2:45 pm , November 24, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কুয়েত উন্নয়ন তহবিল এবং ওপেক-এর সহায়তায় ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাংগা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের ১৮৯ কিলোমিটারে লেবুখালী এলাকায় পায়রা নদীর ওপর দেশের অন্যতম বৃহৎ সেতু নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। পায়রা সেতুটি নির্মিত হলে রাজধানী সহ সন্নিহিত এলাকা ছাড়াও বরিশাল থেকে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরের সড়ক যোগাযোগ নির্বিঘœ ও সহজতর হবে। সেতুটি নির্মাণে কুয়েত উন্নয়ন তহবিল এবং ওপেক ফান্ড ছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৩৯৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০ ফুট উচ্চতার চার লেনের এ সেতুটি নির্মাণে প্রকল্প সাহায্যের পরিমাণ প্রায় ৮৯৫ কোটি টাকা। সেতুটির জন্য প্রায় ৬শ’ মিটার সংযোগ সড়ক সহ টোল প্লাজাও নির্মিত হচ্ছে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে পায়রা সেতুর নির্মান কাজ সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। তবে নদী শাসনের কাজ শেষ করতে আরো কয়েকমাস সময় লাগতে পারে। পাশাপাশি পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসন জমি হুকুম দখল প্রক্রিয়া বিলম্বিত করায় সংযোগ সড়ক নির্মান কাজও কিছুটা পিছিয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে। চীনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মূল সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আহমদ শরিফ সজিব।
ঢাকা-ফরিদপুর-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা/পায়রা বন্দর মহাসড়কের শিকারপুর ও দোয়ারিকা ছাড়াও দপদপিয়াতে ৩টি সেতু নির্মাণে ইতোপূর্বে আর্থিক সহায়তা প্রদানের পরে লেবুখালীতে পায়রা সেতু নির্মানেও সম্মতি জ্ঞাপনের করে কুয়েত সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় কুয়েত উন্নয়ন তহবিল-কেএফএআইডি’র সাথে ১৪ মিলিয়ন দিনারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১২ সালের মার্চে। তবে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির কারণে পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ৪ মে ১৫ মিলিয়ন দিনারের দ্বিতীয় ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় কুয়েতের সাথে। এছাড়া ওপেক-এর কাছ থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে গতবছর ৬ এপ্রিল একটি স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। মূল প্রকল্প সংক্রান্ত ডিপিপি একনেক-এর প্রথম অনুমোদন লাভ করে ২০১২-এর ৮ মে। কিন্তু ২০০৬ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রাথমিক উদ্যোগকালীন সময়ে খসড়া প্রকল্প ব্যয় ৪৮০ কোটি ধরা হলেও ২০১৬ সালে দরপত্র গ্রহণকালে তা প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রকল্পটির সংশোধিত ব্যয় ১ হাজার ২৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকায় উন্নীত হওয়ায় গত বছর ২০ জুন ১ম সংশোধিত ডিপিপি পুনরায় একনেক-এর অনুমোদন লাভ করে।
দরপ্রস্তাব গ্রহণ ও মূল্যায়ন শেষে সর্বনিম্ন দরদাতা চীনের ‘লংজিয়ান রোড এন্ড ব্রীজ কোম্পানী লিমিটেড’এর সাথে ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই সড়ক অধিদপ্তরের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তী ৩৩ মাসের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ আজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও গত বছর প্রবল বর্ষণ সহ নানা জটিলতায় প্রকল্পটির কাজ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। তবে এরপরেও সংশোধিত সময়কালের মধ্যে সেতুটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৪৯% বলা হলেও বাস্তব অগ্রগতির পরিমাণ প্রায় ৩৫% বলে জানা গেছে।
নদীর মূল অংশে ‘এক্সট্রাডোজড টাইপ’-এর সেতুটির সর্বোচ্চ স্প্যানটির দৈর্ঘ ২শ মিটার। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দীর্ঘ পায়রা সেতুটির মূল অংশ ৬৩০ মিটার হলেও ভায়াডাক্ট ৮৪০ মিটার। যা ‘প্রি-স্ট্রেসড কংক্রীট গার্ডার’ পদ্ধতিতে নির্মিত হচ্ছে। ১৯.৭৬ মিটার প্রস্থ চার লেনের এ সেতুটি নিরাপত্তায় পায়রা নদীর দুই তীরে প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী শাসন কাজ করা হবে। এ লক্ষ্যে পায়রা নদীর ‘হাইড্রোলজিক্যাল ও মারফোলজিক্যাল স্ট্যাডি’ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে পায়রা সেতুর বরিশাল ও পটুয়াখালী প্রান্তের ভায়াডাক্ট সেতুর সমস্ত পাইল, পিয়ার, পিয়ারক্যাপ এবং এ্যাবাটমেন্ট-এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভায়াডাক্ট সেতুর উপরি কাঠামোর কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বরিশাল প্রান্তের গার্ডার নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। মূল সেতুর ৫২টি পাইলের মধ্যে ৩২টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মূল সেতুর ৫টি পিয়ারের ৩টির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বরিশাল প্রান্তে বিকল্প সড়ক নির্মান সহ চলমান ফেরিঘাট স্থানান্তরও সম্পন্ন হয়েছে। পটুয়াখালী প্রান্তের ঘাট স্থানন্তর প্রক্রিয়া চলছে।
সেতুটি নির্মানে বাংলাদেশ, ভারত, কুয়েত এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ৪টি প্রতিষ্ঠান পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছে।
লেবুখালীর কাছে পায়রা নদীর ওপর এ সেতুটি নির্মিত হলে তা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও পায়রা সমুদ্র বন্দরের সাথে সারা দেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করবে। এর ফলে দেশের অন্য দুটি সমুদ্র বন্দর ছাড়াও বেনাপোল ও ভোমড়া স্থল বন্দরের সাথে পায়রা সমুদ্র বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে। এমনকি সড়ক পথে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সারাদেশের সাথে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সড়ক পরিবহন সহজতর করবে। রাজধানী ও সন্নিহীত এলাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে কুয়াকাটার দুরত্ব কক্সবাজারের অর্ধেকে নেমে আসবে। একদল চীনা প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে বিপুল সংখ্যক প্রকৌশলী সহ নির্মান শ্রমিক দিনরাত লেবুখালীর পায়রা সেতু এলাকায় দিনরাত কাজ করছে। ২০২০-এর জুনের মধ্যে নির্মান কাজ শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পায়রার সেতু খুলে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আহমদ শরিফ সজিব।