2:49 pm , November 24, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ৬টি আসনে ১৪ দল ও মহাজোটের প্রার্থী নির্ধারন নিয়ে গোলক ধাঁধার সৃষ্টি হয়েছে। বরিশাল-১ আসনে মহাজোটের প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও বাকি ৫টি নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। বিশেষ করে ৩টি আসনে মহাজোট দৃষ্টি দেয়ায় চিন্তিত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। জাতীয় পার্টি ওই তিনটি আসন দাবী করে বসে থাকলেও ছাড় দিতে নারাজ ১৪ দলের শরীক ওয়ার্কার্স পার্টি। জানাগেছে, বরিশালের ১০টি উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় ৬টি আসনের ২টি দীর্ঘ দিন ধরেই মহাজোট ও শরীকদের দখলে। এর মধ্যে একটি বরিশালের সাবেক জেলা বাকেরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৬ ও অপরটি বাবুগঞ্জ-মুলাদী উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৩ আসন। এর মধ্যে বরিশাল-৬ আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে। এ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রতœা আমিন পুনরায় মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছে। বরিশাল-৩ আসনটিতেও মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টি জেলার সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এমপি শেখ মো. টিপু সুলতান। এর পূর্বে আসনটির সাবেক এমপি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপুও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিবেন। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালের দুটি আসন নিজ দলের মধ্যে রাখতে শুরু থেকেই মরিয়া আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। আর তাই দলের হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে বছরের পর বছর এলাকায় কাজ করেন তারা। এমনকি দুটি আসনে ২৯ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমা দেন। মনোনয়ন পেতে লবিং-তদবিরও চালান তারা। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে দুটি আসন পুনরায় শরীক ও মহাজোটকে ছেড়ে দেয়ার খবরে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন নেতা-কর্মীরা। কেননা শুধু পূর্বের দুই আসন নয়, বরং মহাজোটের সাথে আসন সমঝোতার জন্য আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রনে থাকা বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনটিও ছেড়ে দেয়ার গুঞ্জন শুরু হয়েছে। জেলার ৬টি আসনের তিনটিতে প্রার্থীও চূড়ান্ত করেছে হুসেইন মো. এরশাদের জাতীয় পার্টি। এরা হলেন- বরিশাল-২ আসনে চিত্র নায়ক সোহেল রানা, বরিশাল-৩ আসনে সাবেক সাংসদ গোলাম কিবরিয়া টিপু ও বাকেরগঞ্জ আসনটিতে বর্তমান এমপি রতœা আমিন। জাতীয় পার্টি’র বাবুগঞ্জ উপজেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম হোসেন বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর আমরা বরিশাল-৩ আসনে ফসল বুনেছি। এখন সময় এসেছে ফসল ঘরে তোলার। আমরা আশাবাদী এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপুকে মনোনয়ন দেয়া হবে জানিয়ে ওই নেতা বলেন, অনেক আগেই মনোনয়নের বিষয়টি চুড়ান্ত হতো। একটু ঝামেলার জন্য সিদ্ধান্ত আটকে আছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এর বাড়ি বাবুগঞ্জে। এ কারনে তিনি আসনটি ছাড়তে চাচ্ছে না। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, গত নির্বাচনে মহাজোট থেকে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিলো। তার পরেও ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতান হাতুড়ী প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছে। তখন আমি তাকে ছাড় দিয়েছিলাম। তাছাড়া ওই নির্বাচনে তারা কিভাবে জয়লাভ করেছে সেটা সবাই জানে। নির্বাচিত হয়ে গত পাঁচ বছরে সে উন্নয়ন না অনিয়ম করেছে সেটা সবাই জানে। তিনি বলেন, মহাজোটের মনোনয়নের বিষয়টি আমি নিশ্চিত। হয়তো বোববার বা সোমবারের মধ্যে মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর মহাজোট থেকে আমাকে মনোনয়ন না দিলেও আমি লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। আসনে ১৪ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান এমপি এ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতান বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুত। আমাকে ১৪ দলের প্রার্থী করা হয়েছে বলে লোকমুখে শুনছি। আবার এও শুনছি অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি। তবে মনোনয়ন তালিকা প্রকাশের আগে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয় জানিয়ে শেখ টিপু সুলতান বলেন, যেহেতু আমি একটি দল করি। মনোনয়ন না পেলে পার্টি’র কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত দিবে সেভাবেই পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। বরিশাল-২ আসনের বর্তমান সাংসদ ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, এখানে মহাজোটের বিষয় রয়েছে। কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে সেটা নেত্রী বুঝবেন। তবে মহাজোটের বরিশাল-২ আসন দাবীর বিষয়টি নিয়ে এই মুহুর্তে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। বরিশাল-৬ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল হক মঞ্জু বলেন, গত ১০ বছর আওয়ামী লীগের ক্ষমতার আমলে জননেত্রী শেখ হাসিনার কল্যানে দেশব্যাপী উন্নয়নের জোয়ার বইছে। অথচ গত ১০টি বছরে বরিশাল-৬ আসনে কোন উন্নয়ন হয়নি। কারন এখানে আওয়ামী লীগের এমপি নেই। এজন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনও সু-সংগঠিত নয়। দলীয় এমপি থাকলে তার নেতৃত্ব এবং দিক নির্দেশনায় দল সু-সংগঠিত হতো। তাই প্রচন্ড রকম ক্ষুব্ধ তৃনমুল নেতা-কর্মীরা দাবী তুলেছেন আসনটি নিয়ে। আওয়ামী লীগ নেত্রীর কাছে সবার প্রত্যাশা তিনি এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী দিবেন। সর্বপরি নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দিবেন তাই আমরা মেনে নিতে প্রস্তুত বলে জানান এই নেতা।