আগৈলঝাড়ায় ইয়াবা সুন্দরী নীলা গ্রেফতারে এলাকায় স্বস্তি আগৈলঝাড়ায় ইয়াবা সুন্দরী নীলা গ্রেফতারে এলাকায় স্বস্তি - ajkerparibartan.com
আগৈলঝাড়ায় ইয়াবা সুন্দরী নীলা গ্রেফতারে এলাকায় স্বস্তি

3:13 pm , December 6, 2018

আগৈলঝাড়া প্রতিবেদক ॥ আগৈলঝাড়ায় রাতে মাদকের আসর থেকে সেই ইয়াবা সুন্দরী নীলা গ্রেফতারে স্বস্তি ফিরেছে এলাকায়। এরকম আরও একাধিক আসরের বিরেুদ্ধে পুলিশী অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে প্রসাশন। ইয়াবা সুন্দরী নীলা গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংশ্লিষ্ঠ সূত্র, পুলিশ, স্থানীয় অভিভাবক ও মাদক-সেবীদের দেয়া তথ্য মতে, স্কুল জীবনে বখে যাওয়া বন্ধু বান্ধবের সাথে মিলে বখাটে হয়ে যায় নীলা। নীলার বাড়ি আগৈলঝাড়া উপজেলার পাশ্ববর্তী কোটালীপাড়া উপজেলার হরিণাহাটি গ্রামে। নীলা ওই গ্রামের মরহুম মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ শিকদারে মেয়ে। আব্দুল আজিজ সিকদার বাংলাদেশ বেতারে চাকুরী করতেন। বাবার চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় থেকে পড়ালেখা অবস্থায় নেশায় আসক্ত হয়ে পরেন নীলা। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে নীলা মেঝ। নেশার জগতে পা দেয়ার বিয়ে দেয়া হয় নীলাকে। কিন্তু বেশী দিন টেকেনি সেই বিয়ে। এভাবে একাধিক বিয়ের পর নীলা নিজের পছন্দে ঢাকার মিরপুরে ওসমান গনি সাফিন নামে গ্রামীন শক্তির এক ব্যাটারী ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে নীলা। স্বামীর পূর্বের সংসার থাকায় স্বামীর বাড়িতে উঠতে পারেনি নীলা। তাই বাধ্য হয়ে বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে নীলা। তবে মাঝে মধ্যে নীলার কাছে আসত তার স্বামী ওসমান গনি। পূর্বের দাম্পত্য জীবনে নীলা একটি কন্যা সন্তানের মা হলেও ওই মেয়েটি মারা যায়। বর্তমানে নীলার তিন বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। সাময়িক সুখের খোঁজে একাকিত্ব জীবনে নীলা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এভাবেই মাদক সেবী থেকে নীলা পা বাড়ায় মাদক ব্যবসায়। অত্যান্ত সু-চতুর নীলা নিজের যৌবনের রুপ লাবন্যকে কাজে লাগিয়ে সখ্যতা গড়ে তোলে ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ী, বিদেশ ফেরত উঠতি বয়সী তরুনদের। এভাবে কৌশলী নীলা সখ্যতা গড়ে তুলতে থাকে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে। ধর্নাঢ্য বখে যাওয়া তরুন মাদকসেবীদের টাকায় নীলা গড়ে তোলে তার মাদকের সিন্ডিকেট। নিজের ভাড়া বাসায় দিন ও রাতে চলে মাদক সেবন, ব্যবসা। সাথে চলত রাত জেগে বন্ধু বান্ধবদের সাথে মধু চন্দ্রিমা। নীলার মধু চন্দ্রিমায় হাজির হতো এলাকার প্রভাবশালী নামকরা ব্যক্তিত্বদের ছেলেরা। স্থানীয় ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রভাবশালী লোকজনের ছেলেরা নিত্য সঙ্গী হয়ে পরে নীলার মধু চন্দ্রিমায়। প্রভাবশালীদের নেশাখোর ছেলেদের সাথে সখ্যতার কারণে আশপাশের কেউই নীলার বিরুদ্ধে টু শব্দ করার সাহস পেত না। মাঝে মধ্যে নীলা ওই সকল বন্ধুদের সাথে দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বেড়াতে যেত। নীলা স্থায়ী ভাবে কোথায়ও বসবাস করত না। কিছু দিন পর পর নিজ থেকে অথবা এলাকাবাসীর চাপে বাসা বদল করত সে। তার পরেও গৌরনদী বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা অবস্থায় নীলার এহেন কাজের জন্য সেখানকার স্থানীয়রা নীলাকে ওই এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য করায়।
সেখান থেকে বিতারিত হয়ে নীলা আগৈলঝাড়া উপজেলা হেলিপ্যাড সংলগ্ন আব্দুস ছালাম এর বাসায় স্বামীর উপস্থিতিতে বাসা ভাড়া নেয়। কথা ছিল প্রতি সপ্তাহে তার স্বামী আসা যাওয়া করবে। তিন মাস ওই বাসায় থাকলেও তার স্বামী একবারও আসেনি। স্বামীর অবর্তমানে ওই বাসায় প্রকাশে ধূমপান করা, আপত্তিকর পোশাকপড়া, অপরিচিত লোকের আনাগোনা, গভীর রাতে মাদক সরবরাহ করা এসব কারনে বাড়ির মালিক তাকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে। এর পর বাগধা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মিথুন মেম্বরের ফুল্লশ্রী গ্রামের পাকা বাড়ি ভাড়া নেয়। মাদক আর টাকার পাহাড় গড়ে তোলার নেশায় এক পর্যায়ে স¤্রাজ্ঞী হয়ে ওঠে নীলা। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় ছিচকে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতার মাধ্যমে তাদের ওই বাড়িতে নীলা গড়ে তোলে তার মাদকের আসনরের মধু চন্দ্রিমা। সেখানে অবস্থান করা নীলার অতিথিরা ঘর থেকেও বের হত না। নীলার আশ্রয়ে ৪/৫দিন থাকলেও ওই অতিথিদের খাবার সংগ্রহ করা হতো বাইরে থেকে।
তবে নীলার মধু চন্দ্রিমায় বিপত্তি ঘটায় পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ যাতীয় সংবাদ জানতে পেরে গত ৩০ নভেম্বর রাতে এসআই জমীম উদ্দিন হাওলাদারের নেতেৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে নীলা (২৮) ও ওই এলাকার রফিকুল ইসলাম পাইক (১৯), শাওন হালাদার ও আলী হোসেনকে আটক করে পুলিশ। এসময় নীলার কাছ থেকে ১৫ পিচ ও রফিকের কাছ থেকে ৫ পিচ ইয়াবাসহ আসর থেকে উদ্ধার করা হয় মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম। বহু নাটকীয়তা শেষে শাওন ও আলী হোসেনকে পুলিশ ছেড়ে দিলেও নীলা আর রফিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। যার নং ০১। ওই মামলায় বর্তমানে নীলা ও রফিকুল পাইক জেল হাজতে রয়েছে।
বাড়ির মালিক মিথুন মেম্বর জানান, গ্রেফতারকৃত নীলা তাদের গ্রামের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। বাসা ভাড়া দেয়ার পরে সে জানতে পারে যে, নীলা খারাপ কাজের সাথে জড়িত। তাই তাকে বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছিল। ১ ডিসেম্বর তার অন্য বাসায় যাবার কথা থাকলেও ৩০ তারিখ রাতে সে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নীলা গ্রেফতারের পর অনেকেই জানতে পেরেছেন যে তার কারনে তাদের উঠতি বয়সী ছেলেরা বিপদগামী হচ্ছিল। তাই সে জামিনে এলেও তাকে আর ওই এলাকায় কেউ বাসা ভাড়া দেবেন না। নীলা গ্রেফতারে স্বস্তিতে রয়েছেন এলাবাসী। এরকম মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে পুলিশের আরও অভিযানের আহ্বান জানান এলাবাসী।
আগৈলঝাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আফজাল হোসেন জানান, এত বড় মাদকের সিন্ডিকেটের কথা তিনিও জানতেন না। অভিযানে নীলা গ্রেফতারের পর অনেক ঘটনাই সামনে আসছে। সকল বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে এভাবে আরও কয়েকটি আস্তানার কথা জানা গেছে। সহসাই সেখানেও অভিযান পরিচালনার কথাও জানান তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT