় সমান অবস্থান ধরে রাখে ক্ষমতাসিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত। তবে ভোটের মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামুলক প্রচারনার সেই চিত্র পাল্টে গেছে। নির্বাচনী দৌড়ে বিএনপিকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে ক্ষমতাসিন আওয়ামী লীগ।
বিশেষ করে বরিশালের ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতেই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে মহাজোট। বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়), বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া), বরিশাল-৪ (হিজলা- মেহেন্দিগঞ্জ) এবং বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনটিতে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের কদিন ধরেই দেখা মিলছে না প্রচার-প্রচারনায়। যার মধ্যে বরিশাল-১ ও বরিশাল-৪ আসনের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। আসন দুটিতে নেই ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি প্রার্থীদের একটি পোষ্টারও।
বরিশাল-১ আসনের প্রার্থী এম জহির উদ্দিন স্বপন প্রচার প্রচারনায় বাঁধা এবং নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার সহ হামলা-মামলার অভিযোগ তুলেছেন ক্ষমতাসিন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে। তাছাড়া বরিশাল-৪ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জেএম নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর দুর্বিত্তদের হামলায় গুরুতর আহতাবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছে। যে কারনে তার নির্বাচনী প্রচারনা পুরোটাই বন্ধ রয়েছে।
অবশ্য কিছুটা ব্যতিক্রম পরিস্থিতি বরিশাল সদর-৫ ও বরিশাল-৩ আসনে। এ দুটি আসনে ঐক্যফ্রন্টের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার ও সুর্পিম কোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নুল আবেদীন প্রচার-প্রচারনার মাঠে রয়েছেন। তবে গ্রেপ্তার আতংকে তাদের সাথে প্রচার প্রচারনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহন তেমন লক্ষনিয় হচ্ছে না। সিনিয়র পর্যায়ের কয়েকজন নেতাকে সাথে নিয়ে প্রচারনা চালাচ্ছেন তারা।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিন বলেন, পুলিশ আওয়ামী লীগের হয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গনগ্রেপ্তার করছে। বাসায় বাসায় গিয়ে তল্লাশী করছে। নেতা-কর্মীদের ৩০ ডিসেম্বরের আগে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিচ্ছেন। তাই নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভিতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গ্রেপ্তার আতংকে কেউ প্রচারনায় নামার সাহস পাচ্ছে না।
বরিশাল সদর আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়া বলেন, নেতা-কর্মীদেরকে গনগ্রেপ্তারের কারনে বিএনপি’র প্রচার প্রচারনার গতি কমে গেছে। গত কয়েক দিনেই বিএনপি’র ৭২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভোটের মাত্র ক’দিন আগে পুলিশের এমন গণগ্রেপ্তারের কারনে বিএনপি’র প্রচার প্রচারনা ব্যহত হচ্ছে বলে দাবী করেন সরোয়ার।
অপরদিকে গণগ্রেপ্তারের অজুহাতে বিএনপি নির্বাচনী মাঠ ছাড়া হলেও থেমে নেই নির্বাচনে অংশ নেয়া বাকি ১৬টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এর নেতৃত্বাধিন মহাজোটের প্রার্থীদের বিরামহিন প্রচারনায় সরব হয়ে আছে বরিশালের ৬টি নির্বাচনী এলাকা। বিএনপি’র অভিযোগের প্রতি কর্নপাত না করে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে ভোটারদের দারে দারে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সহ মহাজোটের প্রার্থীরা। তাছাড়া দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার কিংবা প্রচারনায় বাঁধা সৃষ্টির অভিযোগ নেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, এনপিপি কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। তারা বাঁধাহিন ভাবেই প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ৩০ ডিসেম্বর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবী ওইসব দলের প্রার্থীদের।