3:34 pm , December 1, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল-৪ আসনের মেহেন্দিগঞ্জে দলীয় প্রতিপক্ষের হাতে আওয়ামী লীগ নিধনের অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক দিনে স্থানীয় এমপি অনুসারী উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক শাকিল ব্যাপারী ও তার বাহিনীর হামলায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে আশংকাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ছাত্রলীগ সভাপতির সহ দুটি দোকান ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ সম্পাদক গ্রুপের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগ সম্পাদকের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উপর অব্যাহত হামলার প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে বলে আশংকা করেছেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নিরব ব্যাপারী। তিনি এ বিষয়ে দলের হাইকমান্ডের দৃস্টি আকর্ষণ করেন।
সব শেষ গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর মেহেন্দিগঞ্জে পৌর শহরের মুক্তিযোদ্ধা মাঠে ছাত্রলীগ কর্মী জিদান ব্যাপারী এবং প্রায় একই সময়ে পৌর শহরের হাজী টাওয়ার এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী মো. শান্তকে কুপিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতা শাকিল অনুসারী সিহাব ব্যাপারী সহ অন্যান্যরা। ওই রাতেই হামলায় আহতদের বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে জিদানকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার মেহেন্দিগঞ্জ পৌর শহরের উত্তর বাজার এলাকায় উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি মাসুদ হাওলাদার ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক পৌর কাউন্সিলর এইচএম নোমানকে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ করা হয়েছে ছাত্রলীগ ক্যাডার শাকিল ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এর আগে গত রবিবার উপজেলার বদরপুর এলাকায় পৌর ছাত্রলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি রাজু খানকে কুপিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ ক্যাডার শাকিলের সহযোগীরা। ওই সময় ওই বদরপুর বাজারে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সিহাব ব্যপারীর এবং তার চাচাতো ভাই দুলাল ব্যাপারীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর-লুটপাট করার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের শাকিল গ্রুপের বিরুদ্ধে। গত ৬ নভেম্বর পাতারহাট বন্দরে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নিরব ব্যাপারীর ভাগ্নে মো. আসিফকে কুপিয়ে আহত করে শাকিল বাহিনীর ক্যাডাররা। হামলায় আহতরা জানান, মেহেন্দিগঞ্জে সাম্প্রতিক সময়ে সবগুলো হামলা হয়েছে পুলিশের সামনে এবং থানার ওসির প্রত্যক্ষ মদদে। ওসি শাহিন খান এমপি’র অনুসারী হওয়ায় তিনি কোন হামলার বিষয়ে তেমন কোন পদক্ষেপ নেননি বলে তাদের অভিযোগ।
ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, গত ৬ নভেম্বর রাজু খানকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও ওসি মামলা নেয়নি। এই ওসির কাছে ন্যায় বিচার পাওয়া যাবেনা বলে ধরে নিয়েছেন তারা। এ কারনে শাকিলের সাম্প্রতিক হামলায় আহতদের কেউই এখন আর আইনের সহায়তা চান না। এ কারনে তারা থানায় কোন অভিযোগও করেননি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, হামলাকারীদের নেতা শাকিল বেপারী উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক এবং তার বাবা খোরশেদ আলম ভুলু উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। শাকিল ও তার বাবা ভুলু বিদায়ী এমপি এবং ওই আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী পংকজ নাথের ঘনিস্টজন হিসেবে এলাকায় পরিচিত। মেহেন্দিগঞ্জে আওয়ামী লীগ দির্ঘদিন ধরে দ্বিধা বিভক্ত। আগামী নির্বাচনে জিততে গত ২৭ নভেম্বর ওই আসনের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপকে বরিশাল ডেকে দ্বন্ধ নিরসন করে দেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। এরপরও কেন হামলা ?
এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নিরব বেপারী বলেন, পুরনো রেষারেশীর জের ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং এমপি পংকজ দেবনাথের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের জন্যই বাপ-বেটা (ভুলু ও শাকিল) মেহেন্দিগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। ছেলে সন্ত্রাস করে, দলীয় নেতাকর্মীদের মারধর করে আর তার বাবা ভুলু প্রশাসন সামাল দেয়। এভাবে চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারন ভোটারদের মাঝে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশংকা করেন তিনি। তবে কোন ধরনের হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক শাকিল বেপারী বলেন, ওদের মধ্যে আন্তঃকোন্দল রয়েছে। এর জের ধরে ওরা নিজেরা সংঘাত করে দলীয় প্রতিপক্ষের উপর দায় চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেস্টা করছে বলে দাবী করেন তিনি। মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি শাহিন খান বলেন, থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও মামলা না নেওয়া কিংবা কোন পক্ষের প্রতি অনুকম্পা দেওয়ার অভিযোগও সঠিক নয়। শুক্রবার রাতে একজনকে কুপিয়ে আহত করার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পায়নি। লিখিত অবিযোগ পেলে এসব ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন ওসি।