6:09 pm , April 27, 2018

গলাচিপা প্রতিবেদক ॥ দেড় বছরের শিশু সিনতি আক্তার মনিকা পাঁচদিন ধরে মায়ের বুকের দুধ পাচ্ছে না। মা মিষ্টি আক্তারের খোঁজও মিলছে না। হাসপাতাল থেকে সে নিখোঁজ হয়ে গেছে। মায়ের সানিধ্য না পেয়ে শিশুটি সারাক্ষণ কাঁদতে কাঁদতে দুর্বল হয়ে পড়েছে। অসহায় নানী জোসনা বেগম শিশুটিকে কোলে নিয়ে পাগলের মতো থানা পুলিশসহ নানা জায়গায় ধর্না দিচ্ছেন মেয়ে মিষ্টি আক্তারকে খুঁজে পাওয়ার আশায়। থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। পুলিশ মিষ্টি আক্তারকে অপহরণের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারেক আজিজ সুমন নামের এক মটর সাইকেল ড্রাইভারকে আটক করেছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও খোঁজ নেই মিষ্টি আক্তারের। ফলে নানী জোসনা বেগম শিশুটিকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখা তার কাছে দায় হয়ে উঠেছে।
পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গলাচিপা ইউনিয়নের রতনদী-ইটবাড়িয়া গ্রামের রিক্সাচালক সালাম হাওলাদারের একমাত্র মেয়ে মিষ্টি আক্তারের (২২) সঙ্গে চার বছর আগে একই ইউনিয়নের চরখালী গ্রামের সহিদ মৃধার ছেলে সাহিন মৃধার বিয়ে হয়েছিল। মিষ্টি আক্তারের দেড় বছর বয়সের সিনথি আক্তার মনিকা নামে এক শিশু কন্যা রয়েছে। মাস খানেক আগে মিষ্টি আক্তারের সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর থেকে মিষ্টি আক্তার তার শিশু কন্যাকে নিয়ে বাবার বাড়ি থাকছে। গত ২০ এপ্রিল শুক্রবার শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে গলাচিপা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটির সঙ্গে হাসপাতালে তার মা ও নানী অবস্থান করছিলেন। গত ২৩ এপ্রিল সোমবার সকালে মিষ্টি আক্তার বাড়ি থেকে শিশুকন্যার খাবার আনার কথা বলে মেয়েকে নানীর কাছে রেখে হাসপাতাল থেকে বের হয়। কিন্তু দিন গড়িয়ে রাত হলেও মিষ্টি আক্তার ফিরে আসেনি। পরেরদিন জোসনা বেগম তার মেয়ের নিখোঁজের বিষয়টি থানায় জানিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন। জোসনা বেগম মৌখিক অভিযোগ করেন, গলাচিপা শহরের মটর সাইকেল ড্রাইভার তারিক আজিজ সুমন (৩০) তার মেয়েকে অপহরণ করেছে। সুমন হাসপাতালে তাদের দেখাশোনা করতো। মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর সুমন কয়েকবার তাদের বাড়িতে গিয়ে মিষ্টি আক্তারকে না খোঁজার জন্য হুমকি দিয়েছে। অর্থের প্রলোভনও দিয়েছে। এ অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার দুপুরে পুলিশ তারিক আজিজ সুমনকে থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
আটকের সত্যতা জানিয়ে অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহিদ হোসেন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ অপহরণে সুমনের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমান পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে অপহরণ মামলা রেকর্ড করা হবে এবং সুমনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুলিশের হাতে আটক অবস্থায় তারিক আজিজ সুমন অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মানবিক কারণে তিনি হাসপাতালে ওই পরিবারকে সহায়তা করেছেন। এরবেশি কিছু জানেন না।
এদিকে জোসনা বেগম অভিযোগ করেন, মেয়ে মিষ্টি আক্তারকে ফিরে পাওয়ার আশায় নিখোঁজের পর থেকে থানা পুলিশসহ অনেকের কাছে ধর্না দিয়েছেন। কিন্তু মেয়েকে ফিরে পাননি। তার ধারণা, মেয়েকে অপহরণ করে অন্যত্র পাচার কিংবা খুন করা হয়ে থাকতে পারে। মেয়েকে ফিরে পাওয়া না গেলে শিশু নাতনিকে বাঁচিয়ে রাখা তার জন্য দায় হয়ে উঠতে পারে বলেও অভিযোগ করেন।