প্রচার প্রচারনায় এগিয়ে বড় দল অস্তিত্ব সংকটে ছোট দল প্রচার প্রচারনায় এগিয়ে বড় দল অস্তিত্ব সংকটে ছোট দল - ajkerparibartan.com
প্রচার প্রচারনায় এগিয়ে বড় দল অস্তিত্ব সংকটে ছোট দল

3:21 pm , December 20, 2018

খান রুবেল ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র কয়েকদিন। আর তাই শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে নির্বাচনের প্রচারনা। গত তিন দিন ধরে আবহাওয়ার বৈরী ভাব এবং গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিও আটকাতে পারেনি প্রার্থীদের। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করেই চলতে তাদের দিন-রাত সমান তালে প্রচারনা।
তবে জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে ১৭টি দল ও স্বতন্ত্র সহ ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে থাকলেও প্রচারনায় এগিয়ে আছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন। বাকি ১৪টি দলের প্রার্থীরা পিছিয়ে পড়েছে। কোন দলের প্রার্থীদের পোষ্টার দেখা গেলেও প্রচারনায় দেখা মিলছে না প্রার্থী কিংবা সমর্থকদের। অবশ্য ভিন্ন চিত্র স্বতন্ত্রদের ক্ষেত্রে। জেলার দুটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকা মহাজোটের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন। আর তাই ওই দুটি আসনে পিছিয়ে পড়েছেন মহাজোটের প্রার্থীরা। এর আগে আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিনকে সামনে রেখে ১০ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার পর পরই প্রচারনায় নেমে পড়েন বরিশালের ৬টি সংসদীয় আসনের ৩৮ জন প্রার্থী। যার মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে পাঁচজন, বিএনপি’র ধানের শীষ নিয়ে ছয় জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর হাত পাখা নিয়ে ৬ জন, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে চার জন, ন্যাশনাল পিপল্স পার্টি (এনপিপি) এর দু’জন প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া জাকের পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিটিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট (আইওজে), বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জাতীয় পার্টি (জেপি) ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর একজন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর স্বতন্ত্র করছেন তিন জন। প্রার্থী একাধিক দল থেকে হলেও ছয়টি আসনেই প্রচার প্রচারনায় এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থীরা। যার মধ্যে কোন কোন আসনে হাড্ডহাড্ডি প্রচার-প্রচারনা চলছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে। তবে ভোটের লড়াই এগিয়ে থাকা তিন দরের মধ্যেই হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের দু-একটি আসনে দেখা মিললেও বাকি দলগুলোর বেশিরভাগই রয়েছে নামে মাত্র। এদের কারো কারো পোষ্টারও খুঁজে পাওয়া দুস্কর নির্বাচনী এলাকায়। অবশ্য দলীয় ভাবে প্রচার প্রচারনা চলছে বলে দাবী স্ব স্ব দলের প্রার্থীদের। সরেজমিনে দেখা যায়, বরিশাল- (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন প্রচারনার এগিয়ে আছে। এদের মধ্যে আবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র অবস্থান সমানে সমান। আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীমকে বিজয়ী করতে আটঘাট বেঁধে নেমেছে গোটা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। তারা আসনটিতে প্রার্থীর থেকেও বড় করে দেখছেন দলের বিজয়। স্বাধীনতার পর থেকে ভোটের লড়াইতে পিছিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ একাদশ সংসদ নির্বাচনে সদর আসনে রেকর্ড গড়তে চাচ্ছেন। তবে ছাড় দিতে নারাজ বিএনপি। পূর্বের ন্যায় আসনটিতে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে একাট্টা দলটির সিনিয়র থেকে তৃনমুল নেতা-কর্মীরা। তাইতো অভ্যন্তরিন কোন্দল ভুলে সদর আসনে মনোনয়ন পাওয়া বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারকে নিয়ে দিন রাত প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এমনকি নিজের অলশতা পেছনে ফেলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সমান তালে লিফলেট হাতে ভোটারদের দারে দারে গিয়ে ভোট চাইছেন মজিবর রহমান সরোয়ার ও তার বিশাল কর্মী বাহিনী। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র পাশাপাশি প্রচার প্রচারনায় পিছিয়ে নেই ইসলামী আন্দোলন। জেলার ৬টি আসনেই তাদের প্রচারনা চলছে সমান তালে। বিশেষ করে সদর আসনে তাদের প্রচার প্রচারনা লক্ষনিয়। কেননা আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম। যে কারনে আসনটিকে গুরুত্বপূর্ন হিসেবে দেখছেন দলের হাইকমান্ডও।
এদিকে বরিশাল-৩ ও বরিশাল-৬ আসনের চিত্র ভিন্ন। এখানে মহাজোটের প্রার্থী থাকলেও তারা পিছিয়ে পড়েছেন নিজ দলের বিদ্রোহীদের কারনে। মুলাদী-বাবুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ টিপু সুলতান নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠ দখল করে আছেন যুবমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান। তার পাশাপাশি প্রচারনার অগ্রভাগে রয়েছেন জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু। মহাজোটে বিভক্তির কারনে সুবিধা জনক অবস্থানে আছেন বিএনপি’র প্রার্থী জয়নুল আবেদীন। বরিশাল-৬ বাকেরগঞ্জ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নাসরিন জাহান রতনাকে নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। তার মধ্যে নির্বাচনে তার পেছনে লেগেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী তালুকদার ফারুক। তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ মহাজোটের বিদ্রোহী হিসেবে দেখছেন তাকে। যে কারনে এবারের নির্বাচনে নড়বড়ে অবস্থায় পড়েছেন লাঙলের প্রার্থী রতনা আমিন। বিদ্রোহীর কারনে দলীয় ভোট নিয়ে মহাজোটে টানাপোড়ন সৃষ্টি হওয়ায় সুযোগ খুঁজছেন বিএনপি প্রার্থী আবুল হোসেন খান। তাদের বিভক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রচারনায় এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
অপরদিকে বরিশাল বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর দুর্বলতার কারনে প্রচারনায় এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী পঙ্কজ নাথ। আসনটিতে তার বিজয় অনেকটা নিশ্চিত বলেই ধরে নিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ। বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে জাতীয় পার্টি’র মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা প্রার্থী হলেও প্রচারনার মাঠে নেই। সেই সুযোগে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এ আসনে আ’লীগের শাহ আলম ও বিএনপি’র সান্টুর মধ্যে হাড্ডহাড্ডি লড়াইয়ের অপেক্ষা করছেন স্থানীয় ভোটাররা। কেননা প্রচার প্রচারনায় তারা দু’জনই সমানে সমান। তবে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে প্রচার প্রচারনায় একক আধিপত্ত গড়ে তুলেছেন বর্তমান সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। তিনি প্রতিদিনই দুটি উপজেলাতেই নির্বাচনী সভা-সমাবেশ করছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে রয়েছেন বিএনপি’র জহির উদ্দিন স্বপন। তবে তার প্রচার প্রচারনা ততটা শক্তিশালী হচ্ছে না। যদিও প্রচার প্রচারনায় বাঁধা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে তার।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT