3:19 pm , December 5, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিগত ১০ বছর ক্ষমতায় না থেকেও দ্বিগুন থেকে কয়েক গুন সম্পদের মালিক হয়েছেন একাদশ সংসদ নির্বাচনে জেলার ৬ আসনের ঐক্যফ্রন্ট মনোনিত বিএনপির ১০ নেতারা। পাশাপাশি তাদের নগদ টাকার পরিমানও বেড়েছে অনেক। শুধু নিজেরাই নয়, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের স্ত্রীদেরও। বিগত নবম ও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপি মনোনিত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ৬টি আসনে পুনরায় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের কারনে ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়া বিএনপি’র এসব নেতারা ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও দ্বি-গুন থেকে কয়েকগুন অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। হলফনামা সুত্রে জানা গেছে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে বিএনপি’র প্রার্থী এম জহির উদ্দিন স্বপন বর্তমানে বছরে ১৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন। বর্তমানে তার নগদ সহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছেন ৪ কোটি ২১ লাখ ৩ হাজার ৯৪২ টাকার। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তার আয় দেখিয়েছিলেন ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৭০ টাকা। ওই সময় তার স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে মোট ২ কোটি ২৭ লাখ ৩৫ হাজার ৫৪০ টাকা সম্পত্তি ছিলো। এর মধ্যে সে অনুযায়ী গত ১০ বছরে তার সম্পত্তি বেড়েছে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪০২টাকার।
এ আসনে বিএনপি মনোনিত অপর প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান নিজের ও তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ২০০ টাকা। তার নিজের এবং স্ত্রীর নামে ৪৫ তোলা স্বর্ণ সহ মোট এক কোটি ৫১ লাখ ৮৬ হাজার ১২ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার নিজের আয় ছিলো ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৩৭৫ টাকা। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে মোট সম্পত্তি ছিলো ৮৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৮০ টাকার। সে অনুযায়ী বিগত ১০ বছরে তার তার সম্পত্তি বেড়েছে ৬৭ লাখ ২ হাজার ৮৩২ টাকার।
বরিশাল-২ আসেন বিএনপি’র প্রার্থী সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামাল একজন পরামর্শদাতা হিসেবে তার বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৭৫ হাজার ২শ টাকা দেখিয়েছেন। তার স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে প্রায় সোয়া ১ কোটি টাকার সম্পদের কথা উল্লেখ করেছেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচনে তিনি তার আয় দেখিয়েছিলেন ১২ লাখ ৩২ হাজার। এছাড়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছিলেন ৯১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৯৭ টাকার। সে অনুযায়ী তার সম্পদ বেড়েছে ৩৩ লাখ টাকার।
এ আসনে বিএনপি’র অপর প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী দাবী করেছেন। তাই বর্তমানে তার অন্য কোন আয়ের উৎস নেই বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি তার নিজের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছেন ৬ কোটি ২৭ লাখ ৮১৩ টাকা। নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি ব্যবসায়ী হিসেবে তার আয় দেখিয়েছিলেন ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫৪০ টাকা। তখন তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন। ওই সময় তিনি তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছিলেন ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭ হাজার ৭২২ টাকার। সে অনুযায়ী আয় না থাকলেও তার সম্পদ বেড়েছে ৪ কোটি ৬২ লাখ ৯৩ হাজার ৯১ টাকার। সে হিসেবে বিগত ১০ বছরে তার প্রায় চার গুন সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বরিশাল-৩ আসনে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩ টাকা। আর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছেন ৩ কোটি টাকার। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আয় দেখিয়েছিলেন ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৮ টাকা। আর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ছিলো ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ৩৮৬ টাকার। সে অনুযায়ী তার ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৪ টাকার সম্পত্তি বেড়েছে।
এ আসনে বিএনপি’র অপর প্রার্থী বেগম সেলিমা রহমান ব্যবসায়ী হিসেবে তার বর্তমান বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৫০ টাকা। দেখিয়েছেন সাড়ে ৪ কোটি টাকার অধিক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি। তবে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি গৃহিনি হিসেবে তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন মাত্র ১২ হাজার ১৪ টাকা। তখন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ছিলো ৫৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৭৩ টাকার। সে অনুযায়ী গত ১০ বছরে তার আয় বেড়েছে ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৮৩৬ টাকা। আয়ের পাশাপাশি বেড়েছে সম্পদের পরিমানও। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তার সম্পত্তি বেড়েছে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ২৫ হাজার ২৭ টাকা।
বরিশাল-৪ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ ব্যবসায়ীক হিসেবে তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। তার নিজের ও স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৫০ লাখ ৪ হাজার টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। এছাড়া রয়েছে আরো একটি দ্বিতল বাড়ি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেয়া হলফনামায় তিনি আয় দেখিয়েছিলেন ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৬ টাকা। স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছিলেন ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার। সে হিসেবে ১০ বছরের ব্যবধানে তার সম্পত্তি বেড়েছে ৯৭ লাখ ২৯ হাজার টাকার।
বরিশাল-৫ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৯৮৮ টাকা বলে উল্লেখ করেছেন। আয় কম দেখালেও তার ৫০ তোলা স্বর্ণালংকার সহ ৬ কোটি ২৮ লাখ ১২ হাজার ৯২৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আয় দেখিয়েছিলেন ৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। পাশাপাশি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ছিলো ২ কোটি ৯০ লাখ ২৩ হাজার ৭৭৫ টাকার। সে হিসেবে গত ১০ বছরে তার সম্পত্তি বেড়েছে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৫১ টাকার।
বরিশাল-৬ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী আবুল হোসেন খান ব্যবসা থেকে তার বর্তমান বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রায় ৩ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তবে নবম সংসদ নির্বাচনে ১০ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী বর্তমানে তার আয় কমেছে। তবে বেড়েছে সম্পত্তি। ওই নির্বাচনে তিনি তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছিলেন ২ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬০ টাকার। সে তুলনায় বর্তমানে সম্পদ বেড়েছে প্রায় ২৬ লাখ টাকার।
একই আসনে বিএনপি’র অপর প্রার্থী অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ খান তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ১০ ভরি স্বর্ণালংকার সহ নিজের ও স্ত্রীর নামে ৮৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। বর্তমানের তুলনায় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার ৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা আয় কম ছিলো। ওই সময় তার আয় ছিলো ২ লাখ ৬৫ হাজার। এছাড়াও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছিলেন ৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকার। সে হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগদান করা এই নেতার সম্পত্তি বেড়েছে ৮৫ লাখ ৬ হাজার টাকার।