মেডিকেলের সামনে ফার্মেসীতে মানা হচ্ছে না ওষুধের মূল্য তালিকা মেডিকেলের সামনে ফার্মেসীতে মানা হচ্ছে না ওষুধের মূল্য তালিকা - ajkerparibartan.com
মেডিকেলের সামনে ফার্মেসীতে মানা হচ্ছে না ওষুধের মূল্য তালিকা

6:27 pm , April 27, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ফার্মেসী গুলোতে মানা হচ্ছে না সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ওষুধের মূল্য তালিকা। যে যার মতো করে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বার্তি টাকা। এমনই একটি ঘটনা গত বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে শেবাচিম হাসপাতালের মাঝেরগেট সংলগ্ন বাকেরগঞ্জ মেডিকেল হলে ঘটেছে। যা শুধুমাত্র রোগীর স্বজনরাই নয়, বার্তি মূল্য রাখার ঘটনা হতবাক করেছে পার্শ্ববর্তী ফার্মেসীর ব্যবসায়ীদেরকেও। কেননা ৬০ টাকা মূল্যের আলট্রাকেইন’আর নামক একটি ওষুধের কৃত্তিম সংকট দেখিয়ে তার মূল্য রাখা হয়েছে সাড়ে ৬শত টাকা। পরে অবশ্য স্বজনদের কাছে ক্ষমা চেয়ে কোন ভাবে রক্ষা পেয়েছে বাকেরগঞ্জ (শরীফ ফার্মেসী) মেডিকেল হল কর্তৃপক্ষ।
জানাগেছে, নগরীর ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির ভাগিনা বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী বিভাগের চিকিৎসকরা স্বজনদের “আলট্রাকেইন’আর” নামক একটি ইনজেক্সন বাহির থেকে কিনে আনার জন্য একটি শর্ট শ্লিপ ধরিয়ে দেন। সে অনুযায়ী রাতে রোগীর স্বজরা হাসপাতালের সামনে বাকেরগঞ্জ মেডিকেল হল থেকে ওই ইনজেকশনটি সরবরাহ করা হয়।
স্বজনরা জানান, তারাহুরো করে রোগীর জন্য “আলট্রাকেইন’আর” নামের যে ইনজেকশনটি কেনা হয়েছে দোকানী তার মূল্য রেখেছে সাড়ে ৬শত টাকা। কিন্তু পরবর্তীতে ওই ইনজেকশনটি’র আর প্রয়োজন হয়নি। তখন ইনজেকশনের প্যাকেটে তাকিয়ে দেখতে পান কালো কালি দিয়ে মূল্য এবং মেয়াদ উত্তির্ণের তারিখ কাটা রয়েছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়। পরে গুগল এর সহযোগিতা নিয়ে দেখতে পান ওই ইনজেকশনটির মূল্য মাত্র ৬০ টাকা। অথচ তার মূল্য রাখা হয়েছে সাড়ে ৬শত টাকা। রোগীর স্বজনরা তাৎক্ষনিক ভাবে ওই ফার্মেসীতে ছুটে যান। প্রশ্ন করা মাত্রই ফার্মেসীর মালিক আব্দুর রাজ্জাক তাদের মনগড়া কল্পকাহিনী শুনিয়ে দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত তাতেও রক্ষা পাননি। তাই নিজের ভুল শিকার করে ক্ষামা চেয়ে পার পেয়ে যান বাকেরগঞ্জ মেডিকেল হলের মালিক। এমনকি তড়িঘরি করে রাত ২টার দিকে ফার্মেসী বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাকেরগঞ্জ মেডিকেল হল এর মালিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেড নামক কোম্পানির উৎপাদিত “আলট্রাকেইন’আর” নামক ইনজেকশনটি গত দুই বছর পূর্বে থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু মার্কেটে ওই ওষুধটির চাহিদা রয়েছে। তাই ঢাকা থেকে চোরাই পথে বার্তি মূল্য দিয়ে ওই ওষুধটি কিনে এনেছি। এটা আমাদের লাভের জন্য নয়, বরং রোগীর লাভের জন্যই রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ওই ওষুধটি চোরাই ভাবে কিনতে আমাদের ৩শত টাকা খরচ হচ্ছে। তাই গায়ে ৬০ টাকা লেখা থাকলেও আমরা একটু বেশি মূল্যেই ওষুধটি বিক্রি করছি। এটা শুধুমাত্র আমিই নই, বরং অন্যান্য ফার্মেসীতেও বার্তি মূল্যে বিক্রি হয় বলে দাবী করেন ওই ব্যবসায়ী।
তবে আব্দুর রাজ্জাক এর দেয়া বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত হতে পার্শ্ববর্তী জাহানারা মেডিকেল হলে আলাপকালে সেখানকার ব্যবসায়ী লাবু মিয়া বলেন, ওই ওষুধটি বর্তমানে মার্কেট আউট। তবে এটা বাইরে থেকে ভিন্ন প্রকৃয়ায় কিনে আনতে হয়। তাই ব্যবসায়ীরা একটু বার্তি মূল্যেই বিক্রি করে থাকে। কিন্তু বাকেরগঞ্জ মেডিকেল হলে ওই ওষুধটির যে মূল্য রাখা হয়েছে তা ঠিক হয়নি দাবী করে জাহানারা ফার্মেসীর ব্যবসায়ী বলেন, সর্বোচ্চ হলে ওই ওষুধটি ৩শত টাকা পর্যন্ত রাখতে পারতো।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, শেবাচিম হাসপাতালের সামনে থাকা ফার্মেসী গুলোতে রাত নেমে আসার সাথে সাথেই বদলে যাচ্ছে ওষুধের মূল্য। সরকার নির্ধারিত মূল্য ভুলে গিয়ে রাখা হচ্ছে নিজেদের মনগড়া মূল্য। বিশেষ করে কয়েকটি নামি-দামী এবং মডেল ফার্মেসী বাদে অন্য ফার্মেসী গুলোতে রোগীদের জিম্মি করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। কিন্তু বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি নেই ওষুধ প্রশাসন কিংবা জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। অবশ্য ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসন এবং ওষুধ প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় ওষুধ ব্যবসায়ীরা। তারা সিন্ডিকেট তৈরী করে গোটা ফার্মেসী বন্ধ করে দেন। জিম্মি করে ফেলেন রোগীদের। যে কারনে প্রশাসন রোগীর সার্থে অনেক ক্ষেত্রে ফার্মেসী মালিকদের গুরুতর অভিযোগও এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র। আর সেই সুযোগ ব্যবহার করেই দুর-দুরন্ত থেকে আসা রোগীদের কাছ থেকে ৬০ টাকা মূল্যের ওষুধের মাদ সাড়ে ৬শ টাকা রাখার সুযোগ পাচ্ছে ওষুধ ব্যবসায়ীরা। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতি, জেলা প্রশাসন ও ওষুধ প্রশাসনের সহযোগিতা এবং সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT