3:18 pm , December 13, 2018
খান রুবেল ॥ নির্বাচনে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছেন সদর আসনে বিএনপি মনোনিত ধানের শীষের প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। নিজ অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচার যুদ্ধে নামলেও পাশে পাচ্ছেন না মনোনয়ন বঞ্চিত জ্যেষ্ঠ নেতাদের। দলের মধ্যে একক আধিপত্য নীতির কারনে অভিমানি নেতারা এড়িয়ে চলছেন সরোয়ারকে। যদিও নির্বাচন এবং প্রচার কার্যক্রমে ওইসব নেতাদের না ডাকার অভিযোগও তোলা হচ্ছে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের বিরুদ্ধে। দলীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ দিন ধরেই বরিশাল বিএনপি’র রাজনীতিতে একক আধিপত্য দেখিয়ে আসছেন মজিবর রহমান সরোয়ার। যে কোন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন বা কমিটি’র ক্ষেত্রে বড় পদটি দখলের রাজনীতি তার পুরানো অভ্যাস। তার এমন অভ্যাসের কারনেই বরিশাল বিএনপিতে দ্বিধাবিভক্তি দীর্ঘ বছরের। আবার রাজনীতিতে তার সাথে টক্কর দেয়া নেতাদের মাইনাস করার নীতিও বিদ্যমান সরোয়ারের মধ্যে। এসব কারনেই বরিশাল বিএনপি’র বিশাল একটি অংশ তার বিরুদ্ধাচারন করে চলেছে সর্বদাই। তার ব্যত্যয় ঘটছে না একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। দলীয় নেতারা জানান, নেতা-কর্মীদের কারনে মজিবর রহমান সরোয়ার আজ কেন্দ্রীয় নেতা। কিন্তু তার কাছে নেতা-কর্মীরা মুল্যায়ন পাচ্ছে না। সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রের আহ্বানে সবাই সড়ে দাড়ান সরোয়ারের জন্য। তার মধ্যে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়েই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হন। শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পেয়েও যান। কেন্দ্রে তার ভিন্ন আধিপত্যর কারনে বঞ্চিত হন তৃনমুলের ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা। আর তাই মনোনয়ন পেলেও বরিশালের জ্যেষ্ঠ ও মনোনয়ন বঞ্চিত ত্যাগী নেতাদের পাশে পাচ্ছেন না তিনি।
দলের মনোনয়নপত্র জমা দেয়া থেকে শুরু করে বর্তমান চলমান প্রচার প্রচারনায়ও সিনিয়র নেতাদের পাশে পাচ্ছেন না মজিবর রহমান সরোয়ার। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে ধানের শীষের প্রার্থীর সমর্থনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভাতে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন এবং সরোয়ার অনুসারী নেতা-কর্মী ছাড়া মনোনয়ন বঞ্চিত কোন নেতার উপস্থিতি দেখা যায়নি। যদিও মজিবর রহমান সরোয়ার বলেছেন, মনোনয়ন বঞ্চিত জেলা ও মহানগর বিএনপি’র সকল নেতাকেই তিনি মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহনের জন্য মুঠোফোনে আমন্ত্রন জানিয়েছেন।
তবে দলীয় ফোরামে মজিবর রহমান সরোয়ারের এমন দাবী মিথ্যাচার বলে উল্লেখ করেছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব এবায়েদুল হক চাঁন। সদর আসনে মনোনয়ন পেয়েও বঞ্চিত হওয়া এই নেতা অনেকটা ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলো। কিন্তু কি কারনে পরবর্তীতে আমাকে বাদ দিয়ে আরেকজনকে মনোনয়ন দিলো তা আমার বোধগম্য নয়।
তিনি বলেন, মনোনয়ন পাইনী তাই বলে তো আর দল ছেড়ে যাইনি। আমার ভোট তো আমি ধানের শীষেই দিব। দল যাদে বিজয়ী হয় সে কাজটাই আমরা করব। তবে প্রার্থীর সমর্থনে একটি সভা হবে তা আমি জানবো না সেটা কি করে সম্ভব। তাছাড়া আমাদের দলীয় কার্যালয় রয়েছে। সেটা বাদ দিয়ে বাইরে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালিত হবে কেন এমন প্রশ্ন তুলে বলেন, এটাকে কোন নির্বাচন বলে না। এটা হলো লোক দেখানো নির্বাচন।
এদিকে নানা অভিমান ও ক্ষোভের কারনে মজিবর রহমান সরোয়ারকে এড়িয়ে চলছেন বরিশাল সিটি’র সদ্য সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত এই নেতাকেও এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি সদর আসনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করতে। বৃহস্পতিবারের সভায়ও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। দেখা যায়নি তার অনুসারী নেতা-কর্মীদেরও।
জানতে চাইলে সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, বৃহস্পতিবারের মতবিনিময় সভার বিষয়টি মজিবর রহমান সরোয়ার আমাকে ফোনে জানিয়েছে। কিন্তু আমি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি। শনিবার বরিশালে ফিরবো। এসে ধানের শীষের পক্ষে প্রচার-প্রচারনায় নামব। তবে ক্ষোভ এবং অভিমান থাকলেও সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি এই নেতা।
শুধু চান-কামালই নয়, ইতিপূর্বে সরোয়ারের নির্বাচনী গণসংযোগে দেখা মেলেনি বিএনপি’র বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন। তবে সরোয়ারের আমন্ত্রনে বৃহস্পতিবারের মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহন করেন তিনি। তবে সেখানে তার কর্মী বাহিনীর অংশগ্রহন চোখে পড়েনি। ওই সভা ছাড়া পরবর্তীতে গণসংযোগে ছিলেন না শিরিন। এসব কারনে অন্ত.দ্বন্দে জর্জরিত বরিশাল বিএনপি’র ভোটের রাজনীতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন দলীয় মহল। তাই ভোটের আগেই আভ্যন্তরিন ক্ষোভ এবং অভিমান ভেঙ্গে সকলকে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারনায় এগিয়ে যাওয়াটাই উত্তম বলে মনে করছেন দলের তৃনমুল নেতারা।