6:32 pm , April 26, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল এলএসডি থেকে পাচার কালে র্যাবের হাতে ২০ টন চাল সহ আটক হওয়া দাড়োয়ান শাহাবুদ্দিন সিকদার ওরফে কালা কালু’র বদলী বানিজ্যের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে খাদ্য বিভাগের সাধারণ কর্মচারীরা। বিভিন্ন মন্ত্রি, এমপি এবং পদস্থ কর্মকর্তাদের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে কর্মচারীদের বদলির সুপারিশপত্র তৈরীর অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে জাল জালিয়াতি করে ধরাপড়া শাহাবুদ্দিনের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বদলি নামের হয়রানির শিকার হয়েছে অসংখ্য কর্মচারী। ভুক্তোভোগী কর্মচারীদের দেয়া পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ পত্রে এমনই অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, শাহাবুদ্দিন বিগত বিএনপি’র আমলে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন এর লোক ছিলেন। ভোলায় ওই বিএনপি নেতার ব্যবসার অংশ বিশেষ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলো সে। ২০১২ সালে খাদ্য বিভাগে নিরাপত্তা প্রহরী পদে যোগদান করেন শাহাবুদ্দিন সিকদার। পটুয়াখালী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক এর কার্যালয়ে নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব পালন কালে বদলী বানিজ্যে মেতে ওঠে সে। ওই জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহাবুবুর রহমান’র স্বাক্ষর স্ক্যান করে বদলী বানিজ্য করতে গিয়ে ধরা পড়ে শাহাবুদ্দিন। এ ঘটনার পরে শাস্তি সরুপ তাকে বদলি করা হয় বরিশাল সদর এলএসডিতে। তবে থেকে থাকেনি তার বদলী বানিজ্য। বরিশালে এসেও শুরু হয় তার অনিয়ম এবং দুর্নীতি।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, শাহাবুদ্দিন একজন নিরাপত্তা প্রহরী হয়েও অঢেল সম্পদ এর অদৃশ্য ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন। কোন কর্মচারী তার কথা না শুনলেই তাকে হতে হয় বদলী নামের হয়রানির শিকার। মন্ত্রি, এমপি এবং পদস্থ কর্মকর্তাদের সিল, স্বাক্ষর জাল করে ওই কর্মচারীর অজান্তে বদলীর সুপারিশ জমা দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। সেই সাথে লবিং-তদবির চালিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে করা হচ্ছে এক স্থান হতে অন্য স্থানে বদলী। আর বদলী হওয়া ওই কর্মচারীর স্থলে নিয়ে আসছে পছন্দের কাউকে। বিনিময়ে তার কাছ থেকে ভোগ করছে অবৈধ আর্থিক সুবিধা।
কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন, শাহাবুদ্দিনের হয়রানির শিকার হয়েছে বহু কর্মচারী। যার মধ্যে নিরাপত্তা প্রহরী খায়রুল ইসলামকে মন্ত্রী ও এমপি’র ভুয়া সুপারিশ দেখিয়ে শিকারপুর খাদ্য গুদাম থেকে বাবুগঞ্জ এলএসডিতে বদলী করা হয়। তার স্থলে বদলী করে আনা হয় নলছিটি খাদ্য গুদামের মো. আব্দুল হাইকে। সেলিম হাওলাদার নামের অপর এক নিরাপত্তা প্রহরীকে নলছিটি থেকে বদলী করে বরিশাল সিএসডিতে নিয়ে আসা হয়। পটুয়াখালী থেকে মনির হোসেনকে বদলী করে নিয়ে আসা হয় বরিশালে। এছাড়া বরিশাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কর্মচারী জাহানারা বেগমকে বদলী করে পাঠানো হয় সদর এলএসডিতে। যার প্রতিটি বদলীর পেছনেই শাহাবুদ্দিন সিকদারের বানিজ্য রয়েছে বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরো অভিযোগ করা হয়েছে, সাহাবুদ্দিনের কাছে মন্ত্রি, এমপি এবং পদস্থ কর্মকর্তাদের সিল, সই এবং সুপারিশ কোন ব্যপার নয়। দিনের চেষ্টায় রহস্যজনক ভাবে তৈরী করছেন ভুয়া সুপারিশ। এমনিক চাওয়া মাত্রই খাদ্য মন্ত্রির সুপারিশও বানিয়ে ফেলছেন শাহাবুদ্দিন সিকদার ওরফে কালা কালু। সে তার স্ত্রীকে সরকারি চাকুরী দেয়ার জন্য একটি আবেদন জমা দিয়েছিলেন। যেখানে ৮ জন মন্ত্রী ৫ জন এমপি’র সুপারিশ ছিলো। কিন্তু তার পরেও স্ত্রীর চাকুরী দিতে পারেনি শাহাবুদ্দিন। অভিযোগ রয়েছে যে ১৩ জন মন্ত্রী, এমপি’র সিল ও সই সহ সুপারিশ ছিলো তার পুরোটাই ভুয়া।
এদিকে অদৃশ্য ক্ষমতার অধিকারী শাহাবুদ্দিন সিকদারের ক্ষমতার কাছে অসহায় খাদ্য বিভাগও। যে কারনে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলারও সুযোগ পাচ্ছে না। এমনই একটি ঘটনার উদাহরন তুলে ধরা হয়েছে লিখিত অভিযোগে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ৮ মে র্যাবের হাতে ২০ টন চাল সহ আটক হয় শাহাবুদ্দিন সহ ৫ জন আটক হয়। ওই মামলায় তারা ৩১ দিন হাজত বাস করেছে। এজন্য কিছুদিন সাময়িক বরখাস্তও ছিলেন তারা। চাল চুরির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি বরিশাল সদর এলএসডি’র সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলীর সুপারিশ করেন। সে অনুযায়ী অন্যান্যরা জেলার বাইরে বদলী হলেও বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে বদলি বানিজ্যের হোতা শাহাবুদ্দিন সিকদার। এতো কিছুর পরেও শাহবুদ্দিনের বহাল তবিয়তে টিকে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বেশ আলোচনার ঝড় তুলেছে। পাশাপাশি প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে যে একজন দাড়োয়ানের এতো ক্ষমতার উৎস কি ?।
এ প্রসঙ্গে সাহাবুদ্দিন সিকদারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে সে জন্য খাদ্য বিভাগের নিরাপত্তা প্রহরী গিয়াস উদ্দিনকে দায়ি করে তিনি বলেন, গিয়াস উদ্দিনের একাধিক স্ত্রী রয়েছে। তার একজন স্ত্রী’র অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গিয়াস উদ্দিনকে বদলি করা হয়েছে। আর এজন্য আমাকে দায়ি করা হচ্ছে। চাল চুরির যে মামলাটি হয়েছে তা বিচারাধীন রয়েছে। আমি ওই মামলায় জামিনে আছি। তাছাড়া ওই ঘটনায় আমাকে বরিশাল সদর এলএসডি থেকে সিএসডি গোডাউনে বদলী করা হয়েছে। আমি বর্তমানে সেখানেই কর্মরত আছি।