3:06 pm , November 30, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ২১টি সংসদীয় আসনে ১৮৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করার পরে ভোটের পালে কিছুটা হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। তবে দক্ষিনাঞ্চলে দুই প্রধান জোটের পক্ষেই অনেক আসনে একাধীক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিলে দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মী ছাড়া আমজনতার মধ্যেও অনেক বিভ্রান্তি কাজ করছে। পটুয়াখালীÑ১ আসনে মহাজোটের মূল শরিক আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহজাহান মিয়ার আসনে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাপার মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এ আসনে বিএনপি প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী ছাড়াও তার স্ত্রী বিকল্প প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। বরগুনাÑ১ আসনেও ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর বিরুদ্ধে দলের অপর প্রার্থী জাহাঙ্গীর মনোনয়নপত্র দাখিল করে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন।
এবারো দক্ষিণাঞ্চলে সরকারী ও বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন হেভীওয়েট প্রার্থীও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। যাদের মধ্যে আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, আসম ফিরোজ ছাড়াও বিরোধী জোটের আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সুপ্রীম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বর্তমান সভাপতি এ্যাভোকেট জয়নুল আবেদিন, সাবেক সম্পাদক শম রেজাউল হক এবং সেলিমা রহমান, জহিরউদ্দিন স্বপন, আন্দালিব রহমান পার্থ, শাহজাহান ওমর ও বিএইচ হারুন রয়েছেন।
তবে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে বরিশালÑ২ আসনে মনোনয়ন দেয়া হলেও তিনি তা দাখিল করেন নি। বিষয়টি যুব দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের হতাশ করার পাশাপাশি সাধারন মানুষকেও কিছুটা হতবাক করেছে। ঘনিষ্ঠজনদের মতে, আলালের প্রথম দাবী ছিল বরিশাল বিভাগীয় সদর আসন। দলের বিদেশী নীতি নির্ধারক মহলে এলক্ষে ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও ঢাকার নেতৃবৃন্দ তা মানতে নারাজ ছিল। পরে তাকে পুরনো আসনের অংশ নিয়ে গঠিত বরিশালÑ৩ আসনে মনোনয়ন দেয়া হলেও সেখানে আরো দুজন বিকল্প প্রার্থীর নামও ঘোষনা করা হয়। ফলে পরিক্ষিত এ ত্যাগী নেতা নির্বাচন থেকে নিজেকে বিরত রাখেন।
অপরদিকে বিএনপি সহ ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি সংসদীয় আসনেই একাধীক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করায় দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারন মানুষের মধ্যেও ইতোমধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তি কাজ করছে। এমনকি কতজন বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী এখন তা বোঝার উপায় নেই। শুধুমাত্র বিভাগীয় সদর বরিশালÑ৫ আসনে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান সারোয়ার বিএনপি সহ ঐক্য ফ্রন্টের একক প্রার্থী হয়েছেন। যদিও মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের পরেই দল ও ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে প্রার্থী চুড়ান্ত করে অবশিষ্টদের প্রত্যাহার করতে বলা হবে বলে জানান হয়েছে। তবে এর পরেও মাঠ পর্যায়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার সাথে বিভ্রান্তিও কাজ করছে। মহাজোটেও এধরনের বিভ্রান্তিÍ কাজ করছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে শেষ পর্যন্ত সরকারী ও বিরোধী জোটের অনেকই হয়ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার নাও করতে পারেন।
এখন পর্যন্ত বরিশাল জেলার ৬টি আসনে ৫১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া পটুয়াখালীর ৪টি আসনে ৩৭ জন, ভোলার ৪টি আসনে ২৩ জন, পিরোজপুরের ৩টি আসনে ৩২ জন, বরগুনার ২টি আসনে ১৯ জন ও ঝালকাঠীর দুটি আসনে ২১জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বেশ কিছু মহিলা প্রার্থীও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এদের মধ্যে ভোলাÑ১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তোফায়েল আহমদের বিরুদ্ধে বিজেপি’র মরহুম চেয়ারম্যান নাজিউর রহমান মঞ্জুর স্ত্রী ও আন্দালিভ রহমান পার্থ’র মা রেবা রহমান, ঝালকাঠীÑ২ আসনে আমীর হোসেন আমুর বিরুদ্ধে সাবেক এমপি ইলেন ভূট্টো ও জেবা আমীন খান এবং পটুয়াখালীÑ১ আসনে সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর স্ত্রী সুরাইয়া অক্তার চৌধুরী সহ বেশ কয়েকজন মহিলা প্রার্থীও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
২০০১-এর ৮ম সংসদ নির্বাচনে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ২৩টি আসনের নির্বাচনে বিএনপি ১৮টি, আওয়ামী লীগ ২টি এবং জামাত ইসলামী, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ১টি করে অসন লাভ করে। ঐ নির্বাচনে বিএনপি সহ ৪দলীয় জোটের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল প্রায় ৪৫%। অপরদিকে আওয়ামী লীগ সহ মহাজোটের ভোট ছিল ৪০%-এর কিছুটা কম। ঐ নির্বাচনে বরিশাল বিভাগেই সবর্ নিম্নতম সংখ্যক ৬৫.৮৩% ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে।
২০০৮-এর ২৯ডিসেম্বর ১/১১ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ৯ম সংসদ নির্বাচনে বরিশাল বিভাগে আসন সংখ্যা দুটি হ্রাস করে ২১টিতে নির্ধারন করে নির্বাচন কমিশন। ভোলা ও ঝালকাঠী বাদে অন্য সবগুলো জেলার সংসদীয় আসন পূণঃবিন্যাস করা হয়। যা ছিল ঐ নির্বাচন কমিশনেরই নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক। এ নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগ ১৬টি এবং বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও বিজেপি ২টি করে আসন লাভ করে। ২০০৮-এর ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল প্রায় ৪৮%। আর বিএনপির ৩২%। ৯ম সংসদ নির্বাচনে বরিশাল বিভাগে ভোট গ্রহনের হার সারা দেশের সর্বনিম্ন ৮৪.১৭% হলেও তা ছিল বিভাগে এযাবতকালের সর্বোচ্চ। ২০০৮-এর নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলে মোট ভোটার ছিলেন ৪৬ লাখ ৪৯ হাজার ৫১৬ জন। এ হিসেবে গত ১০ বছর বরিশাল বিভাগে ভোটার বেড়েছে প্রায় ১৪ লাখ ৭১ হাজার। আওয়ামী লীগ সহ মহাজোটের লক্ষ্য নতুন ভোটরদের তাদের পক্ষে টানার।
এবার দক্ষিণাঞ্চলে প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। দক্ষিণাঞ্চলের ৬১লাখ ২১হাজার ১১০জন ভোটার একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগে উন্মুখ হয়ে আছেন। তবে তা কতটা বাস্তব রূপ লাভ করবে তা বলার মত কোন পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।