6:37 pm , April 26, 2018

রুবেল খান ॥ বর্তমান ভিসি’র নির্দেশে এক রাতের ব্যবধানে পাল্টে গেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) দুস্থ শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে নির্মিত প্রথম ভিসি’র ট্রাস্টি ভবনের নাম। প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর ট্রাস্ট ভবন নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরন করা হয়েছে “বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আবাসিক ভবন”। তাছাড়া নাম পাল্টে ফেলার সাথে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে ওই ভবনে থাকা সাবেক ভিসি’র পাথরের তৈরী ম্যুরাল। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তারা প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদের সাহস না পেলেও ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে। প্রতিহিংসায় ভবনের নাম পরিবর্তন এবং ম্যূরাল ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। অবশ্য কর্তৃপক্ষের দাবী করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে নির্মিত ওই ভবনটির নাম করন সিন্ডিকেট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও প্রথম উপাচার্য ড. হারুনর রশিদ খান এর উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি তৃতীয় তলা ভবন নির্মান করা হয়। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত গরিব ও দুস্থ শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার খরচ বহনের জন্য ট্রাস্টি সম্পত্তি হিসেবে দান করা হয়। “প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর ট্রাস্ট ভবন” নামে নামকরনকৃত ওই ভবন ২০১৪ সালে সিন্ডিকেট সদস্যরা উদ্বোধন করেন। এর পর থেকেই বছরে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা ভাড়া বাবদ আদায় হয় ট্রাস্টি ভবন থেকে। যার পুরোটাই দুস্থ শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।
শিক্ষক এবং কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, সাবেক ভিসি ড. হারুনর রশিদ খান এর বিদায় এবং নতুন ভিসি হিসেবে অধ্যাপক ড. এসএম ইমামুল হক এর যোগদানের পর থেকেই ওই ট্রাস্টি ভবনের নাম ও মালিকানা পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক চেষ্টা শুরু করেন। দফায় দফায় তদন্ত কমিটিও করা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যদের একটি অংশ বর্তমান ভিসি’র সেই চেষ্টার বিরোধীতা করেন। সর্বশেষ সম্প্রতি সময়ে ঢাকার কলাবাগানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজো অফিসে সিন্ডিকেটের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় বর্তমান ভিসি’র ঘনিষ্ট সিন্ডিকেট সদস্যরা থাকলেও বরিশালের কোন সিন্ডিকেট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন না। সেই সুযোগে ট্রাস্টি ভবনের নাম পরিবর্তন করে শিক্ষক আবাসিক ভবন নামে নামকরনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে বুধবার রাতভর শ্রমিকদের ব্যবহার করে ট্রাস্টি ভবনের নাম ফলক ও পাথর খোদাই করে নির্মিত সাবেক ভিসি’র ম্যূরালটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নজরে আসে। মুহুর্তের মধ্যে চাপা ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। এমনকি শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা-সমালচনার ঝড়।
ফেসবুকে দেখাগেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাস্টি ভবনের নাম পরিবর্তন এবং সেটিকে শিক্ষক ভবনের রুপান্তরিত করায় শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা যে যার মত করে মতামত প্রকাশ করেছেন। কেউ লিখেছেন বর্তমান ভিসি প্রতিহিংসায় ভবনের নাম পরিবর্তন এবং সাবেক ভিসি’র ম্যূরাল ভেঙ্গে ফেলেছে। ভিসিকে উদ্দেশ্য করে কেউ লিখেছেন “পারলে নিজে ভালোকিছু করে দেখান, তার পরে এমন কাজ করেন”। অপর একজন লিখেছেন এর প্রতিবাদ করা যাবে না, প্রতিবাদ করলে বহিস্কার হতে হবে। অপর জন লিখেছেন আমরা শেয়ার করে প্রতিবাদ করতে পারি। এ ধরনের আরো বহু কমেন্ট্স করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসিকে উদ্দেশ্য করে।
স্থানীয় বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম ও কামরুল চৌধুরী বলেন, বর্তমান ভিসি যে কাজটি করেছেন। ঠিক করেননি। তিনি সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গনে একটি অপ রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করলেন।
এদিকে ট্রাস্টি ভবনের নাম পরিবর্তন এবং সাবেক ভিসি’র ম্যূরাল ভেঙ্গে ফেলা প্রসঙ্গে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, বর্তমান ভিসি’র ছাত্র ছিলেন সাবেক ভিসি। কিন্তু ছাত্র হলেও নিজের দক্ষতা এবং প্রচেষ্টায় সার্বিক দিক থেকে এগিয়ে যান সাবেক ভিসি ড. হারুনর রশিদ খান। এটাই বর্তমান ভিসি ড. এসএম ইমামুল হক এর প্রতিহিংসার কারন। সেই প্রতিহিংসা থেকেই সাবেক ভিসি’র নামে নির্মিত ট্রাস্টি ভবনের নাম পরিবর্তন ও মূর্যাল ভেঙ্গে নতুন নামকরন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিসের চলতি দায়িত্বে উপ-পরিচালক ফয়সল মাহমুদ রুমি বলেন, স্ট্রাটি ভবনের বিষয়টি নিয়ে সিন্ডেকেট কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে প্রমানিত হয় যে প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর ট্রাস্ট” নামক ভবনটি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে। তাই এখন থেকে ওই ভবনটি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ। একারনেই সিন্ডিকেট এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূর্বের নাম পরিবর্তন করে ওই ভবনটির নাম “বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আবাসিক ভবন” নামকরন করা হয়েছে। এখন থেকে ওই ভবনটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা থাকবেন বলেও জানিয়েছেন ফয়সল মাহমুদ রুমি।